ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার মধ্যেও ঈদে রেমিটেন্সের পালে হাওয়া

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২২ মে ২০২০

করোনার মধ্যেও ঈদে রেমিটেন্সের পালে হাওয়া

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মহামারী করোনাভাইরাসের এ সঙ্কটময় মুহূর্তেও রেমিটেন্সের পালে হাওয়া লেগেছে। ঈদ সামনে রেখে আত্মীয়-স্বজনদের জন্য দেশে অর্থ পাঠাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। চলতি মে মাসের প্রথম ১৯ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১০৯ কোটি ১০ লাখ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা)। যা গত মাস এপ্রিলের চেয়ে বেশি। এপ্রিলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রভাবে রেমিটেন্স আহরণের প্রধান দেশগুলোতে গত তিন মাস ধরে অচলাবস্থা। কাজ নেই, অনেকে ঘর থেকেও বের হতে পারছে না। বেশিরভাগ দেশে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা চাইলেও দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারেননি। যার কারণে গত দুই মাস রেমিটেন্সের প্রভাব কমেছে। তবে আস্তে আস্তে এখন বিশ্ব পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। অনেক দেশে স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করছে। তাই ঈদের সামনে আবারও রেমিটেন্স পাঠানো শুরু করেছেন প্রবাসীরা। এদিকে প্রতিবছরই ঈদের আগে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ে। গত বছরের ঈদের আগে মে মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই সময়ে মে’র প্রথম ১৯ দিনে পাঠিয়েছিল ১০৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়ে আগের মাস এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। যা গত ৩০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলে পাঠানো রেমিটেন্স আগের বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৩৫ কোটি ডলার বা ২৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এপ্রিলের আগের মাস মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এদিকে রেমিটেন্সে সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা সহজে যেন পান সেই জন্য বেশ কিছু শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিটেন্সের প্রণোদনায় কোন ধরনের কাগজপত্র লাগত না। এর আওতা বাড়িয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিটেন্সে বিনা শর্তে কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনার অর্থ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। এতদিন প্রণোদনা পেতে হলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রাপক ওঠানোর ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হতো। এখন তা বাড়িয়ে দুই মাস করা হয়েছে। জানা গেছে, এতদিন দেড় লাখ টাকার নিচে পাঠানো অর্থের বিপরীতে রেমিটেন্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য কোন কাগজপত্র লাগত না। তবে দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংকের শাখায় পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতার দেয়া নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে হয়। রেমিটেন্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে ব্যবসার লাইসেন্সের দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। যা অর্থবছর হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ। এদিকে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সংস্থার ঋণের কারণে রফতানি মন্দার মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। ২০ মে পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩২০ কোটি বা ৩৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
×