স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ করোনা সতর্কতায় সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে রাজশাহী মহানগরীতে আবারো কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীজুড়ে অবস্থান নিয়েছে তারা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে রাজশাহী নগরীর সব মার্কেট। ফুটপাত থেকেও সব ধরনের ব্যবসায়ীদের উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কড়াকড়ি করা হচ্ছে রিকশা-অটোরিকশা চলাচলে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও রাজশাহীতে জমে উঠেছিল ঈদবাজার। এটি বন্ধ করতে মঙ্গলবার সকাল থেকে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। এতে স্বস্তি ফিরেছে সচেতনমহলে। তারা বলছেন, গত কয়েকদিন মার্কেট-দোকানপাট খোলার কারণে শহরে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কারণ মার্কেটে সামাজিক দূরত্বের কিছুই মানা হচ্ছিল না। গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে ঈদের কেনাকটায় মেতেছিলেন অনেকে। এখন প্রশাসনের তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন শহরের সচেতন নাগরিকরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের এমন ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন তারা।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে আগেই সারাদেশের মার্কেট-দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গত ১০ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত আসে। সেদিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট খুলেছে। তবে রাজশাহী শহরকে নিরাপদ রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় সভা করে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী মহানগরী সকল মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান। কিন্তু রাজশাহী নগরীর মার্কেটগুলো নানা কৌশলে খোলা হচ্ছিল।
সামাজিক দূরত্ব না মেনেই ব্যবসা করছিলেন দোকানীরা। নগরীর আরডিএ মার্কেটের প্রধান ফটক বন্ধ রেখে ভেতরে দোকান খুলছিলেন ব্যবসায়ীরা। গলিপথ দিয়ে মার্কেটেও যাচ্ছিলেন প্রচুর ক্রেতা। আবার সাহেববাজার কাপড়পট্টি এলাকায় দোকানের সাটার তুলে ক্রেতা ঢোকানোর পর সাটার নামিয়ে দেয়া হচ্ছিল। কেনাকাটা শেষ হলে সাটার তুলে বের করে দেয়া হচ্ছিল ক্রেতাকে। রাস্তায়ও বের হচ্ছিল অজস্র মানুষ। রিকশা-অটোরিকশার যানজট দেখা দিয়েছিল শহরে। কোথাও সামাজিক দূরত্বের কিছুই মানা হচ্ছিল না।
এ অবস্থায় সর্বশেষ সোমবার বিকালে জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় খাবার ও কাঁচাবাজার ছাড়া রাজশাহীর সব দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকেই মাঠে নামেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মাঠে নামেন। তারা নগরীর সাহেববাজার এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ফুটপাত থেকে হকারদের তুলে দেয়া হয়।
তবে সকাল থেকে প্রধান ফটকে পর্দা টাঙিয়ে ভেতরে দোকান খুলেছিলেন আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রনী খাতুন সেখানে অভিযানে যান। এ সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করার অপরাধে ‘রাজ্জাক বস্ত্রালয়’নামে একটি কাপড়ের দোকানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি। এটি দেখে মার্কেটের অন্য ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দেন।
জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, জনসমাগম ঠেকানো যাচ্ছিল না বলেই জনস্বার্থে দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অভিযান শুরু হয়েছে। রাজশাহীর সকল উপজেলাতেও একইভাবে মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ করা হচ্ছে। তবে কৃষিপণ্য, কাঁচাবাজার, ওষুধ, জরুরি সেবা ও খাবারের দোকান এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহীতে গত ১২ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২১ জন। এর মধ্যে ছয়জন সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছেন একজন। গোদাগাড়ী ও চারঘাট উপজেলা ছাড়া জেলার সবখানেই ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। রাজশাহী মহানগরীতে শনাক্ত হয়েছেন একজন। রাজশাহী মহানগরীর খ্রিষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার এক করোনা রোগী চিকিৎসাধীন।