ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাংলাদেশ অমার হৃদয়ের খুব কাছে’

প্রকাশিত: ০০:৪১, ২১ মে ২০২০

‘বাংলাদেশ অমার হৃদয়ের খুব কাছে’

মিথুন আশরাফ ॥ ‘লড়াইটা খুব জমজমাট হতো, বিশেষ করে তোমার (তামিম) আর সাকিবের বিরুদ্ধে।’Ñ কথাগুলো বলেছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম। এখন যদি ওয়াসিম খেলতেন, তাহলে বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল ও সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে লড়াইটা কেমন হতো? সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তামিমের লাইভ আড্ডায় এসে এমন আলোচনা উঠতেই ওয়াসিম লড়াই জমজমাট হয়ে ওঠার কথা বলেন। এমনটি বলার পেছনে কারণ হিসেবে দুইজনই যে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, সেটাই উল্লেখ করেন ওয়াসিম। তিনি বলেন, ‘তোমরা দুজনই বাঁহাতি।’ কিংবদন্তি পেসার আরও জানান, বাংলাদেশ তার হৃদয়ের খুব কাছে থাকে। ১৯৯৫ সালে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে এসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক দেখে অবাক হন ওয়াসিম। বর্তমান ক্রিকেটারদের পারফর্মেন্স নিয়ে লাইভে থাকা দেশের সাবেক তিন ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান ও খালেদ মাসুদ পাইলটকেও খোচা দেন ওয়াসিম। আবার আকরামকে যে একবার এশিয়া কাপের ম্যাচে হুমকি দেন ওয়াসিম, সেই স্মৃতিও উঠে আসে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে হারের স্মৃতিও সামনে তুলে ধরেন ওয়াসিম। ওয়াসিম যখন জমজমাট লড়াই হওয়ার কথা বলেন, তখন তামিম আবার স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ওয়াসিমের মুখোমুখি হতে চান না তামিম। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম বলেন, ‘আমি আপনার মুখোমুখি হতেই চাই না, আমরা অনেক ভাগ্যবান যে আপনাকে খেলতে হচ্ছে না।’ বাংলাদেশ যে ওয়াসিমের হৃদয়ের খুব কাছে আছে, তাও জানান। তিনি বলেন, ‘ধারাভাষ্য দেয়ার জন্য অনেকবার এসেছি। এখানে অনেক বন্ধু আছে। বাংলাদেশে না আসাটা আমি খুব মিস করি। বাংলাদেশ আমার হৃদয়ের খুব কাছে আছে। মানুষ, খাবার, দেশটা এবং ক্রিকেট, বাংলাদেশের ক্রিকেট গত ১০-১২ বছর যে অভাবনীয় উন্নতি করেছে এটা দেখা আমার জন্য খুব গর্বের। আমি বাংলাদেশের ঝোল মিস করি। মাছের ঝোল।’ ১৯৯৫ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনীর হয়ে ওয়াসিম খেলেন দেশের সাবেক অধিনায়ক নান্নু, আকরাম ও পাইলটের সঙ্গে। লাইভ আড্ডায় ওয়াসিম, নান্নু, আকরাম, পাইলট ছিলেন। ওয়াসিম সেই সময়ের স্মৃতি তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দর্শকদের উত্তেজনার কথাও জানান, ‘প্রথমত, আমি বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহটা দেখতে চেয়েছিলাম। আমার মনে পড়ে, আমার ভাল বন্ধু কামাল ভাই (আ হ ম মুস্তফা কামাল) হুট করে আমাকে খেলতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। আমি বলেছিলাম, আমার সময় নেই।’ সঙ্গে ওয়াসিম যোগ করেন, ‘তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার অবশ্যই আসা উচিত, আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে খেলা উচিত।’ আমার কোন ধারণাই ছিল না, ব্যাপারটা কেমন হতে পারে। ক্রিকেট, ফুটবল, হকিতে তোমাদের যেমন ক্লাব আছে, পাকিস্তানে তেমন কোন ক্লাব নেই। মানুষে পূর্ণ ছিল স্টেডিয়াম! ক্রিকেট নিয়ে এত আগ্রহ দেখে বিস্মিত ছিলাম। বাংলাদেশে ক্লাব ক্রিকেট খেলে, এমন ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আগে শুনেছিলাম, মাঠ দর্শকপূর্ণ থাকে, এখানে সবাই খেলাটা ভালবাসে। তবে আমি ভাবতে পারিনি, বাংলাদেশে ক্রিকেট এত বড় ব্যাপার।’ বাংলাদেশের সাবেক তিন অধিনায়ককে একটু খোচাও দিয়েছেন ওয়াসিম। বর্তমান প্রজন্মের পারফর্মেন্স সামনে তুলে ধরে বলেছেন, ‘তামিম, সাকিব, মুস্তাফিজ, মুশফিকের মতো খেলোয়াড় উঠে এসেছে, এটা দেখতে ভাল লাগে। এরা (মিনহাজুল-আকরাম-মাসুদ) যখন ছিল, তখন ফিল্ডিং ততটা ভাল ছিল না। আর এখন বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা ফিল্ডিং সাইডের একটি।’ আড্ডায় ওয়াসিমের হুমকির ব্যাপারে জানান আকরাম। দীর্ঘ ২৫ বছর পর সেই স্মৃতি সামনে তুলে ধরে আকরাম বলেন, ‘ওয়াসিম তোমার কি ১৯৯৫ সালের শারজাহতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ঘটনা মনে আছে? তোমাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমি অধিনায়ক ছিলাম, অনেক গরম ছিল। তুমি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলে ‘আকরাম টস জিতলে কি করবে?’ আমি বলেছিলাম ফিল্ডিং নেব। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে আমি নিশ্চিত কিনা? বললাম পরিকল্পনা এটাই। টসের সময় যাচ্ছিলাম, নান্নু ভাই এসে বললেন ‘তুমি ফিল্ডিং কেন নিচ্ছ? ওরা তো আগে ব্যাটিং করলে ৩০০’র উপর করবে, কিভাবে হবে? জিতলে ব্যাটিং নিও।’ এরপর আমি ব্যাটিং নেই, এরপর তুমি ড্রেসিং রুমে এসে আমাকে বললে ‘আকরাম তুমি আসও, তোমাকে দেখে নেব।’ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে ৬২ রানে হারের পর যেমন বাংলাদেশের প্রশংসা করেছিলেন, এখনও তাই করেন ওয়াসিম। তিনি জানান, ‘ক্রিকেটীয় বিচারে, সত্যিই বাংলাদেশ সেদিন আমাদের চেয়ে ভাল খেলেছিল। যদিও অনেক আগের ঘটনা, তবু আমার মনে আছে, আমরা টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছিলাম। আমাদের পরিকল্পনাটা ছিল রান তাড়া করার একটা অনুশীলন করার। কারণ আগে ব্যাট করে আমরা জিতছিলাম।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘বাংলাদেশের বোলাররা খুব ভাল বোলিং করেছিল। ওদের একজন স্লো মিডিয়াম পেসার (খালেদ মাহমুদ সুজন) পুরোটা সময় দারুণ সুইং করিয়েছিল। সবমিলিয়ে ভাল ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের জন্য এটা হতাশার ছিল। তবে বাংলাদেশ যেমন খেলেছিল, তা সত্যিই প্রশংসনীয় ছিল।’
×