ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেড ক্যাটাগরির ঝুঁকিতে পড়েছে ব্যাংক

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২০ মে ২০২০

জেড ক্যাটাগরির ঝুঁকিতে পড়েছে ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি লভ্যাংশ সংক্রান্ত নির্দেশনার ফলে সর্বনিম্ন জেড ক্যাটাগরির ঝুঁকিতে পড়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় সব ব্যাংক। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের একক বা সমন্বয়হীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। লভ্যাংশ অনুমোদনের ১ মাসের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে তা বিতরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে প্রদান করা যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করেছে। গত ১১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না। কিন্তু ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশনে ১ মাসের মধ্যে লভ্যাংশ প্রদানের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় জেড ক্যটাগরিতে পতিত হবে। ফলে বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে শুধুমাত্র এবি ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকলেও বর্তমানে প্রায় সবগুলো এই ঝুঁকিতে রয়েছে। শেয়ারবাজারে ৩০টি ব্যাংক তালিকাভুক্ত সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ লভ্যাংশ নিয়ে নির্দেশনা জারির আগে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেনি। গুরুত্ব পায়নি বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তির বিষয়টি। অথচ ওই ৩০টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একক সিদ্ধান্ত আবারও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছে। এতে অন্যান্যবারের মতো এবারও বলির স্বীকার হবে সাধারণ বিনিয়োগকারী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ লভ্যাংশ বিতরণের নির্দেশনা জারির আগে কমিশনের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা করেছে বলে আমার জানা নেই। দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি এএসএম শায়খুল ইসলাম বলেন, তালিকাভুক্ত ব্যাংকের বিষয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। অন্যথায় বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশনস ২০১৫ এর ২৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, লভ্যাংশ অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে প্রদান করতে হবে। আর পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লভ্যাংশ প্রদানের কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট কমিশন ও ডিএসইতে দেয়ার জন্য একই আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে। অন্যথায় জেড ক্যাটাগরিতে পতিত হবে বলে ডিএসই সেটেলমেন্ট অব ট্রানজেকশন রেগুলেশন ২০১৩ এর ৭(১) ধারায় বলা হয়েছে। এই আইনে চলতি বছরে ফু-ওয়াং সিরামিককে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়েছে। এ কোম্পানির পর্ষদের ঘোষিত ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদিত হয়। এ হিসাবে পরবর্তী ১ মাস বা ২৩ জানুয়ারির মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বিতরণের বাধ্যবাধকতা ছিল। আর লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে পরবর্তী ৭ কার্যদিবস বা ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ফু-ওয়াং সিরামিক তা পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় জেড ক্যাটাগরিতে নেমে যায়। এরইমধ্যে তালিকাভুক্ত ৯ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের ব্যবসায় লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সবগুলোর পর্ষদ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে। এছাড়া লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য এজিএমের তারিখ নির্ধারণ করেছে। ওইসব তারিখে ব্যাংকগুলোর এজিএম অনুষ্ঠিত হলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতিত হবে। তবে ৩টি ব্যাংক এজিএম আপাতত স্থগিত করেছে। এখন স্থগিত করলেও কোম্পানি আইনে নির্দিষ্ট সময়ে এজিএম করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ৮১(১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক কোম্পানি প্রতি ইংরেজী পঞ্জিকা বছরে এজিএম করবে। এছাড়া এক এজিএম থেকে আরেক এজিএমের মধ্যে ব্যবধান ১৫ মাসের বেশি হবে না। তাই চাইলেই লভ্যাংশ অনুমোদন বিলম্বিতও করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় নগদ লভ্যাংশ বিতরণে সময় বেঁধে দিলেও বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ফলে কোন ব্যাংক যদি শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা, তাহলে ওই ব্যাংকের জেড ক্যাটাগরিতে পতিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। জেড ক্যাটাগরিতে পতিত হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন করার ক্ষেত্রে ভোগান্তি বাড়বে। এখন বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার (জেড ক্যাটাগরি ব্যতীত) ক্রয়ের ৩য় কার্যদিবসেই বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু জেড ক্যাটাগরিতে পতিত হলে, বিক্রি করতে অপেক্ষা করতে হবে ১০ কার্যদিবস। ফলে ব্যাংক খাতের শেয়ারে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। যা বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতিসহ পুরো শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
×