ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আকরামের অর্জন থেকে মাশরাফির ইতিহাস

প্রথম জয় আর প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব

প্রকাশিত: ২০:৪২, ১৮ মে ২০২০

প্রথম জয় আর প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আজ থেকে ২২ বছর আগে ভারতের হায়দরাবাদে গিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আকরাম খানের নেতৃত্বে সে সময় নিজেদের অন্যতম চির প্রতিদ্বন্দ্বী কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এরপর শুধু সামনের দিকেই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট, বিশেষ করে ওয়ানডে ফরমেটে। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতার সুযোগ হয়নি। তবে গত বছর মে মাসে সেই আক্ষেপ ঘুচেছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে। যে কোন ফরমেটে কোন আন্তর্জাতিক সিরিজে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। আর প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জেতা এবং প্রথম শিরোপা জেতার দিনটি ছিল এক- মাঝে ব্যবধান শুধু ২১ বছরের! হায়দরাবাদে আকরাম এনে দিয়েছিলেন প্রথম জয়, আর আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ম্যালাহাইডে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে পরাস্ত করে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব এনে দিয়েছিলেন মাশরাফি। এ দুটি দিনই ছিল ১৭ মে! কেনিয়াকে হারানোর বছর ১৯৯৮ আর ক্যারিবীয়দের ফাইনালে হারানোর বছর ২০১৯! ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। সে সময় চিরশত্রু কেনিয়াকে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনালে ২ উইকেটে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জয়ের পাশাপাশি প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলারও যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতির দারুণ সুযোগ করে দেয় ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। ত্রিদেশীয় এক ওয়ানডে সিরিজে কেনিয়া ও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় তারা। সেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডেতে প্রথম জয় পায় টাইগাররা। আকরামের নেতৃত্বে সেই ম্যাচে কেনিয়া আগে ব্যাট করে ২৩৬ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল ৪৯ ওভারে। রবীন্দু শাহ ৫২ ও হিতেশ মোদি ৪০ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক ৫৬ রানে ৩টি আর খালেদ মাহমুদ ও এনামুল হক মণি ২টি করে উইকেট নেন। জবাবে আতহার আলী খানের সঙ্গে রফিক ওপেনিংয়ে নেমে ঝড় তোলেন। তারা উদ্বোধনী জুটিতেই ২৬ ওভারে ১৩৬ রান যোগ করেন। আতহার ৯১ বলে ৪৭ রান করে রান আউটে সাজঘরে ফিরলেও রফিক ৮৭ বলে ১১ চার, ১ ছয়ে ক্যারিয়ারসেরা ৭৭ রান করেন। পরে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অপরাজিত ২০ আর আকরামের ৫১ বলে ৪ চারে করা ৩৯ রানে মাত্র ৪ উইকেটে হারিয়ে ৪৮ ওভারেই ২৩৭ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম জয়টি আসে ২২ ওয়ানডে পরাজয় দেখার পর। রফিক হন ম্যাচসেরা। ভেন্যু হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম। ২০০৯ সালে প্রথম কোন আন্তর্জাতিক সিরিজের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বে। তবে ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে ফাইনালে উঠেও পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে স্বাগতিকরা। এরপর মাশরাফি ২০১৮ সালে ঘরের মাটিতে ত্রিদেশীয় ও একই বছর এশিয়া কাপের ফাইনালে দলকে তুললেও শিরোপা ছুঁতে পারেননি। তবে স্বপ্নযাত্রা ছিল বিশ^কাপ উপলক্ষে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে। প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২ বার ও আয়ারল্যান্ডকে ১ বার (অপর ম্যাচ পরিত্যক্ত) চরমভাবে পর্যুদস্ত করে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ডাবলিনের ম্যালাহাইডে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ছিল বৃষ্টির বাগড়া, ইনজুরি সমস্যায় খেলেননি সাকিব আল হাসান। টস জিতে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিংয়ে পাঠালে তারা ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১৫২ রান তোলার পর আর বৃষ্টির কারণে তাদের ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয়নি। শাই হোপ ৭৪ আর সুনিল এ্যামব্রিস অপরাজিত ৬৯ রান করেন। পরবর্তীতে ২৪ ওভারে বাংলাদেশের জন্য টার্গেট দেয়া হয় ২১০ রানের। অসম্ভব এই জয়ের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি পায় বাংলাদেশ, তামিম ইকবাল ১৮ রানে বিদায় নেন। সাব্বির রহমানও শূন্য রানে ফিরে যান। তবে সৌম্য সরকার ৪১ বলে ৬ চার, ৩ ছক্কায় ৬৬ মুশফিকুর রহীম ২২ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৬ রান করে বাংলাদেশকে কক্ষপথে রাখেন। কিন্তু শেষদিকে অসম্ভব হয়ে ওঠা টার্গেটকে ওভার শেষ হওয়ার আগেই পেরিয়ে যেতে বড় ভূমিকা রাখেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তিনি ২৭ বলে ২ চার, ৫ ছক্কায় অপরাজিত ৫২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন। ২২.৫ ওভারে (৭ বল বাকি থাকতে) ৫ উইকেটে ২১৩ রান তুলে শিরোপা ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। মাশরাফির নেতৃত্বে প্রথম কোন শিরোপা জয়ের গৌরবান্বিত ইতিহাস সৃষ্টি হয়। মোসাদ্দেক হন ম্যাচসেরা।
×