ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানুষ পারাপার করলে নৌযান মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২২ মে ২০২০

মানুষ পারাপার করলে নৌযান মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ এবার সরকারী নির্দেশনা অমান্য করার দায়ে মানুষ পারাপারকারী নৌযান মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও তাদের গ্রেফতার এবং মামলার আলামত হিসেবে নৌযান জব্দ করার নির্দেশনা জারি করেছে নৌ পুলিশ। ইতোপূর্বে নৌ পুলিশ মানুষ পারাপারের দায়ে কয়েকটি ট্রলার ডুবিয়ে দেয়। ইতোমধ্যেই সমুদ্রে জেলেদের মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে নৌ পুলিশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবং ভাইরাসটির হাত থেকে জীবন বাঁচাতে এমন কঠোর হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছে নৌ পুলিশ। নৌ পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল গণপরিবহন। দিনকে দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে মানুষ শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখেই নানাভাবে স্থল পথ দিয়ে এসে নদী পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছে। এতে করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে নদী পথে কেউ যাতে পার হতে না পারে, এজন্য নৌ পুলিশের সদর দফতর থেকে কড়া নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সেই নির্দেশনায় কোনভাবেই যাতে কেউ নদী পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি যেতে না পারে, এজন্য সকল নৌযান চলাচল ও ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও হেঁটে শিমুলিয়া ঘাটে আসে বহু মানুষ। তারা গাদাগাদি করে ট্রলারে করে নদী পার হয়ে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। অনেক যাত্রীকে পুলিশ বুঝিয়ে যেখান থেকে এসেছে, সেখানে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। আবার অনেকেই লুকিয়ে ট্রলার ভাড়া করে নদী পার হয়ে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। বেশি টাকার আশায় এসব কাজ করছেন ট্রলার মালিকরা। এমন অবস্থার মধ্যে বুধবার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ রুটের সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে যাত্রী পারাপারের সময় সাতটি ট্রলারকে পদ্মা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এটি ছিল নৌ পুলিশের প্রতীকী প্রতিবাদ। যাতে ঘুরমুখো মানুষ এবং তাদের বহনকারী ট্রলার মালিকরা সাবধান হন। তারা যাতে বেশির টাকার লোভে যাত্রী পারাপার না করেন। আর যাত্রীরাও যাতে নদী পার হতে না পারেন। এতে করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কিছুটা হলেও কম হবে। তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে জেলেদের রক্ষা করতে বঙ্গোপসাগরে টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ জেলেরা যখন মাছ ধরেন, তখন তাদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বা সামাজিক দূরত্ব হিসেবে যেটিকে বলা হচ্ছে সেটি থাকে না। এজন্য গত ২০ মে থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নৌ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কোন জেলে যেন ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যেতে না পারে, এজন্য নৌ পুলিশের ১৯টি স্টেশন থেকে ৫টি জাহাজ, ট্রলার ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার নদীগুলোতে টহল দেয়া হবে। পাশাপাশি জেলেপাড়ার ওপর নজর রাখা হবে। নৌ পুলিশের প্রধান ডিআইজি মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান, নৌ পুলিশ স্টেশনগুলোর কাছে সকল ফিশিং বোট ও ট্রলারের তালিকা আছে। ট্রলারগুলো কোথায় অবস্থান করছে সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। সকল ফিশিং বোট ও ট্রলারগুলোকে যৌক্তিক কারণ ছাড়া জেটি বা ঘাটের বাইরে যাওয়া নিষেধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেআইনীভাবে ধরা মাছের ক্রেতা বিক্রেতা ও বরফের মাধ্যমে মজুদকারীদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, নির্দেশ অমান্য করে যাত্রী পারাপারে জড়িত নৌযানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওইসব নৌযানের মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা দায়ের, তাদের গ্রেফতার এবং মামলার আলামত হিসেবে নৌযান জব্দ করা হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এছাড়া আর কোন বিকল্প নেই নেই নৌ পুলিশের কাছে। তিনি এ ব্যাপারে নৌ পথের যাতায়াতকারীদের সহযোগিতা কামনা করেন। যাতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ তুলনামূলক কম হয়। নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লিগ্যাল মিডিয়া এ্যান্ড ট্রেনিং) ফরিদা পারভীন জানান, নৌ পুলিশের গোয়েন্দা দল এ ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি করছে।
×