ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমের সঙ্গে লাইভ আড্ডা

নিজের আত্মবিশ্বাসের গল্প আর ঈদ মোবারক জানালেন কোহলি

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২০ মে ২০২০

নিজের আত্মবিশ্বাসের গল্প আর ঈদ মোবারক জানালেন কোহলি

মিথুন আশরাফ ॥ বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে সেরা ব্যাটসম্যান কে? নিঃসন্দেহে একটি নাম সবার আগে চলে আসবে। সেই ব্যাটসম্যান হচ্ছেন- বিরাট কোহলি। ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক কোহলিকে এবার লাইভ আড্ডায় এনেছেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। লাইভে এসে কোহলিও বাংলাদেশের মানুষকে ‘ঈদ মোবারক’ জানানোর সঙ্গে ব্যাটিং নৈপুণ্যে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার কৌশল জানিয়েছেন। আবার মুশফিকুর রহিমের মতো উইকেটরক্ষকরা যে তার প্রেরণা, তাও জানিয়েছেন। দলকে জেতাতেই সব সময় খেলেছেন কোহলি, তাও বলেছেন। তামিম প্রশ্ন করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরমেট মিলিয়ে মোট ৭০টি সেঞ্চুরি করার সঙ্গে ১৫৩৮৫ রান করা কোহলি জবাব দিয়েছেন। তামিম শুরুতেই জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আমি আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় যখন প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। পরবর্তী দুই-তিন বছরে আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন ব্যাটসম্যানে পরিণত হন। এই সময়ে কি করেছিলেন যা আপনাকে বদলে দিয়েছিল?’ কোহলি জানান, ‘আমি মনে করি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন আসার সময় সবার ভেতরই দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে কিভাবে সামনে এগিয়ে যাব, ক্যারিয়ার কেমন হবে। অভিষেকের পর একটি সিরিজ খেলে দল থেকে বাদ পড়েছিলাম। তারপর আবার ডাক পাই ২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে। সেখানে দুই-তিনটি ম্যাচে আমি ভাল খেলেছিলাম, একটি শতকও ছিল। সেখান থেকে আমার আতœবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম শতক হাঁকানোর পর আমি বিশ্বাস করতে শুরু করি কাজটা আমি লম্বা সময়ের জন্য করতে পারব। ভারতের হয়ে অনেকদিন খেলতে পারব। আমি মনে করি নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচে যদি আপনার মনোভাব ঠিক থাকে, তাহলে সেটার ফল আসবেই। এটাই ছিল আমার সাধারণ প্রক্রিয়া যে আমি যাব এবং যা কিছুই হোক না কেন দলের জন্য খেলব। দলকে জেতানোর চেষ্টা করব। সেখানে পারফর্মেন্স ভাল হলে ভাল, কিন্তু সবসময় দলকে জেতানোই ছিল আমার মূল লক্ষ্য।’ প্রস্তুতি কিভাবে করেন, কতটুকু করেন, এ নিয়ে তামিম প্রশ্ন করতেই কোহলি জানান প্রস্তুতির চেয়ে ফিটনেস এবং ডায়েটের দিকেই বেশি মনোযোগ দেন তিনি। কোহলি বলেন, ‘প্রস্তুতির জন্য আমার কোন নির্দিষ্ট কোন প্যাটার্ন নেই। নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আমি ফলো করি ফিটনেস এবং ডায়েটের বেলায়। কারণ আমি মনে করি ট্রেনিং এবং ডায়েট ধারাবাহিক হওয়া উচিত। কারণ আপনার শরীর যদি সেরা অবস্থানে থাকে এবং মানসিকভাবে আপনি ভাল অনুভব করেন তাহলে প্রতিবারই আপনি নিজের সেরাটা দিতে পারবেন।’ রান তাড়া করার সময় ম্যাচটিকে যেভাবে ভাগ করেন কোহলি, তাও একটি ম্যাচের স্মৃতি তুলে ধরে জানান। সঙ্গে মুশফিকের মতো উইকেটরক্ষকরা যে প্রেরণা হয়ে ধরা দেন, তা বলেন, ‘রান তাড়া করার সময় মানসিক অবস্থা স্বাভাবিকই থাকে। মাঝে মাঝে মুশফিকের মতো অনেকেই পেছন থেকে অনেক কিছু বলে যাতে আমি আরও অনুপ্রাণিত হয়ে যাই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমার কাছে মনে হয় রান তাড়া করা এমন একটি ব্যাপার যেখানে আপনি জানেন আপনার কত রান দরকার এবং কি কি করতে হবে। তাই আমার কাছে এর চেয়ে সহজ সমীকরণ আর কিছুই নেই। দলের হয়ে জেতা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ আর এখানে আমার সামনে সুযোগ রয়েছে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে দেয়ার। তাই আমার জন্য এর চেয়ে সেরা সুযোগ আর কিছু নেই যেখানে আমি দেখতে পাই আমি দলকে জেতাতে পারছি। ৩৭০ কিংবা ৩৮০ রান তাড়া করতে গেলেও কখনও আমার মনে হয় না যে এটা সম্ভব নয়। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হোবার্টে একটি ম্যাচের কথা মনে আছে। সেখানে ৪০ ওভারে আমাদের প্রায় ৩৩০ রানের মতো তাড়া করা লাগত কোয়ালিফাই করার জন্য। বিরতির সময় আমি রায়নাকে বলেছিলাম এই ম্যাচটি আমাদের দুটি ২০ ওভারের ম্যাচে ভাগ করে খেলতে হবে। ৪০ ওভারে কত রান লাগবে সেটা ভুলে আমরা প্রথম ২০ ওভারে দেখব যে কত রান হয়। তারপর শেষ ২০ ওভারে আমরা আরেকটি টি২০ ম্যাচ খেলব। হাতে যদি উইকেট থাকে তাহলে শেষ ২০ ওভারে আমরা ওভারপ্রতি ১২ রান করেও তুলতে পারব। এটা আসলে নির্ভর করবে আপনি কিভাবে চিন্তা করে এগিয়ে যাবেন। যেভাবে আপনি চিন্তা করবেন, সেভাবেই আপনার ব্যাটিং হবে। আর প্রথম যে চিন্তাটা মাথায় আসবে সেটাই ঠিক করে দিবে আপনি কিভাবে খেলবেন। আমি মনে করি রান তাড়া করার ব্যাপারটা আমার স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। মাঝে মাঝে প্রস্তুতি নেয়া লাগে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা স্বাভাবিকভাবেই আসে।’ নিজেকে নিয়ে সবসময়ই আত্মবিশ্বাসী থাকেন কোহলি। সন্দেহ বা অবিশ্বাসের জায়গাই নেই। তাই জানান, ‘সত্যি বলতে, খেলার সময় একেবারেই না। খেলার সময় আমার কখনই নিজেকে নিয়ে সন্দেহ হয়নি। প্রত্যেক মানুষেরই দুর্বলতা থাকে, খারাপ দিক থাকে, নিজেকে নিয়ে সন্দেহও থাকে। আমি মনে করি সবার উচিত শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। নিজেকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যখন মনে হবে এসবের কোন অস্তিত্ব নেই। আমি যদি বিশ্বাস করি আমি যথেষ্ট ভাল, তাহলে আমি যথেষ্ট ভাল। খেলার একটি ভাল দিক হচ্ছে সেখানে আপনি এসব চিন্তাভাবনার সময় পাবেন না। আপনি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিবেন, ব্যাটিং করবেন। দলের কি অবস্থা, আপনাকে দলের জন্য কি করতে হব এসব ভাবনাতেই আপনার এ্যানার্জি চলে যাবে। তাই নিজেকে আমি শুধু বলব আমি যথেষ্ট ভাল। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে এটা ধীরে ধীরে চলে যাবে। আমাদের কাজটা হলো শুধু নিজেকে নিয়ে স্পষ্ট থাকা।’
×