ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাহজালালে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন

সামাজিক দূরত্ব রেখে নতুন নিয়মে যাত্রীর দেহ তল্লাশি

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২১ মে ২০২০

সামাজিক দূরত্ব রেখে নতুন নিয়মে যাত্রীর দেহ তল্লাশি

আজাদ সুলায়মান ॥ করোনা ও ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। হাত দিয়ে দেহ তল্লাশির পরিবর্তে যন্ত্র দিয়ে পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে বিমানবন্দরের প্রতিটি যাত্রীকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নতুন নিয়মে সিকিউরিটি চেকের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি থাকবে শতভাগ সিসিটিভির কভারেজ। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, করোনা তা-বের দরুণ বিশ্বব্যাপীই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে আইকাও-এর বেঁধে দেয়া ধরাবাঁধা নিয়মও মানতে হচ্ছে। মূলত এ কারণেই হযরত শাহজালালসহ দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের দেহ তল্লাশিতেই স্বাস্থ্যবিধিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। গতকাল সরজমিনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায় ফাঁকা বিমানবন্দরে সাধারণ যাত্রী না থাকলেও স্পেশাল ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের নতুন নিয়মেই দেহতল্লাশি করা হচ্ছে। আগে যেখানে হাত দিয়ে যাত্রীর দেহ তল্লাশি করা হতো- এখন সেটা সম্পূর্ণ যন্ত্রভিত্তিক করা হচ্ছে। এ সময় যাত্রীদের ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হয়। একজনের পর একজনকে সামনে রেখে যন্ত্র নির্ভর পদ্ধতিতে দেহ চেক করার পাশাপাশি হ্যান্ডলাগেজও স্ক্যানিং করা হয়। ভারত থেকে আগত হাসিম বলেন, আগে হাত দিয়ে গোটা শরীরজুড়ে টিপাটিপি হতো। এখন আর তা নেই। মেটাল ডিটেক্টও দিয়েই দেহে কোন ধরনের বি¯েফারক ও আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা মূলত সেটাই নিশ্চিত করা হয়। আগে যেখানে একজনের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল এখন সেটা নেই। ন্যূনতম ফাঁকা দূরত্বে অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, যাত্রীর দেহ পরীক্ষার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা দিয়ে বিস্তর এলাকা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যাতে কেউ বাদ পড়লেও সেটা তাৎক্ষণিক ক্যামেরার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। পর্দার আড়াল থেকে যাত্রীর অজান্তে তার গতিবিধি নজরদারি ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। করোনা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাত্রীকে স্পর্শ না করে কিভাবে দেহ তল্লাশি করা যায়, সে কৌশলও প্রণয়ন করা হচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদর দফতরে উচ্চ পর্যায়ের এক জরুরী বৈঠকে বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তার সর্বশেষ পরিস্থিতি ও নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন এভসেকের সদস্য শহীদুজ্জামান ফারুকি, এয়ারপোর্ট পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএস তৌহিদ উল আহসান ও উইং কমান্ডার ওবায়দুর রহমানসহ নিরাপত্তার অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া পদক্ষেপসমূহ কতটা নির্ভরযোগ্য সেটা পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা করোনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা ছাড়াও ঈদের ফাঁকা মুহূর্তে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সে বিষয়েও সচেতন ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ঈদ পরবর্তী বিমানচলাচল শুরু হলে নিরাপত্তার ছক সাজানোর বিষয়টিও আলোচনা হয়। বৈঠকে যোগদানকারী এভসেক পরিচালক উইং কমান্ডার ওবায়দুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি সব সময়ই চালেঞ্জিং। বিশেষ করে করোনার মতো ভয়ঙ্কর ছোবলের মহামারীতে কিভাবে যাত্রীরা নিরাপদ থাকবেন সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব যাতে যাত্রীদের মাঝে বজায় থাকে সেটাই নিশ্চিত করতে হবে। এখানে ছাড় দেয়া যাবে না। যতটা সম্ভব বেশি দূতরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এখন সবাইকে কিভাবে সচেতন করতে হবে কিংবা জানাতে হবে সেই কৌশলও বের করতে হবে। কারণ বিমানবন্দরে তো শুধু যাত্রী আসে না। তার পাশাপাশি বিভিন্ন পেশা ও ধরনের মানুষের আগমন ঘটে। তাদেরও সামাজিক আওতায় এনেই নতুন নিয়মে দেহ তল্লাশি করতে হবে। সেটা যে কোন মূল্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।
×