ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রবিবার বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত, কোন দল যেমন শিরোপা পাচ্ছে না তেমনি থাকছে না প্রমোশন ও রেলিগেশন, হবে না স্বাধীনতা কাপও, ২০২১ সালে এএফসি কাপে খেলার সুযোগ পাবে শুধু বসুন্ধরা কিংস

বাতিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ১৮ মে ২০২০

বাতিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত জয় হলো করোনাভাইরাসেরই! মরণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। রবিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে ২০১৯-২০ মৌসুমে কোন দল শিরোপা পাচ্ছে না। তেমনি থাকছে না প্রমোশন ও রেলিগেশন। সেই সঙ্গে চলতি বছর হতে যাওয়া স্বাধীনতা কাপ ফুটবলও বাতিল করা হয়েছে। প্রিমিয়ার লীগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকে ১৩ দল। হোম ও এ্যাওয়ে মিলিয়ে প্রতিটি দলকে খলতে হয় ২৪টি করে ম্যাচ। কিন্তু ছয়টি করে ম্যাচ হওয়ার পর গত মার্চে খেলা বন্ধ হয়ে যায় করোনার প্রাদুর্ভাবে। তবে ১০ দল ছয়টি করে ম্যাচ খেলতে পারলেও বাকি তিনটি দল খেলার সুযোগ পায় পাঁচটি করে ম্যাচ। এবার শুরু থেকেই লীগ জমজমাট হয়ে উঠেছিল। বন্ধ হওয়ার আগে ১৩ পয়েন্ট করে নিয়ে যুগ্মভাবে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ছিল দুই আবাহনী- ঢাকা আবাহনী ও চট্টগ্রাম আবাহনী। তবে গোলগড়ে এক নম্বরে ছিল ঢাকার জায়ান্টরা। সমান ১২ পয়েন্ট করে নিয়ে গোলগড়ে তালিকার তিন ও চারে ছিল যথাক্রমে শেখ জামাল ধানম-ি ও ঢাকা মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস ১০ পয়েন্ট নিয়ে অবস্থান করছিল তালিকার ছয় নম্বরে। সবার তলানিতে ছিল উত্তর বারিধারা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। দু’দলেরই ভান্ডারে ছিল মাত্র ১ পয়েন্ট করে। লীগ বাতিল হওয়ায় তাই এই দল দুটিই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। তাদের রেলিগেশন হতে হলো না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ নিয়ে জটিলতায় এএফসির গাইডলাইন চেয়েছিল বাফুফে। এশিয়ার ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা শনিবার তাদের মতামত জানিয়ে দেয়। এএফসি কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাকে। তারা শুধু জানায়, ‘তোমরা যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা দ্রুত জানিয়ে দেবে আমাদের।’ এরপরই গতকাল লীগের ভাগ্যনির্ধারণী বৈঠকে বসেন বাফুফে কর্তারা। আর তাতে বেশিরভাগ ক্লাবের খেলতে না চাওয়ার মতকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে বাফুফে। বাতিল করেছে লীগ। লীগ বাতিল হওয়ায় ২০২১ সালের এএফসি কাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে শুধু ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। এর ফলে বাংলাদেশের এএফসি কাপের একটি কোটা নষ্ট হয়ে গেল। এবারের লীগে দীর্ঘদিন পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান। ব্রিটিশ কোচ শেন লিনের হাত ধরে বিখ্যাত সাদা-কালোরা শিরোপা জয়েরও চিন্তা করছিল। কিন্তু লীগ বাতিল হয়ে যাওয়ায় সে স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল মতিঝিলপাড়ার ক্লাবটির। মৌসুম বাতিল ঘোষণা করায় স্বাধীনতা কাপ ও পেশাদার ক্লাবগুলোর অনুর্ধ-১৮ টুর্নামেন্ট- এ দুটিও বাতিল হয়ে গেল। স্বাভাবিকভাবে মৌসুম হওয়ার কথা ছিল আগামী অক্টোবরে। ফলে শুধুমাত্র ফেডারেশন কাপ দিয়েই শেষ হয়ে গেল ২০১৯-২০ ঘরোয়া ফুটবল মৌসুম। প্রিমিয়ার লীগ বাতিল করার কারণে ২০২১ সালে এএফসি কাপে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারীর দলের সংখ্যা কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাধারণত ২টি দল অংশগ্রহণ করার কথা ছিল এএফসি কাপে। কিন্তু লীগ বাতিল হওয়ার কারণে একটি দলের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে গেলো। যদিও এ বিষয়ে এএফসি থেকে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। এই জরুরী সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির ৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন বাফুফে ভবনে। আর বাকিদের সঙ্গে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতামত নেয়া হয়েছে। সভা শেষে পেশাদার লীগ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জানান, ‘যেহেতু অনির্দিষ্ট কালের জন্য লীগ স্থগিত ছিল এজন্য এর একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে একাধিকবার সভায় বসেছি। ভেবেছিলাম দেশের করোনা পরিস্থিতির দ্রুতই উন্নতি হবে। কিন্তু এটা দেশের বেশিরভাগ জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর তাছাড়া লীগের এক রাউন্ডও শেষ করতে পারিনি আমরা। তাই সব কিছু বিবেচনা করেই এবারের মৌসুম আমরা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি।’ অবশ্য বেশিরভাগ ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি, ‘এরই মধ্যে বেশিরভাগ ক্লাব ক্যাম্প বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ক্লাব তাদের বিদেশীদের ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম। এজন্য ক্লাবগুলোর কাছে লিখিত জানতে চেয়েছি। ক্লাবগুলো লীগ চালানোর বেলায় অপরাগতা প্রকাশ করেছে। সব মিলিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেয়া।’ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ নতুন মৌসুমের কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানান সালাম মুর্শেদী।
×