ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় জীবন বাঁচবে

প্লাজমায় এ্যান্টিবডি মিলেছে, দেশেও প্রয়োগের আশা

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৯ মে ২০২০

প্লাজমায় এ্যান্টিবডি মিলেছে, দেশেও প্রয়োগের আশা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা প্রতিরোধে সংগ্রহ করা প্লাজমায় এ্যান্টিবডির উপস্থিতি পেয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। এতে করে শত বছরের পুরাতন এই চিকিৎসা পদ্ধতি দেশেও প্রয়োগের আশা জেগেছে। প্লাজমা থেরাপির এই প্রক্রিয়া সফল হলে করোনা আক্রান্তদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্যই করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষদের প্লাজমা দান করার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ প্রক্রিয়ার সমন্বয়ক ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজির অধ্যাপক বরেন্য চিকিৎসক এম এ খান বলেন, প্লাজমা দানের বিষয়ে এক ধরনের সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এটি পুরোপুরি পাশ^প্রতিক্রিয়া মুক্ত। এটি দিলে শরীরের কোন ক্ষতিও হবে না। একজন মানুষ যেভাবে রক্ত দিয়ে থাকেন একইভাবে তারা প্লাজমাও দেবেন। তবে এ ধরনের চিকিৎসায় করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের খুব একটা সাড়া না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তিনি করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষদের প্লাজমা দানের আহ্বান জানান। গত শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে দু’জন চিকিৎসক প্লাজমা দান করেন। সোমবার ওই প্লাজমা পরীক্ষার পর তাতে এ্যান্টিবডি পাওয়ার কথা জানায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। এতে করে এই প্লাজমা আক্রান্ত মানুষের শরীরে দিলে তার প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজকে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের গবেষণার জন্য ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছে। তবে আপদকালীন সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল দুই মাসের মধ্যে গবেষণা শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ আগামী জুনের শেষেই এই চিকিৎসা পদ্ধতির সফলতা নিয়ে প্রতিবেদন দেবেন তারা। তখন করোনা আক্রান্ত সকল মানুষকে প্লাজমা থেরাপি দিতে হলে একটি প্লাজমা ব্যাংক গঠন করার প্রয়োজন পড়বে। একইসঙ্গে সামাজিকভাবে করোনা জয়ীদের উদ্ভুদ্ধ করাও প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। যেভাবে সাধারণ মানুষ মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন একইভাবে প্লাজমা দান করতে করোনা জয়ীরা এগিয়ে আসলে মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। কেউ ভাইরাস আক্রান্ত হলে তার শরীরে এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা এ্যান্টিবডি গড়ে ওঠে। মানুষের রক্তরস অর্থাৎ রক্ত কনিকাবাদে যে হলুদ অংশ অর্থাৎ প্লাজমার মধ্যেই থাকে সেই এ্যান্টিবডি। আক্রান্ত ব্যক্তি সেরে ওঠার পরও তার শরীরে এই এ্যান্টিবডি থেকে যায়। সেরে ওঠা ব্যক্তির তার শরীর থেকে এই প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দিলে ওই ব্যক্তির শরীরেও একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এতে করে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়া সম্ভব হতে পারে। প্লাজমা থেরাপি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে চীনের এমন দাবির পর বিভিন্ন দেশ প্লাজমা থেরাপি দেয়া শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ভারত, ইতালি এবং স্পেনসহ বিভিন্ন দেশ প্লাজমা থেরাপি সফলভাবে প্রয়োগ করছে। দেশেও এই প্রক্রিয়া শুরু করার মতো রসদ পেলেন চিকিৎসকরা। একজনের শরীর থেকে নেয়া প্লাজমা দুই থেকে তিন জনের শরীরে দেয়া যায়। অর্থাৎ আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠা কোন ব্যক্তির প্লাজমায় অন্তত তিনজনের প্রাণ বাঁচতে পারে। এজন্য করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা সেরে উঠেছেন সবার আগে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। যদি হতাশার কথা হচ্ছে প্লাজমা দানে করোনা আক্রান্তদের খুব একটা আগ্রহ না থাকায় প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের মধ্যে যারা আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেব বলছে দেশে করোনা আক্রন্তের সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৭০ চন । আর এরমধ্যে এই রোগ থেকে মুক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৮৫ জন। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৪৯ জন। অর্থাৎ এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৮ হাজার ৯৩৬ জন। প্রতিদিন আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। সঙ্গত কারণে এখন করোনা জয়ীরা প্লাজমা দান করলে দেশের সকল মানুষের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন যাদের শরীরে সংক্রমণের মাত্রা বেশি শ^াসকষ্ট হচ্ছে অথবা কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে তাদেরকেই কেবল এশন প্লাজমা দেয়া হবে। এছাড়া যাদের সংক্রমণের মাত্রা কম তাদের অন্য উপায়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। প্লাজমা থেরাপির এই প্রয়োগে শতভাগ মানুষকে বাঁচানো সম্ভব না হলেও গত এক শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে আশা জাগানোর মতো ফল দিয়ে আসছে। এখন দেখার বিষয় দেশে এটি কতটা সফল হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত শতকের শুরুর দিকে ১৯১৮ সালে স্পানিশ ফ্লু এবং ১৯৩০ সালে সারাবিশে^ হাম মহামারী আকারে দেখা দেয়। ওই সময়ও প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছিল। এছাড়া সার্স, মার্স, ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতেও প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ শুরু হয়েছিল। সাধারণত টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে মানুষকে সুস্থ করে তোলার এই প্রচেষ্টা চালানো হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এ ধরনের ভাইরাস প্রতিরোধে প্রথম ধাপ প্লাজমা থেরাপি এরপর আসে টিকা আরও পরে আসে প্রতিষেধক। এখন গোটা বিশে^র এই ক্রান্তিকালে সবগুলো পদ্ধতি নিয়েই কাজ চলছে। প্রসঙ্গত দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ৪৫ জনের ওপর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হবে। এই ৪৫ জনকে পর্যবেক্ষণে রেখে এই পদ্ধতির সফলতা দেখা হবে। এটি সফল হলে অন্যরোগীদেরও প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হবে। তবে এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল শেষ হবে আগামী জুনের শেষদিকে। তখনই বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ হবে কি না বলা সম্ভব হবে।
×