ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিপা সিনহা

করোনাকালে সামাজিক স্থিতিশীলতা

প্রকাশিত: ২১:২৩, ২২ মে ২০২০

করোনাকালে সামাজিক স্থিতিশীলতা

আজকাল নৈতিকতার অবক্ষয় যেন সংবাদের নিয়মিত বিষয়বস্ততে পরিণত হয়েছে। তবে বিষয়টি পূর্বেও ছিল না এমন নয়। যুগে যুগে এর চূড়ান্ত রূপ আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটে উঠছে। হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, ভোগ-বিলাস, কামনা-বাসনা- প্রায় সবার মাঝে জেঁকে বসেছে। সমাজে আজ সব নতুন নতুন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। লোমহর্ষক সব ঘটনা। বড় বিস্ময়কর বাস্তবতা হলো, একটি নতুন অপরাধ যখন প্রথম সংঘটিত হচ্ছে, গোটা দেশের মানুষ তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। দ্রুত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠছে। একটি বিচারের দাবি পূরণ না হতেই সেরূপ আরও একটি ঘটনা সমাজে সংঘটিত হয়ে পড়ছে, পুনঃ পুনঃ তা ঘটছে। যেখানে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার হওয়ার কথা সেখানে যেন সাহসের সঞ্চার হচ্ছে। বিষয়টি যেন ঠিক এমন, Ñ‘কেউ একজন পাপের দুঃসাহসী গুরু এসে অপকর্মের দ্বারটি উন্মোচন করে দিয়ে যাচ্ছে, আর অমনি তার অনুসারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সেই কাজের কথাটা হাস্যরসের মনে হলেও বড় দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, এরই মধ্যে আমরা আজ অসহায়ের মতো বেঁচে আছি। মানুষ যেন স্বেচ্ছাচারিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে হিংস্র দানবের মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভয়াবহ পরিণতি নিশ্চিত, তা জেনেও যেন ওরা দমছে না। যেদিন শুনলাম, ‘একজন বয়স্ক মানুষ দ্বারা একটি পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষিত হয়েছে। কেমন যেন আঁতকে উঠেছিলাম। বিষয়টিকে নিয়ে কারও সঙ্গে আলাপচারিতা করতেও কেমন যেন বিব্রতবোধ করেছিলাম। এই ধর্ষণকে কেন্দ্র করে তখন সমাজে যেন ঝড় বয়ে গিয়েছিল বিচারের দাবিতে। যা হোক, সমাজের বিদ্যমান অন্য সব ভয়ঙ্কর সমস্যাকে হার মানিয়ে যে প্রাণঘাতী অদৃশ্য সমস্যাটি এখন প্রকট ও প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো নভেল ‘করোনাভাইরাস।’ দেশের মানুষ আজ এই দ্রুত ছোঁয়াচে ভাইরাসটিকে নিয়ে চাপা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত এই নতুন ভাইরাসটির কোন শতভাগ নিরাময়যোগ্য ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে তা আবিষ্কারে গোটা বিশ্ব মরিয়া হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর মানুষ আজ সব দ্বন্দ্ব-দম্ভ, বিভেদ ভুলে গিয়ে রাত-দিন একসঙ্গে একই গবেষণার কাজে যেন ঘাম ঝরাচ্ছে। অন্য সময় যখন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রেষারেষি লেগে থাকত আজ তারাও সে সব সঙ্কীর্ণমনতাকে দূরে ঠেলে পরস্পরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত। তবে বর্তমান সময়ের অদৃশ্য এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তুলনায় আমাদের দেশে বিদ্যমান সব মানবসৃষ্ট প্রাণঘাতী ভাইরাসগুলো কি কম আতঙ্কের? এখানেও সর্বক্ষেত্রেই মৃত্যু আতঙ্ক। ধর্ষিত হয়ে মৃত্যু (হত্যা), আগুনে পুড়ে মৃত্যু, সাগরে ডুবে মৃত্যু, গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু। দিন শেষে সড়ক পথে নিশ্চিত কয়েকজনের মৃত্যু। এসব মৃত্যু প্রতিরোধ করা কি করোনাভাইরাসের চেয়েও অনেক বড় কঠিন কাজ? আজ আমাদের উচিত এ কঠিন সময় থেকে শিক্ষা নেয়া নিজেদের সুধরে নেয়া। আজকের পৃথিবীর মতো আমাদেরও ভয়ঙ্কর সব অপরাধ দমনে সবাইকে এক হতে হবে। সমাজের জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিজ্ঞজনদের সঙ্গে নিয়ে দল-মত নির্বিশেষে সব কিছুর উর্ধে থেকে কাজ করে যেতে হবে। সময়ই যেন এখন সেই দিকনির্দেশনাই দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবে সমসাময়িক বিশ্ব এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে তাদের অথনৈতিক দিক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের কথা যদি বলি, আমরা অর্থনৈতিকভাবে তেমন শক্তিশালী নই। আয়তনের তুলনায় দেশে জনসংখ্যাও অধিক। উপরন্ত ঘূর্ণিঝড় আমফান দেশে আঘাত হেনেছে। এরূপ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সামাজিক শৃঙ্খলার অবনতির কোন সম্ভাবনা যেন সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে আমাদের সকলের সোচ্চার হওয়া দরকার। সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদেরও সে বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। যারা অসহায়, আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে তাদের আর্থিক ও অন্য সবধরণের সহায়তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রয়াস। এতে সামাজিক নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রনে থাকবে বলে আশা করা যায়। লেখক : সাহিত্যসেবী
×