ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেরপুরে করোনা আক্রান্ত এক রোগীর অবাধ চলাফেরায় এলাকায় আতঙ্ক

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ২১ মে ২০২০

শেরপুরে করোনা আক্রান্ত এক রোগীর অবাধ চলাফেরায় এলাকায় আতঙ্ক

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরে তথ্য গোপন রেখে শাহাদত হোসেন (৬০) নামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর অবাধ চলাফেরায় তার নিজ এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বুধবার রাতে শহরের দমদমা মহল্লায় করোনা শনাক্ত হওয়ার ২ দিন পর এলাকায় ওই ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়ে। পরে থানা পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় উদ্যমী ব্যক্তিরা ওই আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িসহ এলাকাবাসীকে সতর্ক করে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় পৌঁছেন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারুক আল মাসুদ ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন। পরে তারা ওই ব্যক্তিকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। একই সাথে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের অন্য ২ সদস্যসহ ৪ জনের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ এবং ওই বাড়িসহ আশেপাশের ১১টি বাড়ি, স্থানীয় জাকের জামে মসজিদ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। নিষিদ্ধ করা হয় ওই মসজিদেই আসন্ন ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ও। জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার ইন্দিলপুর এলাকার অধিবাসী শাহাদত হোসেন সোনালী ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কিছুদিন আগে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের আগে থেকেই প্রায় ২ বছর যাবত তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে দমদমা মহল্লাস্থ শ্বশুরবাড়ির কাছে বাসাবাড়ি করে সেখানেই বসবাস করে আসছিলেন। কিছুদিন আগে পৈত্রিক নিবাসের তার এক আত্মীয় ও শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়। ওইসময় ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে ওই আত্মীয়ের বাসায় যাতায়াতের এক পর্যায়ে তার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। এ বিষয়টি তিনি গোপন রাখলেও তার অপর এক আত্মীয় স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে ১৬ মে তার নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর ১৮ মে নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। কিন্তু ততক্ষণও তিনি তা গোপন রাখায় এবং সকল কিছুতে তার বর্তমান ঠিকানা শহরের দমদমা না হয়ে ইন্দিলপুর থাকায় এলাকাবাসীর মাঝে তা জানাজানি হয়নি। অন্যদিকে শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ২০ মে বুধবার রাতে তারাবী নামাজ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি নিজের তথ্য গোপন রেখে এলাকায় অবাধে যাতায়াতসহ প্রাত্যহিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকে। ওই অবস্থায় হঠাৎ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই ঘটনা ফাঁস হলে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও এলাকায় শুরু হয়ে যায় হুলস্থুল। ওইসময় স্থানীয় সমাজপতিরা খোঁজ নিয়ে জানতে পান, আক্রান্ত ব্যক্তি কেবল নমুনা সংগ্রহের পর নয়, শনাক্ত হওয়ার পর থেকেও ২ দিন যাবতই মসজিদ, দোকানপাটসহ এলাকায় অবাধে বিচরণ করেছেন। কেবল তাই নয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি সোনালী ব্যাংকে গিয়ে ওই ব্যাংকের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এসেছেন এবং সন্ধ্যায় স্থানীয় জাকের মসজিদে মুসল্লীদের সাথে ইফতার ও পরে তারাবীর নামাজে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া তার বাড়িতে থাকা অন্য ২ সদস্যও (স্ত্রী ও পুত্র) আশেপাশের বাড়িঘরসহ দোকানপাটে করেছেন অবাধ যাতায়াত। আর এমন তথ্যে এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর তরফ থেকে তা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও থানা পুলিশকে জানানো হয়। এ বিষয়ে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোবারক হোসেন আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে পান ঘটনার সত্যতা। এরপর মধ্যরাতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও এসআই শরীফ হোসেনের সহায়তায় আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িসহ অধিবাসীদের সতর্ক করেন স্থানীয় সমাজপতিরা। ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় অধিবাসী জেলা আইনজীবী সমিতি ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার জানান, করোনার মত ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও ওই ব্যক্তি তা গোপন রেখে এলাকায় অবাধ যাতায়াত করার দুইদিন পর বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তা জানাজানি হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে না পেলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহায়তায় রাতেই আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারসহ এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতির আলোকে স্বাস্থ্য বিভাগ তাকে জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখেছে। তবে পরিবারটি আর্থিক দৈন্যদশায় থাকায় তাদের প্রতি স্থানীয় সমাজপতিদের যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। কয়েক দফায় সহায়তা দেওয়ার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এলাকাবাসীর তরফ থেকে ওই পরিবারকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত থাকবে। একই কথা জানান স্থানীয় অধিবাসী ও পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ। সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারুক আল মাসুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের তথ্য গোপন করে অবাধে যাতায়াত করায় সংশ্লিষ্ট আইনও ভঙ্গ করেছেন। তবে সংক্রমণের আশঙ্কায় তাকে ক্ষমা করা হলেও হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়েছে। আর আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িসহ আশেপাশের ১১ বাড়ি এবং বাড়ি সংলগ্ন মসজিদটি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। টানিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল নিশান। ওই মসজিদে নিষেধ করা হয়েছে ঈদের জামাত আদায়ও। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোবারক হোসেন বলেন, এলাকায় তথ্য গোপনসহ অবাধে যাতায়াতের কারণেই ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালের আইসোলেশনে নিয়ে আসতে হয়েছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্ত্রী ও এক পুত্র এবং তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া এ ব্যক্তিসহ মোট ৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
×