ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রেসলেট উপহার হিসেবেই ফেরত পাবেন মাশরাফি

প্রকাশিত: ০১:০৮, ১৯ মে ২০২০

ব্রেসলেট উপহার হিসেবেই ফেরত পাবেন মাশরাফি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ১৮ বছর আগে এক বন্ধুর মামাকে দিয়ে একটি ব্রেসলেট বানিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এরপর থেকে সেই ব্রেসলেট নিত্যসঙ্গী হয়ে ছিল তার। সার্বক্ষণিক হাতে পরে থাকতে দেখা গেছে সেটি তাকে। সেই ব্রেসলেটের প্রতি ভালবাসা ত্যাগ করে নিলামে তুলেছিলেন করোনাভাইরাসে অসহায় হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তায় তহবিল গড়তে। ৫ লাখ টাকা ভিত্তিমূল্যের সেই ব্রেসলেট পেয়েছে অভূতপূর্ব মূল্যমান। রবিবার রাতে শেষ হওয়া নিলামে শেষ পর্যন্ত ৪২ লাখ টাকায় সেটি কিনেছে বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী মমিনুল ইসলাম নিলামে অংশ নেন। ব্রেসলেটটি কিনে মাশরাফিকেই উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। মাশরাফিও ‘অকশন ফর এ্যাকশনের’ লাইভ সেশনে এসে জানান, অনেকে ব্রেসলেটটিকে রুপার ভাবলেও সেটি আসলে স্টিলের তৈরি। এ সময় তিনি নিজের ক্যারিয়ারের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন। ব্রেসলেট বিক্রির সম্পূর্ণ অর্থ করোনা মোকাবেলায় নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনে জমা হবে। বাংলাদেশের হয়ে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ব্রেসলেট পরে খেলতে নেমেছেন মাশরাফি। সেই ব্রেসলেট ১৮ বছর আগে বানিয়ে নেয়া। তারপর থেকে যেন সেটি মাশরাফির শরীরেরই অংশ হয়ে গিয়েছিল। এই ব্রেসলেটের মায়া ভুলে করোনা মোকাবেলায় তহবিল গড়তে গিয়ে তা নিলামে তুলেছিলেন মাশরাফি। টেস্ট ও আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে ইতোমধ্যেই পাট চুকে ফেলেছেন মাশরাফি। সর্বশেষ গত মার্চে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ শেষে নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়াতে হয় তো এই ফরমেটেও আর দেখা যাবে না মাশরাফিকে। তাই হয়তো ব্রেসলেটের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশের মানুষকে সহায়তা করতে। সেই চিন্তাটা সফল হয়েছে তার। সাধারণ স্টিলের তৈরি ১৮ বছরের পুরনো ব্রেসলেটের ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৫ লাখ টাকা। সেটি অবিশ^াস্য মূল্য পেয়েছে। ৪২ লাখ টাকায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম সফল অধিনায়ক মাশরাফির ব্রেসলেটটি কিনে নেয় বিএলএফসিএ। নিশ্চিত হয় যে মাশরাফির সঙ্গে ব্রেসলেটটির সম্পর্ক এখানেই শেষ। কিন্তু নিলামের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘অকশন ফর এ্যাকশন’ এর লাইভ সেশনে এসে মমিনুল এই ঘোষণা দিয়ে জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়ক মাশরাফিকেই ব্রেসলেটটি উপহার দেয়া হবে। বিএলএফসিএয়ের পক্ষ থেকে লাইভে এসে মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৪০ লাখ টাকা দিয়ে ব্রেসলেটটি কিনলাম। কিন্তু এর সঙ্গে আমরা আরও ৫ শতাংশ দেব। অর্থাৎ আমরা মোট দেব ৪২ লাখ টাকা। তবে, আমরা ব্রেসলেটটি আবার মাশরাফিকে উপহার দিলাম। আমাদের প্রিয় অধিনায়কের ব্রেসলেট তার কাছেই থাকবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা অনুষ্ঠান করে ব্রেসলেটটি মাশরাফির হাতে তুলে দেব।’ ব্রেসলেট বিক্রির টাকা চলে যাবে মাশরাফির নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনে। সেখান থেকে পুরো টাকাটাই করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যয় করা হবে। লাইভ সেশনে আসেন মাশরাফি নিজেও। সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে এটিকে গণ্য করতেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘অনেকেই ভাবছেন ব্রেসলেটটি রুপার। কিন্তু এটি স্টিলের ব্রেসলেট। আমার খুব প্রিয়। এই ব্রেসলেট বিক্রির সম্পূর্ণ টাকা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে। শুধু নড়াইল না, নড়াইলের বাইরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমি সহায়তা করার চেষ্টা করব।’ এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন মাশরাফি। তেমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি পারতাম তাহলে শৈশবে ফিরে যেতে চাইতাম। সেখানে স্কুল, স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা, আড্ডাবাজি- এগুলোতে ফিরে যেতে চাইতাম। দ্বিতীয় যেটা চাইতাম, সেটা হচ্ছে ক্যারিয়ারের শুরুতে যদি ফিরে যেতে পারতাম! আলহামদুলিল্লাহ এমনিতেই ক্যারিয়ারে যা অর্জন করেছি, সেটা অনেক। তবুও ক্যারিয়ারের শুরুটায় ফিরে যেতে পারলে আরও ভালভাবে নিজেকে ঘুছিয়ে নিতে পারতাম। তৃতীয়ত যেটা, সেটা হচ্ছে পরিবারের কাছেই ফিরে যেতে চাই।’
×