ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী ও ধনীদের নাম

প্রকাশিত: ০০:০৯, ২১ মে ২০২০

প্রবাসী ও ধনীদের নাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া, ২০ মে ॥ দৌলতপুরে করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ, হতদরিদ্র ও কর্মহীনদের মাঝে সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকা নিয়েও নয়ছয় অবস্থা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যারা এই অর্থ পাওয়ার কথা অথচ সে অর্থ পাওয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সচ্ছল বা ধনী ব্যক্তিদের নাম। আবার দেশে নেই প্রবাসে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন এমন ব্যক্তির নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই তালিকায়। ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে এ তালিকা প্রস্তুত করার কথা থাকলেও ওয়ার্ড কমিটির কোন সদস্যকে না জানিয়ে ঘরে বসে পছন্দের ব্যক্তির নাম বা আত্মীয় স্বজনদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আবার একই পরিবারের পিতা-পুত্রসহ একাধিক ব্যক্তির নামও অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ১২ হাজার ৬শ’ দরিদ্র ব্যক্তি নগদ অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকাও প্রস্তুত করে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রেরিত তালিকায় হতদরিদ্র, দিনমজুর, দুস্থ ও করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া গরিব মানুষের নাম বাদ দিয়ে সচ্ছল ও বিত্তবানদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের পচামাদিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন প্রবাসে বিলাসবহুল জীবন যাপন করে সদ্য দেশে ফিরেছেন অথচ তার নাম এ তালিকায় রয়েছে। একই অভিযোগ শিরিনা খাতুনের নামে। তার স্বামী বাহারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে রয়েছেন। পচামাদিয়া গ্রামে অর্থ-সম্পদশালীদের মধ্যে সে একজন। সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকায় রয়েছে তার নাম। একই ইউনিয়নের তেলিগাংদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শামীম নামে এক শিক্ষক পরিবারের ৬ সদস্যের নামে অর্থসহায়তার তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের তালিকাতেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর করোনাকালীন সরকারী ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় তার নামে আদালত স্ব-প্রণোদিত মামলা করেছেন। তারপরও তিনি সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকাতে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এ ইউনিয়নের বালিরদিয়াড় গ্রামে তাঁর শ^শুরের অর্থ সম্পদশালী তিন ছেলে এ কে এম শাহ জামাল, রিপন থান্ডার ও কামাল থান্ডারের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। একইভাবে বালিরদিয়াড় গ্রামের সম্পদশালী অনেকের নাম তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর তার ইউনিয়নের মহসিন আলী, শহিদুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান ও মানিকসহ সব গ্রাম পুলিশের নামে সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার। এছাড়াও মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর গ্রামে স্বামী মকলেছুর রহমান ও তার স্ত্রী রেনুয়ারা খাতুনের নামে নগদ অর্থ সহায়তার তালিকায় নাম রয়েছে। নাম রয়েছে একই পরিবারের আপন দুই ভাই ইদ্রিস আলী ও জিন্দার আলী এবং মিঠুন ও তার ছোট ভাইয়ের। করোনাকালীন ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে এমন ব্যক্তির মধ্যে বৈরাগীরচর গ্রামের বিল্লাল, কালু ও হবিবরসহ অনেকের নাম রয়েছে নগদ অর্থ পাওয়ার তালিকায়। একই অভিযোগ দুর্গম চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ ইউনিয়ন দৌলতপুর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ সরকারী ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিলেও তা দেখার কেউ ছিল না। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকাতেও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে কোন নিয়মই মানা হয়নি। দরিদ্র, কর্মহীন, দিনমজুর ও দুস্থ ব্যক্তিদের নাম বাদ দিয়ে মনগড়া পছন্দের ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন তিনি। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ বলেছেন, স্বপ্ল সময়ের মধ্যে তড়িঘড়ি করে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তালিকা প্রস্তত করা হয়েছে। এতে কেউ বাদ পড়তে পারে আবার কেউ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এখানে নয়ছয়ের কোন সুযোগ নেই। তবে একটি পক্ষ আছে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার জন্য। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত আসলে কিছুই পাবে না। অভিযোগ রয়েছে ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম ফজলুল হক কবিরাজের বিরুদ্ধে। সে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় না করে তালিকা প্রস্তুত করেছেন। ওই ইউনিয়নের গোলাম কিবরিয়া নামে ওয়ার্ড কমিটির এক সদস্য জানান, আমাদের না জানিয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তবে এসব তালিকায় অসঙ্গতি রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়াও দৌলতপুরের আদাবাড়িয়া, বোয়ালিয়া, খলিশাকু-ি, পিয়াপুর, হোগলবাড়িয়া, আড়িয়া, মথুরাপুর ও রিফায়েতপুরহ প্রায় সব ইউনিয়নেই তালিকা প্রস্তুতে এমন জোড়াতালি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আর সেসব ক্ষেত্রে ভোট হারানোর ভয়ে হতদরিদ্র, দিনমজুর, দুস্থ ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের পরিবর্তে অর্থবিত্তশালীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারীভাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তার তালিকার বিষয়ে দৌলতপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, দৌলতপুরে ১৪ ইউনিয়নের ১২ হাজার ৬০০ জনের নামে তালিকা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তালিকা আপলোডিংয়ের কাজ চলছে। তবে তালিকাভুক্তরা নগদ অর্থ সহায়তা কবেনাগাদ পাবে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, অফিসে বসে তালিকা আপলোডিংয়ের কাজ করছি। তালিকা প্রস্তুত করেছে ওয়ার্ড কমিটি। এক্ষেত্রে আমাদের কিবা করার আছে। আর তালিকার বিষয়ে সারা দেশেই এমন অভিযোগ উঠেছে। মাগুরায় ১৫৯০ কার্ড বাতিল নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, হত-দরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরের সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর কার্ড পরিচয় গোপন করে সচ্ছল লোকেরা গ্রহণ করায় মহম্মদপুরে ১ হাজার ৫৯০টি কার্ড বাতিল করেছেন উপজেলা প্রশাসন। জানা গেছে, জেলার মহম্মদপুর উপজেলায় দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ৬ হাজার ৫৬৭ জন এ চাল পেয়ে আসছেন। অভিযোগ ওঠে এলাকার সচ্ছল লোকেরা পরিচয় গোপন করে ১ হাজার ৫৯০টি কার্ড গ্রহণ করে চাল উত্তোলন করছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এই কার্ডগুলো বাতিলের নির্দেশ দেন।
×