ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক শ’ পরীক্ষায় করোনায় আক্রান্ত ১৬ জন

সংক্রমণের হার বাড়ছে, বিপজ্জনক পরিস্থিতির আভাস

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৯ মে ২০২০

সংক্রমণের হার বাড়ছে, বিপজ্জনক পরিস্থিতির আভাস

রাজন ভট্টাচার্য ॥ প্রতিদিন আক্রান্ত আর মৃত্যুর দিক বিবেচনায় রেকর্ড ভাঙছে করোনা। এ যাবত সর্বোচ্চ এক হাজার ৬০২ জন আক্রান্ত ও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে সোমবার। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ৮ মার্চ প্রথম দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। প্রায় আড়াই মাসের মধ্যে চলতি মাস অর্থাৎ গেল ১৮ দিনে শনাক্ত হয়েছে ১৬ হাজার ২০৩ রোগী। বর্তমানে মোট রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৭০ জন। আর মোট ৩৪৯ জন মৃত্যু হলেও চলতি মাসেই মারা গেছে ১৮৭ জন। অর্থাৎ মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি হয়েছে চলতি মাসেই। আক্রান্তের বেশিরভাগই এ মাসেই। সব মিলিয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় সামনের দিনগুলোতে বিপজ্জনক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই প্রেক্ষাপটে আনুষ্ঠানিক লকডাইন ঘোষণার পাশাপাশি যানবাহন ও মানুষ চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গেল ডিসেম্বরের শেষদিকে চীন থেকে শুরু কোভিড-১৯ এখন গোটা বিশ^কে চোখ রাঙাচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যু আর আক্রান্তের ঢল। বৈশি^ক এই মহামারী থামাতে দেশে দেশে নেয়া হয়েছে নানামুখী০ ব্যবস্থা। সে তুলনায় আমাদের দেশে কঠোর ব্যবস্থার মধ্যে কারফিউ, জরুরী অবস্থা বা পুরোপুরি লকডাউন কোনটাই হয়নি। এই যখন অবস্থা তখন করোনা প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক নিষেধাজ্ঞা শিথিল বা কোন কোন ক্ষেত্রে তুলে নেয়ায় সঙ্কটের মাত্রাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রোগী ও মৃত্যু। বিশেষ করে ১০ মে থেকে মার্কেট, শপিংমল ও দোকান খোলার ঘোষণার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম নৌরুট মাদারীপুর জেলার শিবচরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের জন্য ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই নৌরুটটিই সহজতর। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এ নৌরুটে গত মার্চ মাসের ২৪ তারিখ থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে জরুরী প্রয়োজনে ফেরি চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিন ধরেই ঘাট এলাকায় ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। সব মিলিয়ে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। সড়ক মহাসড়কে চলছে যানবাহন। পণ্যবাহী পরিবহন দিয়ে মানুষ আনা নেয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক চরিত্রে ফিরেছে রাজধানী ঢাকা। বাস ছাড়া চলছে সব ধরনের যানবাহন। বাংলাদেশের সংক্রামক রোগ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর অন্যতম উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে বাড়ছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কলকারখানা এবং দোকানপাট খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে যে শৈথিল্য দেখা গেছে সে কারণে হয়ত সংক্রমণের হার কিছুটা বেড়েছে। এটার ফল দেখতে আমাদের হয়ত সামনের সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। আমরা ঈদের নামে যেন কোন শৈথিল্য না দেখাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিদিন যাতে ১৫ হাজার টেস্ট করা যায়, সে লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছে। এ মাসের মধ্যেই প্রতিদিন ১০ হাজার টেস্টের লক্ষ্য পূরণ করতে চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু তারপরেও জনসংখ্যার তুলনায় টেস্টের এ সংখ্যা নগণ্য। প্রায় আড়াই মাসেও দিনে ১০ হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ১৮ দিনে রেকর্ড আক্রান্ত ও মৃত্যু ॥ প্রাই আড়াই মাসের মধ্য সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে গেল ১৮ দিনে। সোমবার সারাদেশে মিলিয়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৬০২ জন। মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। তাছাড়া লক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের হিসাবে দেখা গেছে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৬ জন কোভিড-১৯ মিলছে। এর বাইরে ১৭ মে এক হাজার ২৭৩ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১৪ জনের, ১৬ মে ৯৩০ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১৬ জনের, ১৫ মে এক হাজার ২০২ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১৫ জনের, ১৪ মে এক হাজার ৪১ জন আক্রান্ত, মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের, ১৩ মে এক হাজার ১৬২ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১৯, ১২ মে ৯৬৯ আক্রান্ত, মৃত্যু ১১ জনের, ১১ মে এক হাজার ৩৪ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের, ১০ মে আক্রান্ত ৮৮৭, মৃত্যু ১৪ জনের। এছাড়াও ৯ মে আক্রান্ত ৬৩৬, মৃত্যু ৮, ৮ মে আক্রান্ত ৭০৯, মৃত্যু ৭, ৭ মে ৭০৬ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ২৩, ৬ মে ৭৯০ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৩, ৫ মে ৭৮৬ আক্রান্ত, একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৪ মে ৬৮৮ জন আক্রান্ত ও পাঁচজনের মৃত্যু, ৩ মে ৬৬৫ জন আক্রান্ত ও দুজনের মৃত্যু, ২ মে ৫৫২ জন আক্রান্ত ও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মে মাসের প্রথম দিনে ৫৭১ জন আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয়েছে দুজনের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত অন্যতম উপদেষ্টা আবু জামিল ফয়সাল বলেন, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় এখন এটা কি বেড়ে যাবে? বাড়তেও পারে। পার্সেন্টেজটা দিয়ে খুব বেশি কিছু নির্ধারণ করা যাবে না। সংক্রমণের বর্তমান ধারা বজায় থাকলে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছুটা হলেও চেষ্টা করা যাবে, অন্যথায় পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, যদি এই সপ্তাহে আর একটা লাফ না দেয়, তাহলে শহরাঞ্চলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও একটু বেশি সময় পাওযা যাবে। সব কিছু মিলিয়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য সব পক্ষ থেকেই আরও কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।
×