ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিগারেটে দুটি মূল্যস্তর এবং তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ দাবি বাস্তবায়ন করা হলে ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে

কোভিড মোকাবেলায় তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধির প্রস্তাব

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১৮ মে ২০২০

কোভিড মোকাবেলায় তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধির প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তামাককে করোনা সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে। ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং শ্বাসজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে যে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই সতর্কতা আমলে নিলে দেশে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি তামাক ব্যবহারকারী মারাত্মকভাবে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তামাকের সহজলভ্যতা এবং ত্রুটিপূর্ণ কর কাঠামোই এর প্রধান কারণ। তামাকের দাম বেশি হলে তরুণ জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত হয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হয়। তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে রবিবার প্রজ্ঞা এবং এ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন এসিডি, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ইপসা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এবং বিটা ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে। এই বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা জানি যেকোনভাবে তামাক সেবন স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং এই কোভিড-১৯ মহামারী আবারও বুঝিয়ে দিল সুস্থ থাকার জন্য তামাক পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ কতটা জরুরী। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাক ব্যবহারের ক্ষতির শিকার বিপুলসংখ্যক মানুষ বর্তমানে মারাত্মকভাবে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছে। করোনার অভিঘাত কাটিয়ে উঠার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সুস্থ সমাজ গঠন ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য তামাকমুক্ত জাতীয় পরিবেশ অত্যন্ত জরুরী। তাই আসন্ন বাজেটে সকল তামাক পণ্যের কর ও মূল্য বাড়িয়ে তরুণ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশ এখন তরুণদের দেশ। এই তরুণদের ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যত বাংলাদেশের উন্নতি। সেজন্য তামাকের মতো স্বাস্থ্য হানিকর পণ্য থেকে তরুণ সমাজকে দূরে রাখতে তামাক পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করে ধূমপান সামগ্রীর দাম তরুণ প্রজন্মের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। পাশাপাশি তরুণ এবং শিক্ষার্থীদের তামাকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চালাতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের বিদ্যমান চারটি মূল্যস্তর বিলুপ্ত করে দুটি নির্ধারণ করা দরকার। কারণ একাধিক মূল্যস্তর এবং বিভিন্ন দামে সিগারেট ক্রয়ের সুযোগ থাকায় ভোক্তা স্তর পরিবর্তন করার সুযোগ পায়। ফলে তামাক ব্যবহার হ্রাসে কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করে না। তামাক খাত থেকে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং তামাক পণ্যের ব্যবহার কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমানোর জন্য একটি সহজ ও শক্তিশালী তামাক করনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরী বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলায় তামাক কর সংস্কার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। এক্ষেত্রে তামাক পণ্যের জন্য নির্ধারিত সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর আকারে আরোপ করা যেতে পারে এবং অন্যান্য কর পদক্ষেপের সঙ্গে সব ধরনের তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা যেতে পারে। সবমিলিয়ে, তামাক-কর বিষয়ক এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব এবং সারচার্জ থেকে আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব হবে। এই অর্থ সরকার তামাক ব্যবহারের ক্ষতি হ্রাস, করোনা মহামারী সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যয় এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করতে পারবে।
×