ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবাই মিলে দেখার অপেক্ষা

অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে ফুটেছে গ্রীষ্মের গোল্ডেন শাওয়ার

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২১ মে ২০২০

অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে ফুটেছে গ্রীষ্মের গোল্ডেন শাওয়ার

মোরসালিন মিজান ॥ সরকারী নির্দেশনা মেনে যারা ঘরে আছেন, একদমই বাইরে বের হচ্ছেন না যারা তাদের বলি, প্রকৃতিটা এখন অনেক বেশি সুন্দর। কত যে ফুল ফুটে আছে! বিশেষ করে রঙিন সোনালু ফুলের পানে তাকালে মন ভরে যায়। এত রং! এত রূপ! চিত্তকে মুহূর্তেই চঞ্চল করে তোলে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সরকারী-বেসরকারী ভবনের সামনে উঁচু গাছ। ছড়িয়ে থাকা ডালপালা। তবে গাছ বা ডালপালা দেখা যায় না। ওপর থেকে নিচের দিকে ঝুলে থাকা মঞ্জুরি মুগ্ধ করে রাখে। সোনালু ফোটা শুরু হয়েছিল বৈশাখে। এখন জ্যৈষ্ঠ। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে দারুণভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে ফুলটি। অনেক দূর থেকে দেখা যায়। সোনালু ফুলের গাছ আম জাম গাছের মতোই উঁচু। ডাল পালা চারপাশে ছড়ানো থাকে। বিশেষ চেনা যায় ফুল ফোটার মৌসুমে। কাছ থেকে দেখলে পাপড়ির রং কাঁচা হলুদের মতো দেখায়। ঘন ফুলে ভর্তি গাছ দেখে মনে হয় কেউ বুঝি হলুদ রঙের কৌটো উপুর করে দিয়েছে! গ্রীষ্মের প্রখর রোদ ফুলের গায়ে পড়লে রংটি সোনালি মনে হয়। এর ইংরেজী নাম ‘গোল্ডেন শাওয়ার।’ গাছের ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা সোনালু ফুলের মঞ্জরিকে একসঙ্গে শাওয়ারের জলধারার মতোই দেখায়। এ কারণে গোল্ডেন শাওয়ার নাম। অবশ্য বৈজ্ঞানিক নামের বেলায় এর ফল প্রাধান্য পেয়েছে। সে অনুযায়ী নামটিÑ কেসায়্যা ফিস্টুলা। এটি গ্রীক ভাষা থেকে নেয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। বাঁশির মতো লম্বা ফলের জন্য এমন নামকরণ। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা থেকে জানা যায়, সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাকল পুরো এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনো কাঠির মতো গাছ হয়। প্রাণহীন দেখায়। সোনালু ফুলের পাঁচটি পাপড়ি। দশটি পুংকেশর। ভেতরে সবুজ রঙের তিনটি গর্ভকেশর দৃশ্যমান। এগুলো অর্ধচন্দ্র আকৃতির। সোনালু বাংলাদেশে এসেছে পূর্ব ভারত থেকে। একে ‘বানরলাঠি’ বলেও ডাকা হয়! সোনালুর ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণেও একে ‘বানরলাঠি’ বলা হয়ে থাকে। সোনালুর ফলগুলো এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখতে হয়। পাকলে কালচে লাল। সোনালুর কিছু ঔষধিগুণও বিদ্যমান। ছাল, পাতা ও ফলের মজ্জা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার ও ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে আসে। এ ছাড়া ডিপথেরিয়া গন্ডমালা, কুষ্ঠরোগের ক্ষত চিকিৎসায় কার্যকর। ফলের মজ্জা কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যায় উপকারী। তবে ফুলের জন্যই এ গাছ বেশি বেশি লাগানো হয়। নগরের সৌন্দর্য বর্ধনে সোনালুর কোন তুলনা হয় না। করোনার দুঃসহকাল শেষ হলে, নিশ্চয়ই হবে, তখন সবাই মিলে প্রিয় ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করব আমরা। সে পর্যন্ত নিশ্চয়ই অপেক্ষা করবে গ্রীষ্মের গোল্ডেন শাওয়ার।
×