স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতার জটিলতা অবশেষে কাটল। বকেয়া ১০ মাসের বেতন ও তিনটি উৎসব ভাতার চেক ব্যাংকে পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত বেতন-বোনাসের টাকা তুলতে পারবেন নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রতিটি খাতের টাকার চেক আলাদা আলাদাভাবে ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদফতর। শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী ৩১ মে পর্যন্ত বেতন-বোনাসের টাকা তুলতে পারবেন জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ রুহুল মোমেন বলেছেন, গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়াসহ বেতন-বোনাস পাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত বছরের আগস্টে ঈদ-উল আজহা, বৈশাখী ভাতা-১৪২৭ নতুন শিক্ষকরা বকেয়া হিসেবে পাচ্ছেন। এছাড়া আগামী ঈদ-উল ফিতর ২০২০-এর ভাতা পাচ্ছেন। গত ১৬ মে নতুন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের তিন হাজার ৬২৬ শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত স্তর পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে স্কুলের দুই হাজার ১৬৮ জন এবং কলেজের এক হাজার ৪৫৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। ২৯ এপ্রিল নতুন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত এক হাজার ৬৫১ প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে এক হাজার ৬৩৩টি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৯১টি মাধ্যমিক স্কুল, ৪৩০ নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, ৬৮ স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ৯২ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ৫২ ডিগ্রী কলেজ রয়েছে। এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৮টি স্কুল এ্যান্ড কলেজ বাদ পড়েছে।
মাউশির উপপরিচালক রুহুল মোমেন সোমবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি শিক্ষক-কর্মচারীরা যেন ঈদের আগে টাকা তুলতে পারেন। তাই জিও জারির আগেই আমরা অনেক কাজ গুছিয়ে রেখেছিলাম।
শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যোগ্য বলে বিবেচিতরাই এবার টাকা পাচ্ছেন। অনেকে আবেদন করতে পারেননি। তাদের জন্য ইতোমধ্যেই আবার আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের আবেদনের পর আবার যাচাই-বাছাই করে তাদের প্রাপ্য টাকা দেয়া হবে। নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যারা নির্ধারিত সময়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারেননি, তাদের ফের এমপিওর আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আগামী ২২ মে থেকে বাদপড়া স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আবেদন আবারও গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ইএমআইএস সেলের সার্ভার জটিলতার কারণে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারেননি। সারাদেশ থেকে শিক্ষকরা বলছেন, সার্ভার অচল, ডাউন থাকা এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য আবেদন করা যাচ্ছিল না। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের। যে কোন সমস্যার জন্য হটলাইনে দেয়া নম্বরগুলোর বেশিরভাগ কলই কেউ রিসিভ করছেন না। বিশ থেকে ত্রিশ বার কল করার পর রিসিভ করে শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন কেউ কেউ। দ্বিতীয় দফায় আবেদন গ্রহণে যাতে এরকম জটিলতা না হয় সে বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শিক্ষকরা। তাই, আবার সেই শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির আবেদন করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ম্যানেজিং কমিটির মেয়দ শেষ হওয়ায় রাজশাহীর অনেক এমপিওভুক্ত স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী বেতন বোনাস তুলতে পারছেন না। কমিটি ছাড়া স্কুলগুলোর শিক্ষকদের বেতন কে স্বাক্ষর করবেন তা নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা জারি করেনি রাজশাহী বোর্ড। এ নিয়ে চরম অনিশ্চায়তায় মধ্যে রয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষা বোর্ডের এমন উদাসীনতায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনেক শিক্ষকদের। তবে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড বলছে, সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নোটিস প্রস্তুত করা হয়েছিল। বিদ্যুত না থাকার কারণে আপলোড দেয়া সম্ভব হয়নি। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির স্কুল শিক্ষকরা আগের নিয়মে বেতন-বিল নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে বোর্ডের বা মন্ত্রণালয়ের চিঠি লাগবে। বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) রাজশাহী জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেছেন, এমন দুর্যোগময় সময়ে শিক্ষকরা যেন ঈদের আগে বেতন-ভাতা পান সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই লক্ষ্যে যা যা করা লাগে করতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: