ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২২ মে ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ কী যে বৈরী একটা সময়! ভাল কোন খবর নেই। শঙ্কা বাড়ছে শুধু। এ অবস্থায় দাপট দেখিয়ে গেল আমফান। সুপার সাইক্লোনে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি ফসল গাছপালা রাস্তাঘাট। ক্ষয়ক্ষতির পরিপূর্ণ হিসাব এখনও আসেনি। তবে যা খবর আসছে তাতে এটা পরিষ্কার যে, বহু মানুষ সব হারিয়ে এরই মাঝে নিস্ব হয়ে গেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার আঘাত হানে আমফান। ঢাকায় বসেও এর আঁচ করা যায়। রাজধানীতে আমফানের প্রভাবে সারাদিনই কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল ঝড়ো হাওয়া। আর রাতে বাতাসের গতিবেগ ক্রমে বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে বৃষ্টিভেজা ঠা-া বাতাস ভালই লাগছিল। গ্রীষ্মের গরমে অদ্ভুত একটা প্রশান্তি। কেউ কেউ ঘরের দু একটা দরজা জানালা খুলে রেখেছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটি সম্ভব হয়নি। জানালার কপাট উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। অগত্যা দৌড়ে গিয়ে শক্ত করে খিল দিতে হয়েছে। এর পরও বাইরে থেকে শো শো আওয়াজ আসছিল। আঁকাবাঁকা হয়ে ঝরছিল বৃষ্টির ধারা। এ অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে আমফানের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছিলেন রাজধানীবাসী। উপকূল এলাকায় ক্ষয় ক্ষতির শঙ্কা করা হচ্ছিল। শঙ্কা নিয়েই ঘুমোতে যান সবাই। অবশ্য মধ্যরাতের পর ঢাকায় ঝড়ো হাওয়া বৃষ্টি থেমে যায়। তবে চিহ্ন রেখে যায় আমফান। বৃহস্পতিবার সকালে বাইরে বের হয়ে দেখা যায়, ঢাকার গাছপালাগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে গেছে সুপার সাইক্লোন। লাল কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে সামান্যই। নিচে অনেক বেশি। সোনালু ফুলগুলোও ছোট পাখির পালকের মতো ঝরে পড়েছে। হাতেগোনা কিছু গাছে আম হয়েছিল। পাকতেও শুরু করেছিল। কিন্তু এখন তেমন অবশিষ্ট নেই। ঝরে পড়েছে। ঢাকার রাস্তাঘাটে জল জমেছিল। লম্বা সময় পর্যন্ত ছিল এ জলজট। এভাবে বৃহস্পতিবার সারাদিনই আমফানের টুকিটাকি চিহ্ন চোখে পড়েছে। এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এতটুকু কমেনি। বরং বেড়েই চলেছে শুধু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৭৩ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন সর্বোচ্চ ২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৯ জন এবং নারী ৩ জন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ৫১১ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন মোট ৪০৮ জন। তার মানে কি অন্যান্য দেশের মতোই ভুগতে হবে বাংলাদেশকে? অনেক মানুষ মারা যাবে? বিপদের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও সামনে খারাপ বিছুর আশঙ্কা করছেন বলে জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। কী আছে তাহলে রাজধানী শহরের ভাগ্যে? ঘরে বসে অনেকেই তা ভাবছেন। যারা কারণে অকারণে বাইরে বের হচ্ছেন তারাও দুশ্চিন্তামুক্ত নন। মনে ধুকধুক নিয়েই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। ঘরে ফেরার সময় প্রাণঘাতী ভাইরাসটি সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন। কিংবা ছড়িয়ে দিয়ে আসছেন। কী ঘটছে আসলে? না, নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। অর্থাৎ বড় অনিশ্চিত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। দুর্দিনের কবলে পড়েছে ঈদও। উৎসবটি ঘিরে সে কী আনন্দ উত্তেজনা প্রতি বছর চোখে পড়ে। এবার তার ছিটে ফোঁটাও নেই কোথাও। ঢাকার কিছু দোকানপাট খোলা রাখা হয়েছে। নামমাত্র খোলা। ক্রেতাও সামান্য। বৃহস্পতিবার আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, অনেক সতর্কতা মেনে দোকান খোলা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা প্রায় নেই বললেই চলে। হঠাৎ দুই একজন আসছেন। কথা বলে বোঝা গেল, তারাও ঠিক ঈদের কেনাকাটা করতে আসেননি। প্রয়োজনীয় পোশাক কিনতে এসেছেন। রাস্তায়ও ভিড় কমেছে। প্রাক উৎসবের বালাই নেই। ঈদের আগে এমন নির্লিপ্ত ঢাকা, এমন কর্মকোলাহলহীন ঢাকা দেখে মন সত্যি বেদনায় ডুবে যায়। এই বেদনা থেকে কবে মিলবে মুক্তি? কবে আমরা ফিরে পাব চেনা শহর? শেষ করা যাক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রসঙ্গ টেনে। উত্তরে আতিকুল ইসলাম দায়িত্ব বুঝে নেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে দক্ষিণে হাল ধরেছেন ফজলে নূর তাপস। এর ফলে অনেকদিন পর অভিভাবক খুঁজে পেলেন ওই এলাকার নাগরিকেরা। মাঝখানের কিছুদিন তেমন কাজ হয়নি। তারও আগে আছে ব্যর্থতার নানা ইতিহাস। সবই জেনে বুঝে পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তাপস। তরুণ নেতৃত্ব। ক্লিন ইমেজ। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সমর্থন। সর্বোপরি নিজের ভাল কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন। প্রতিশ্রুতি। সবই সত্য করে তেলার সময় এসেছে। কিন্তু বাস্তবে কতটা পারবেন তাপস? বলা চলে, কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে।
×