ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ বেগমও চলে গেলেন

প্রকাশিত: ২২:২০, ১৮ মে ২০২০

বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ বেগমও চলে গেলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গঠিত গণপরিষদের সদস্য জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ১৯৭১ এর অপরাজিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা, বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মমতাজ বেগম (৭৪) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার দিনগত রাতে ঢাকার ভুতের গলি এলাকায় তার নিজ বাসভবনে তিনি মারা যান। অধ্যাপক মমতাজ বেগমের মৃতুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সডক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম এন আমিন উদ্দিন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এক শোকবার্তায় মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শনিবার দিবাগত রাত ১২.২০ মিনিটের সময় ধানমন্ডি (নর্থ রোড) এর নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানের সহধর্মিণী ও এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা পিউলির মা। রবিবার তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, এক মেয়ে, এক ছেলে, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রাষ্ট্রপতির শোক ॥ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গঠিত গণপরিষদের সদস্য জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এক শোকবার্তায় তিনি মমতাজ বেগমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, গণপরিষদের সদস্য, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার এক শোকবার্তায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের সাবেক এই নেত্রীর ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়। সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম এক সময় বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ বেগমের সঙ্গে একসঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করা এবং বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেয়ার কথাও শোকবার্তায় স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতীয় মহিলা সংস্থার সাবেক এ প্রতিভাধর চেয়ারম্যান স্বীয়কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’ প্রধানমন্ত্রী মরহুমার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তথ্য সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছাত্রী জীবনের সংগ্রামী কর্মকান্ডের নিকটতম সঙ্গী মমতাজ বেগম। স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি তৈরির কাজে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী সরকারের ভেতরে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বীর নারী। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ ভর্তি হন মমতাজ। সে সময় স্নাতক সম্মান কোর্সের ছাত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পা দেয়ার আগে মমতাজ ছিলেন কুমিল্লা মহিলা কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট? আর অন্যদিকে, আজকের জননেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট? ফলে এই দুই সংগ্রামী নেত্রী একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আন্দোলনকে চাঙ্গা করে তোলেন। তারাই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন মমতাজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বাড়ি মরিচা হাউসে মহিলাদের সামরিক ও প্রাথমিক পরিচর্যার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন মমতাজ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর সদর দফতরে অস্ত্র চালনা এবং যুদ্ধ পরিচালনার ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এসব বিষয়ে অন্যান্যদের নানা স্থানে প্রশিক্ষণ প্রদানও করেন তিনি। ২৫শে মার্চ রাত থেকে শুরু হওয়া পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংস হামলা ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব ছিল তার ওপর। ‘মহিলা সংঘ’ নামে একটি সেবা সংগঠনের মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করেন তিনি। এমনই অসংখ্য করুণ পরিস্থিতি পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন মমতাজের মতো বীর নারী-পুরুষ। তবে স্বাধীনতার পরও থেমে যাননি মমতাজ। চালিয়ে গেছেন দেশ ও জাতি গড়ার কাজ। অধ্যাপনা, রাজনীতি এবং আইন পেশার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের ১২ই মার্চ থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে।
×