ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডব্লিউএইচও ‘চীনের পুতুল’

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২০ মে ২০২০

ডব্লিউএইচও ‘চীনের পুতুল’

করোনা ইস্যুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএউচওকে ফের চীনের পুতুল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। খবর বিবিসি ও এএফপির। এদিকে প্রথম বারের মতো সোম ও মঙ্গলবার ভার্চুয়াল বিশ্ব সম্মেলন করেছে ডব্লিউএইচও। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনার কারণে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডব্লিউএইচও’র এই সম্মেলন সাধারণত তিন সপ্তাহ ধরে চলে। কিন্তু এবারে তা কেবলমাত্র সোম ও মঙ্গলবার এ দুদিন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কেবলমাত্র কোভিড-১৯ এর ওপর আলোকপাত করা হয়। বিশ্বে মাত্র কয়েক মাসে কোভিড-১৯ ভাইরাস হানা দেয়। এতে প্রায় ৪৭ লাখ লোক আক্রান্ত ও ৩ লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা গেছে। সোমবার দুপুরে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্যরা অংশ নেন। ডব্লিউএইচও প্রধান টেডরস আধানম গেব্রিয়াসিস শুক্রবার বলেন, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিলেন। চীনে গত ডিসেম্বরে করোনার প্রাদুর্ভাব প্রথম শুরু হয়। ট্রাম্প বারবারই চীনের ল্যাব থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি বলে অভিযোগ করে আসছেন। এছাড়া ট্রাম্প প্রথমদিকে এই মহামারীকে গুরুত্ব না দেয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে ডব্লিউএইচও’কে তহবিল দেয়া বন্ধ করে দেন। তবে এসব টানাপোড়েন সত্ত্বেও বিভিন দেশ আশা করছে মহামারী মোকাবেলায় যৌথ আহ্বান সম্বলিত সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ সম্ভব হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন উত্থাপিত প্রস্তাবে কোভিড সঙ্কট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক উদ্যোগের নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও ব্যাপক মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ের প্রধান নোরা কোনিং জানান, এই প্রস্তাবের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। কয়েকদিনের আলোচনা শেষে প্রস্তাব অনুমোদনে আপাতত সমাঝোতা হয়েছে বলে তিনি জানান। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনা মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা খুবই দুঃখজনক। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বছরে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে। চীন দেয় বছরে ৩৮ মিলিয়ন ডলার। অথচ তাদের কার্যক্রম ‘চীনকেন্দ্রিক’। তারা চীনের পুতুল। করোনাভাইরাস ইস্যুতে এর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। গত ৮ মে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, সংস্থাটি স্রেফ চীনের পুতুলে পরিণত হয়েছে। চীন যা করছে তা তাদের কাছে সবসময় ঠিক মনে হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি মনে করি না এটি সচেতনভাবে করা হয়েছে। হয়তো অযোগ্যতার কারণে হয়েছে। ভাইরাসটি হয়তো ছড়িয়ে পড়েছে। তারা জানতো না কীভাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫০ মিলিয়নের জায়গায় চীন দেয় বছরে ৩৮ মিলিয়ন ডলার। এরপরও বেজিং তাদের বলে দেয় কী করতে হবে। এটা হতে পারে না। মহামারীর জন্য ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চীনের ব্যর্থতার অভিযোগে দেশটিকে শায়েস্তা করার উপায় খুঁজছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভাইরাসটির উৎস অনুসন্ধানে মার্কিন বিজ্ঞানীদের দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটন। তবে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বেজিং। যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারী করোনাভাইরাসে নতুন করে আরও ৮২০ জন প্রাণ হারিয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৯০ হাজার জনে দাঁড়াল। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সোমবার সর্বশেষ এ মৃতের এ সংখ্যা গত ১০ মে’র পর থেকে সর্বনিম্ন ছিল। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মারা যাওয়া লোকের সংখ্যা ছিল ৭৭৬। এ বৈশ্বিক মহামারীতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
×