ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কি ভাবছেন বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা? অনলাইনে ক্লাস

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ১৭ মে ২০২০

কি ভাবছেন বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা? অনলাইনে ক্লাস

‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রাণলয় থেকে দেশের সব সরকারী ও বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কি ভাবছেন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা? এ নিয়ে ছয়জন শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরছেন-রেদওয়ানুল ইসলাম বিষয়টি আরও ভেবে দেখা উচিত জারিন তাসনিম সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ‘করোনাভাইরাসের ব্যাপকতা ঠেকাতে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাসহ আটকে আছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কার্যক্রম। এমতাবস্থায় অনলাইন ক্লাস কতটা যৌক্তিক? শিক্ষা কার্যক্রমের স্থবিরতা কাটাতে অনলাইন ক্লাস সহায়ক হতে পারে। পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলেও এগিয়ে নেয়া যেতে পারে শিক্ষাদান কর্মসূচী। এতে করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে সেশনজট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোন অসুবিধা আছে কিনা তা ভাবতে হবে। ৪এ যুগে বাংলাদেশে এখনো কিছু গ্রাম আছে যেখানে নেটওয়ার্ক সংযোগ যথেষ্ট না। “ঙঁঃ ড়ভ ংবৎারপব ধৎবধ”, “গড়নরষব হবঃড়িৎশ রং হড়ঃ ধাধরষধনষব” অবস্থার নেটওয়ার্কে থাকা গ্রামে ২এ, ৩এ তো পূর্ণিমার চাঁদ, ৪এ কল্পনাতীত। এমতাবস্থায় এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হবে। ফলে মনে করি বিষয়টি আরও ভেবে দেখা উচিত।’ বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ আসিফ হাসান রাজু নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্তটি যুগোপযোগী। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত না করতে পারলে বিশ^ায়নের এ যুগে টিকে থাকা মুশকিল। তবে বর্তমান দেশের প্রযুক্তিব্যবস্থা বিবেচনায় আনলে অনলাইনে ক্লাস বাস্তবায়ন একটি চ্যালেঞ্জ। কেননা, এর জন্য যে টেকনিক্যাল সাপোর্ট। বিশেষ করে, দেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে যে সকল শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে তার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত-নি¤œবিত্ত ও গ্রামাঞ্চলের। দেশে এখনও অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে যেখানে নেটওয়ার্কের পর্যাপ্ত সুযোগ নেয়। তাদের কাছে অনলাইনে ক্লাস যেন বিলাসিতার শামিল। কেননা, অনলাইনে ক্লাস করতে হলে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট, ভাল স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার বা ল্যাবটপ প্রয়োজন। এছাড়া এই মহামারীতে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের আয়ের উৎস বন্ধ। বিশেষ করে শ্রমজীবীসহ যারা টিউশনি, পার্টটাইম জব করে পরিবার ও নিজেদের খরচ বহন করত। তাদের কাছে এই মুহূর্তে অনলাইনে ক্লাস একেবারে বেমানান। চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তন্বী আক্তার শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাবি অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন রাজধানীর বাইরে নিজ গ্রামে অবস্থান করছেন ফলে অনেকেই ইন্টারনেটের ধীরগতি কিংবা উচ্চমূল্যের কারণে ক্লাসের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে না বলে মনে করি। কারণ এমন অনেক প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে যেখানে ফোনের নেটওয়ার্ক থাকে না, সেখানে অনলাইন ক্লাস কল্পনাতীত ব্যাপার। এছাড়া, বর্তমান সময়ের একটি পরিচিত চিত্র যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে তা হলো অনেক পরিবারে দেখা দিচ্ছে আর্থিক অসচ্ছলতা ও মৌলিক চাহিদার সঙ্কট। এমতাবস্থায় যদি অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয় তা অনেকের জন্য অসম্ভব। যদি প্রযুক্তির ব্যবহার সবজায়গায় সফলভাবে পরিচালিত হতো, তাহলে এমন উদ্যোগ কার্যকরী হতে পারত। অনলাইন ক্লাস করার অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে সেশনজটকে। তবে, শুধু অনলাইনে কম-বেশি ক্লাস নিলেও এত দ্রুত এই সঙ্কটের সমাধান হবে না। এর জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সিদ্ধান্তটি নিতান্তই বিলাসিতা সাদিয়া সাবাহ ্নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় করোনা সঙ্কটে অনেকেই ঘরে বসে থাকতে থাকতে একঘেয়ে এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তেমনি অনেকেই নিত্যদিনের খাদ্য প্রাপ্তির অনিশ্চয়তাই ভুগছে। এমন অবসহায় অবস্থায় অনলাইনে ক্লাস কতটা যৌক্তিক সেটিই বড় প্রশ্ন। অনেকেই হয়তো বলবে ক্লাসটা যৌক্তিক। উন্নত বিশ্বের তালমিলিয়ে যদি আমাদের দেশেও অনলাইনে ক্লাস চালু হয়, তাহলে আমরা নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হব। যেমন, আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থীই দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। যারা ইতোমধ্যে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে গেছে। যাদের বাড়ির কর্তা কৃষক তারা শাক-সবজি /ফসল বিক্রি না করাই আর্থিক দিক দিয়ে পঙ্গু হয়ে গেছে। এমনকি আমাদের দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থীর বাবা মজুর, শ্রমিক যারা এখন বেকার। যেসব শিক্ষার্থী নিজেই টিউশনি এবং নানারকম পার্টটাইম চাকরির মাধ্যমে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাত। এ মুহূর্তে অনলাইনে ক্লাসকে আমি শুধু মানসিক চাপ বলে মনে করছি। কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় আছে রাবিবুল হাসান রাকিব বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ‘বিশ^ায়নের এ যুগে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে যে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। কেননা, উন্নত বিশে^র মতো আমাদের দেশের প্রযুক্তি খাতে এখনও সেই মানের উন্নয়ন ঘটেনি। চড়া মূল্যের ইন্টারনেটের পাশাপাশি দুর্বল গতিতো রয়েছে সেই সঙ্গে এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে কথা বলার মতো ভাল মোবাইল নেটওয়ার্কের সুযোগ নেয়। যদি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্তে অটুট থাকে তাহলে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা সেই বিষয়টি। কেননা বিশ^বিদ্যালয়ে সকল শিক্ষার্থীর দিক বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায়, একটি অংশ উপকৃত হবে আর বৃহৎ অংশ হয়ত অংশ নিতে পারবে না। প্রযুক্তি সামর্থ্য বিবেচনা দরকার সালমান শাকিল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাবি ‘মহামারী, লকডাউনের মধ্যে শিখনের নয়াপদ্ধতি অনলাইনে ক্লাস। ডিজিটাল এই উদ্যোগ যদি কার্যকর করা যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের একরকম ডিটাচড্ হয়ে যাওয়া লেখাপড়ায় কিছুটা হলেও সংযোগ ঘটবে। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জ্ঞান অর্জনের বর্তমান রুদ্ধতা কেটে যেতে পারে। তবে যাদের জন্য এই আয়োজন সে আয়োজনে সকলে অংশগ্রহণের সামর্থ্য রাখে কিনা সেদিকেও বিবেচনায় রাখা দরকার বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ভাই বোন আছেন যাদের প্রযুক্তি সামর্থ্য নেই।
×