স্টাফ রিপোর্টার ॥ এসেছে কঠিন সময়। চাইলেও দুঃসময় এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই সংবেদনশীলদের। তাই নির্মম বাস্তবতায় সৃজনশীল মানুষরা হয়ে ওঠে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। জোট বেঁধে তারা দাঁড়িয়ে যায় বিপন্ন মানবতার সেবায়। মহামারীর এই দুর্যোগে তেমনিভাবে এগিয়ে এসেছে একঝাঁক চিত্রশিল্পী। শিল্পের আশ্রয়ে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন একঝাঁক তরুণ শিল্পী। মহতী সেই উদ্যোগে তাদের সঙ্গী হয়েছেন প্রখ্যাত থেকে প্রবীণ শিল্পীরা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে অসহায় মানুষকে সহায়তার তুমুলভাবে সচল তাদের রং-তুলির আঁচড়। চিত্রিত হচ্ছে অবরুদ্ধ সময়সহ যাপিত জীবনের বিবিধ বিষয়ের ছবি। কেউ বা গড়ছেন ভাস্কর্য। বিক্রির উদ্দেশ্যে সেই শিল্পকর্মগুলো জমা হচ্ছে একটি প্ল্যাটফর্মে। সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে আপলোড হচ্ছে চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যগুলো। আর এই শিল্পসম্ভারের বিক্রীত অর্থ দিয়ে সহায় করা হবে অসহায় মানুষকে। শিল্পালোকে মানবসেবার উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাজাড়িত সৃজনশীল তরুণদের সংগঠন তারুণ্য কথা। সংগঠনটির ফেসবুক পেজে দেখা মিলছে বিক্রির উদ্দেশ্যে মেলে ধরা শিল্পকর্মসমূহ। সেগুলো দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন কেনার জন্য।
প্রখ্যাত শিল্পী জামাল আহমেদের আঁকা ছবিও জমা পড়েছে মানবিক মানুষদের নেয়া এই পদক্ষেপে। ইতোমধ্যে তার মতো প্রখ্যাত থেকে শুরু করে নবীন-প্রবীণ শিল্পীরা স্বতঃস্ফূর্ত সম্পৃক্ত হয়েছেন উদ্যোগটি সঙ্গে। জমা পড়েছে নানা মাধ্যমে চিত্রিত ও ভাস্কর্যসহ ৬০টি শিল্পকর্ম। তারুণ্য কথার ফেসবুক পেজে শিল্পকর্মের ছবির সঙ্গে অনেকেই ব্যক্ত করেছেন নিজেদের অনুভূতি। এ্যাক্রেলিক মাধ্যমে চিত্রিত নারী শিরোনামের চিত্রকর্মটির উপরে অনুভূতি প্রকাশে ফারহানা আফরোজ বলেছেন, পৃথিবীজুড়ে যখন মৃত্যুর মিছিল, তখন শিল্পী হিসেবে দেশ ও জাতির কাছে দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। এই ক্রান্তিলগ্নে পিছিয়ে নেই তারুণ্য কথা। আমরা আছি বন্ধুর পাশে, মানুষের কাছে, দেশের সাথে।
তারুণ্য কথার ফেসবুক ঘুরতে ঘুরতে নজর পড়ে শ্যাডো অব লালন শীর্ষক চিত্রকর্মে। গ্রাম বাংলার বাউল গানের আসরের দৃশ্যকল্পটি এঁকেছেন কৃতি রঞ্জন বিশ্বাস। শারিকা স্বর্ণার আঁকা চিত্রকর্মের শিরোনাম ‘শোকের মিছিল’। ‘নতুন সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়’ শিরোনামের ছবি জমা দিয়েছেন সঞ্জীব দাশ অপু। এ্যালুমিনিয়ামে গড়া মুক্তি বিশ্বাসের ভাস্কর্যটির শিরোনাম ‘পাখি ও বালিকা’। মণিদীপা দাশগুপ্তের ক্যানভাসে চমৎকারভাবে দৃশ্যমান হয়েছে লতা-পাতা, ডালপালাসহ রকমারি রঙের ফুল। এছাড়াও এই উদ্যোগে শিল্পকর্ম দিয়ে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন রিফাত জাহান কান্তা, রেজাউল হক, আবিদ সাঈদ শিপু, প্রদ্যুত কুমার দাশ, শাকিলা চয়ন, রেহানা শিলা, জাহিদুল ইসলাম জাহিদসহ অনেকেই।
উদ্যোগটি প্রসঙ্গে তারুণ্য কথার আহ্বায়ক আতিকুর রহমান দীপ জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের শিল্পীরা ছবি আঁকছে। ছবিটি আঁকছেন একজন মানবিক মানুষের জন্য যিনি এই ছবিটির একটি শুভেচ্ছা মূল্য দিয়ে আমাদের সঙ্গে এসে দাঁড়াবেন অসহায় মানুষগুলোর পাশে। ইতোমধ্যে ৬০টি জমা পড়েছে। আরও ছবি আসবে। জামাল আহমেদের মতো প্রখ্যাত শিল্পী ছবি দিয়েছেন। সেই চিত্রকর্মটির দাম কমপক্ষে এক লাখ টাকা হলেও তিনি সেটি ৭০/৮০ হাজার টাকাতেও বিক্রয়ে আগ্রহী। কারণ এই যত দ্রুত ছবি বিক্রি হবে ততটাই দ্রুততার সঙ্গে দাঁড়ানো অসহায় মানুষের পাশে। ইতোমধ্যে কিছু মানুষ কিছু ছবি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আর শিল্পীরাও যারা ছবি দিয়েছেন তারাও বলছেন যে টাকায় বিক্রি করা যায় বিক্রি করা হোক। নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকেই শিল্পীরা এই প্ল্যাটফর্মে শিল্পকর্ম দিয়েছেন। আমরা সকলেই নিজেকে ও অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে চাই।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: