ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দাম কমেনি মসলার বরং বেড়েছে

প্রকাশিত: ০০:০৬, ১৯ মে ২০২০

দাম কমেনি মসলার বরং বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়া হলেও খুচরা বাজারে তার কোন প্রভাব পড়েনি। বরং খুচরা বাজারে এক মাস আগের তুলনায় সব ধরনের মসলা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, মাসের ব্যবধানে সব ধরনের মসলার দাম কমেছে। মসলার দাম না কমার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসলার দাম কমার তথ্য গণমাধ্যমের সংবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে পাইকারি বাজারে কোন ধরনের মসলার দাম কমেনি। করোনাভাইরাস প্রকোপের মধ্যে সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে যায়, এখনও সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন করা হলে বন্দরে মাল আটকে যায়। এতে মসলার দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এখন মাল আসা স্বাভাবিক হয়েছে। যে কারণে জিরা বাদে সব ধরনের মসলার দাম কমেছে। তাদের দাবি, খুচরা ব্যবসায়ীরা সঠিক কথা বলছেন না। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী আগের বাড়তি দামে কেনা মেমো দোকানে রেখে দেন। পরবর্তীতে কম দামে কেনার পরও তারা তা সমন্বয় করেন না। কম দামে কেনা পণ্যের মেমো তারা সরিয়ে রাখেন। খুচরা বাজারে মসলার দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে গত ৫ মে খুচরা বাজারে মসলা গরম, পাইকার বলছে দাম কমেছে শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ১৩ মে গরম মসলার পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর ঘোষণা দেয়। তবে এরপর একে একে পাঁচদিন কেটে গেলেও পাইকারি বাজারে কোন ধরনের মসলার দাম কমেনি। বরং দাম বাড়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর মৌলভীবাজারের মসলার পাইকারি প্রতিষ্ঠান রুবেল ট্রেডিংয়ের মালিক মোঃ রুবেল গত ৫ মে জানিয়েছিলেন, পাইকারিতে জিরা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২৯০০ থেকে ২৯৫০ টাকা। দারুচিনি ৩১০ থেকে ৩৭০ টাকা এবং লবঙ্গ ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সোমবার (১৮ মে) মসলার দামের বিষয়ে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী জানান, আগের তুলনায় এখন সব ধরনের মসলার দাম কমেছে। জিরার কেজি ৩৪০ থেকে ৩৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি চীনেরটা ৩১০ থেকে ৩১৫ টাকা এবং ভিয়েতনামেরটা ৩৬০ থেকে ৩৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লবঙ্গ ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা এবং এলাচ ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি মসলার দাম কমেছে এমন দাবি করলেও বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকা রুবেলের ৫ মে ও ১৮ মে দেয়া দামের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাস্তবে কোন মসলার দাম কমেনি। বরং আগের তুলনায় কিছু মসলার দাম বেড়েছে। ৫ মে দেয়া জিরা ও দারুচিনির দামের তথ্য তুলে ধরা হলে এই ব্যবসায়ী বলেন, জিরার দামটা স্থির রয়েছে। তবে বাকি সব মসলার দাম কমেছে। করোনার কারণে জিরার কেজি ৪০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, এখন সেটা ৩৪৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া চীনের দারুচিনি ৩৩৫ টাকা, ভিয়েতনামের দারুচিনি ৩৮৫ টাকা, লবঙ্গ ৭২০ টাকা, এলাচ ৩২৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি উঠেছিল। এখন এর থেকে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এ সময় তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমিও উপস্থিত ছিলাম। ওই বৈঠকের পর জিরা বাদে সব মসলার দামই কিছুটা কমেছে। তবে খুচরা বাজার তো আমাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তাছাড়া যেসব খুচরা ব্যবসায়ী বাকিতে মাল কেনেন, তাদের কাছ থেকে অনেক সময় পাইকার কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি রাখে। তিনি আরও বলেন, খুচরা পর্যায়ে মসলার দাম কমানোর জন্য অভিযান চালানো উচিত। কী দামে তারা কিনছে এবং কী দামে বিক্রি করছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। তবে আমাদের ধারণা খুচরা ব্যবসায়ীরা কম দামে মাল কেনার পরও, আগের বেশি দামে কেনা মেমো দোকানে রেখে দেন। কেউ দেখতে চাইলে সেই মেমো দেখান। এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সব ধরনের মসলাই এক সপ্তাহ আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। জিরার কেজি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, লবঙ্গ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, এলাচ ৩৬০০ থেকে ৪২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মসলার দাম বাড়ার চিত্র উঠে এসেছে সরকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া দারুচিনির ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং এলাচের ৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। তবে লবঙ্গের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রামপুরার ব্যবসায়ী জহির বলেন, গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কমবে এমন সংবাদ আমরা দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে পাইকারি বাজারে কোন মসলার দাম কমেনি। আগের মতোই বাড়তি দামে ১৭ মে আমরা মসলা কিনছি। ঈদের আগে মসলার দাম আর কমবে বলে মনে হয় না। একই ধরনের কথা বলেন খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী সোহেল। তিনি বলেন, জিরা, দারুচিনি, এলাচ কোন কিছুর দাম গত ১০ দিনের মধ্যে কমেনি। সবকিছুর দাম বাড়তি। ফলে আমাদেরও বেশি দামে মসলা বিক্রি করতে হচ্ছে।
×