ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসা ভাল না হওয়ার অজুহাতে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের ২০১৮ ও ২০১৯ সালের কোন লভ্যাংশ প্রদান করেনি

আস্থাহীনতায় তিন বীমা কোম্পানির দর অর্ধেকে নেমেছে

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২১ মে ২০২০

আস্থাহীনতায় তিন বীমা কোম্পানির দর অর্ধেকে নেমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারের বীমা খাতের তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে লোকসান গুণছেন বিনিয়োগকারীরা। ব্যবসা ভাল না হওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের ২০১৮ ও ২০১৯ সালের আর্থিক হিসাব বছরের জন্য কোন লভ্যাংশ প্রদান করেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থায় গত দেড় বছরে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানি তিনটি হলো- পদ্মা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্স। বর্তমানে লভ্যাংশ না দেয়া কোম্পনি তিনটিই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এদিকে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ না পাওয়ায় কোম্পানিটির ওপর আস্থা হারিয়েছেন বিয়োগকারীরা। ফলে কোম্পোনিগুলোর শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে যেসব বিনিয়োগকারীর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ রয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পদ্মা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স : কোম্পানিটি ধারাবাহিকভাবে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের আর্থিক হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগেও কোম্পানিটি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লভ্যাংশ দেয়নি। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ১৪.৬০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। আর ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩০ টাকা। লভ্যাংশ না দেয়ার ফলে দেড় বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দর অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ॥ কোম্পানটি ২০১৮ সালের আর্থিক হিসাব বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। এর আগে ২০১৭ সর্বশেষ মাত্র ২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কোম্পানিটি লভ্যাংশ দেয়নি। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ১৭.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৫.৩০ টাকা। একইভাবে এ গত দেড় বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দর অর্ধেকে নিচে নেমে এসেছে। প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ॥ ২০১৮ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রাইম ইন্স্যুরেন্স। কিন্তু কোম্পানিটি ২০১৯ সালের হিসাব বছরের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে তা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে সানলাইফ ও পদ্মা ইসলামিক লাইফের পথেই হাঁটছে প্রাইম ইন্সু্যুরেন্স। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ১৭.৭০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। আর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৫.৪০ টাকা। লভ্যাংশ না দেয়ার ফলে কোম্পানিটিরও শেয়ার দর অনেক নিচে নেমে এসেছে। মোবারক হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারীর অভিযোগ, পুঁজিবাজারে বীমা কোম্পানি ভাল অবস্থানে রয়েছে। তবে দু-তিনটি কোম্পানি রয়েছে যাদের ব্যবসা ভাল না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের ঠিক মতো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। ফলে ওইসব কোম্পানিতে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে তারাই লোকসান গুনছেন। আর্থিক হিসাব ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে স্বচ্ছতার অভাবে কোম্পানিগুলোর গতি নেই। সানলাইফ ইন্সু্যুরেন্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মোবারক বলেন, ‘ব্যবসা ভাল না হওয়ায় ২০১৮ সালের হিসাব বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দেয়া হয়নি। ফলে শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কোম্পানি ব্যবসা ভাল করার চেষ্টা করছে। এদিকে পদ্মা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব মোঃ আবু সৈয়দ সরকার বলেন, কোম্পানিটি নিয়মিত এজিএম করলেও লভ্যাংশ দিচ্ছে না। কারণ এ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনেরে মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি ও দায় মূল্যায়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, প্রডাক্ট ডিজাইন, লাইফ ফান্ড এবং গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারের মুনাফা ও লভ্যাংশ নিরূপণ করা হয়নি। ভ্যালুয়েশনের পর আমরা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বলতে পারব। তবে এতে কোম্পানির শেয়ার দরে কিছুটা প্রভাব পড়েছেই। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোম্পানিগুলো ভাল লভ্যাংশ দেবে এমন প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা সে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু বছর শেষে কোম্পানিগুলো নো ডিভিডেন্ড’ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেন। তাই কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে লভ্যাংশ দিতে পারছে কিনা তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত।
×