ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বসুন্ধরার করোনা হাসপাতাল

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২১ মে ২০২০

বসুন্ধরার করোনা হাসপাতাল

বাংলাদেশে এবং প্রায় পুরো বিশ্বে করোনাভাইরাস কবলিত এই ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে বসুন্ধরার সর্ববৃহৎ করোনা হাসপাতালের শুভ যাত্রা একটি সুসংবাদ নিঃসন্দেহে। বিশেষ করে সেই সময়ে যখন লকডাউন শিথিল করায় যানবাহনসহ মানুষের প্রায় অবাধ চলাচলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, যদিও মৃত্যুর হার সে তুলনায় কম। এ কথাও সত্য যে, দেশে বেশ কয়েকটি সরকারী-বেসরকারী উন্নত ও আধুনিক হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও সর্বত্র করোনা রোগীর ভর্তি ও চিকিৎসা মোটেও সহজলভ্য নয়। তদুপরি যে সব হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে, সেসব স্থানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী, কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, আইসিইউ ইত্যাদি প্রায় নেই। থাকলেও সেসব পর্যাপ্ত নয়। ভেন্টিলেটর তো অধিকাংশ হাসপাতালে নেই বললেই চলে। এমন এক প্রেক্ষাপটে রবিবার যাত্রা শুরু করেছে বসুন্ধরা কোভিড-১৯ আইসোলেশন হাসপাতাল, যা দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। দুই হাজার ১৩ শয্যার এই হাসপাতালটি নোভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার জন্য নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ হাসপাতালও বটে। রাজধানীর বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে অত্যন্ত অল্প সময়ে এটি নির্মাণ করেছে দেশের একটি শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। অবশ্য এর পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে চালু করা হয়েছে ৫০০ শয্যা। পরে পর্যায়ক্রমে তা উন্নীত করা হবে। এই আইসোলেশন হাসপাতালে অত্যাধুনিক সব সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী থাকবে। সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত সাংবাদিকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ২০০ শয্যা, যা প্রশংসাযোগ্য বৈকি। উল্লেখ্য, প্রথম ভয়াবহ করোনাকবলিত চীন উহান প্রদেশে মাত্র সাত দিনে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে। অন্যদিকে বসুন্ধরা গ্রুপও মাত্র তিন সপ্তাহে দুই হাজার শয্যার এই হাসপাতাল নির্মাণ করে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। বেসরকারী প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের এই সাফল্যকে দেশের চিকিৎসা সেবার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে হবে অবশ্যই। করোনা মহামারীর এই চরম দুঃসময়ে সরকার নতুন দুই হাজার চিকিৎসক এবং পাঁচ হাজার ৫৪ সিনিয়র স্টাফ নার্স জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে। বিশেষ করে সেই সময়ে যখন রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। একইসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক রোগী সামলাতে গিয়ে সরকারী-বেসরকারী করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। যে কারণে প্রায়ই ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। করোনা রোগের চিকিৎসায় অপরিহার্য পিপিই-মাস্ক-গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর সঙ্কটও দেখা যাচ্ছে। এটি একটি নতুন ব্যাধি, তদুপরি ভয়াবহ সংক্রামক বিধায় দেখা দিয়েছে এই সঙ্কট। করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট পর্যন্ত মজুদ নেই। তদুপরি রয়েছে করোনা রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট উপশমে অক্সিজেনসহ পর্যাপ্তসংখ্যক ভেন্টিলেটরের অভাব। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগের ফলে পর্যায়ক্রমে অবশ্য এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে। পিপিই-মাস্ক উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো। করোনা পরীক্ষায় কিট উৎপাদন করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ভেন্টিলেটর তৈরিতে এগিয়ে এসেছে মিনিস্টার, ওয়ালটন। এসব সংবাদ আশা জাগানিয়া বৈকি। এমতাবস্থায় নতুন চিকিৎসক-নার্স নিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বসুন্ধরার করোনা হাসপাতালটিও এক্ষেত্রে যুক্ত করল নতুন মাত্রা।
×