ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএমপির কঠোর নির্দেশনা

ঢাকার প্রবেশ পথে ফের কঠোর অবস্থানে পুলিশ

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১৮ মে ২০২০

ঢাকার প্রবেশ পথে ফের কঠোর অবস্থানে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়া ঠেকাতে আবারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। রাজধানীর চারদিকের প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তায় বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নিতান্তই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢাকার বাইরে যেতে বা আসতে দেয়া হচ্ছে না। ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বলেছে, ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়া ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এর কোন বিকল্প নেই। ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেকপোস্টের কার্যকারিতা আরও বাড়ানো হয়েছে। অতি জরুরী ছাড়া কাউকে ঢাকার বাইরে যেতে না দিতে বলা হয়েছে। একই নির্দেশনায় অত্যন্ত জরুরী বিষয়াদি ছাড়া কাউকে ঢাকায় প্রবেশ না করতে দিতেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে। তবে জরুরী সেবাদানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, যানবাহনসহ অন্যান্য কিছু এমন নির্দেশনার বাইরে থাকবে। পণ্যবাহী যানবাহনও এমন নির্দেশনার আওতায় থাকবে না। ইতিপূর্বে ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এবং মহামারী ঠেকাতে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজানেও কড়াকড়ি অব্যাহত আছে। বিশেষ করে ফুটপাথে কোন প্রকার ইফতারির বাজার বসতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি যেসব হোটেল ইফতার বিক্রির অনুমতি পেয়েছে, তার সামনেও ইফতার সামগ্রী বিক্রি করতে দেয়া হচ্ছে না। পাড়া মহল্লার অলিগলিতেও এবার ইফতারির দোকান বসতে দেয়া হচ্ছে না। তবে বিশেষ বিবেচনায় অত্যন্ত মানবিক কারণে রোজাদারদের কথা চিন্তা করে সীমিত পরিসরে হোটেল রেস্তরাঁকে পার্সেল বিক্রির সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে হোটেল রেস্তুরাঁকে অবশ্যই ভেতর থেকে পার্সেল বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্বও কঠোরভাবে মানার কথাও বলা হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে ঈদকে সামনে রেখে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তা নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণে ঢাকা এলিফ্যান্ট রোডের সানরাইজ প্লাজা বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। নির্দেশনা মানতে পুলিশের তরফ থেকে ঢাকার সব এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ভ্রাম্যমা আদালত। গত ১৯ এপ্রিল থেকে হালনাগাদ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার দায়ে এবং অহেতুক ঘোরাফেরার দায়ে অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষকে জরিমানা করা হয়েছে। দিন দিন অভিযানের মাত্রা ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, ইচ্ছে থাকলেও করোনাভাইরাস থেকে সবাইকে নিরাপদ রাখতে পবিত্র রমজানের মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কঠোর হতে হয়েছে। সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত পাড়া মহল্লার দোকান খোলা থাকবে। আর বিকেল চারটা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। সর্বশেষ করোনাভাইরাসে প্রার্দুভাবের কারণে কাওরান বাজার খোলা রাখার নতুন সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়। নির্দেশনা মোতাবেক সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত বাজার চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এমন নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সকল পণ্যসামগ্রী লোড আনলোড করতে হবে। সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল ছয়টার মধ্যে পাইকারি ক্রেতাগণকেও তাদের পণ্য ক্রয় করে বাজার ত্যাগ করতে হবে। এমনকি পণ্য বিক্রয়কালীন বিক্রেতা, বিক্রেতার সহকারী হিসেবে সর্বোচ্চ একজন থাকতে পারবেন। আর ক্রেতা সার্বক্ষণিক মাস্ক ও হ্যান্ডগ্ল্যাভস পরিধান করবেন। ক্রেতা বিক্রেতা উভয়কেই নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাজার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বাজারে আগত ক্রেতা, বিক্রেতা পণ্য পরিবহন ও মালামাল ওঠানামার সঙ্গে জড়িত সকলের জন্য সাবান ও হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। এছাড়াও বাজারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন। যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যায়। বাজার কমিটি পৃথক পৃথক প্রবেশ ও বাইর হওয়ার পথের ব্যবস্থা করবেন। যাতে সকলের সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে। এমনকি এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে স্পর্শ করতে পারবেন না। বাজার এলাকায় হকারের মাধ্যমে কিংবা ভ্যানে কিংবা ফুটপাথে পসরা সাজিয়ে কোন ধরনের খাবার কিংবা পণ্যসামগ্রী বিক্রি করা যাবে না। র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, র‌্যাব করোনার মুহূর্তে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করছে। সরকারী বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করছে। এরপরেও সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন নিয়ম ভেঙ্গে অলিতে-গলিতে জমায়েত হচ্ছে। আড্ডা বসছে। আড্ডা সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সন্ধ্যার পরে কোথাও আড্ডা, জমায়েত হতে দেয়া হবে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা না হলে, সেখানেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে র‌্যাবের প্যাট্র্রলিং অব্যাহত আছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানের একটি প্রাণীর বাজার থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে বিভিন্ন সংস্থা। এরপর চলতি বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মেলে। পরবর্তীতে ভাইরাসটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা পৃথিবীতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে। এ থেকে বাঁচতে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব অর্থাৎ তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়। এমনকি সবাইকে ঘরে থাকতেই বলা হচ্ছে। সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। কার্যত সারাদেশ বর্তমানে লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে দেশে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাবসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।
×