ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অদ্ভুত এক ঈদের অপেক্ষা

নতুন পোশাক পরে বেড়ানো, কোলাকুলি কিছুই হবে না

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ১৬ মে ২০২০

নতুন পোশাক পরে বেড়ানো, কোলাকুলি কিছুই হবে না

মোরসালিন মিজান ॥ ঈদ আসছে। কী বিরাট উপলক্ষ! কিন্তু দৃশ্যমান কোন প্রস্তুতি নেই। নামমাত্র কেনাকাটা। নতুন জামা কাপড় পরে আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়ানো, নেমন্তন্ন খাওয়া, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা, কোলাকুলি, ঘনিষ্ঠ হয়ে সেলফি তোলা এমনকি হ্যান্ডশেক করা চলবে না! তবুও এর নাম ঈদ। অদ্ভুত এক ঈদের অপেক্ষায় এখন সবাই। আর কিছু নয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণেই বিবর্ণ পানসে ফ্যাকাশে হতে চলেছে এবারের ঈদ। দুই দশটি দেশ নয়, গোটা দুনিয়া কোভিড-১৯’র ঘায়ে অস্থির এখন। প্রতিদিনের জীবনযাপন ব্যবসা চাকরি স্কুল কলেজের রুটিন সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ঘুম খাওয়ার ঠিক নেই। দিন রাতের পার্থক্য করাও মুশকিল। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তাই খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। এসবেরই প্রভাব পড়বে ঈদে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে অনেক আগেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। এখনও তা অব্যাহত আছে। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত চলবে অঘোষিত লকডাউন। লকডাউনের মধ্যেই ঈদ উদ্যাপন করতে হবে। ফলে প্রস্তুতি নেয়ার বা উদ্যাপনের তেমন সুযোগ নেই। চারপাশে তাকিয়েও সেটি বোঝা যাচ্ছে। এই যেমন প্রতি বছর রমজানের একেবারে প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে যায় ঈদের কেনাকাটা। এই সময়ে এসে উৎসবের রংটা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মার্কেট শপিংমলে ভিড় বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যায়। দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয় ঢাকার রাস্তায়। এবার সবই অনুপস্থিত। নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের জীবিকার কথা ভেবে দোকান পাট খুলে দেয়া হয়েছে বটে, ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। সাড়া মিলছে না। ঈদে জামা কাপড় কেনার আগ্রহ হারিয়ে গেছে। কোন কোন এলাকার দোকান পাটে আবার বাড়তি ভিড়। ক্রেতা বা বিক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব রক্ষার চেষ্টা করছেন না। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায় ইচ্ছা সত্ত্বেও মার্কেটমুখী হচ্ছেন না অনেকে। ঈদে বাড়ি ফেরাও বহুকালের রীতি। নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে যান অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা তো ফাঁকা হয়ে যায়। বাস ট্রেন লঞ্চ বিমানে করে শহর ছেড়ে যায় মানুষ। তারও আগে টিকেটের জন্য ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। এভাবে আনন্দটা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমানে এসবের কিছুই হচ্ছে না। বরং ঈদ উপলক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সরকার। সারাদেশে যাত্রীবাহী সব পরিবহন চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ঈদের আগে এবং পরে সাত দিন সারাদেশে সড়ক এবং নৌপথে যাত্রীবাহী সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেছেন, ঈদে মানুষ যেন ঢাকা থেকে অন্যান্য জেলায় বা এক জেলা থেকে আরেক জেলায় না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে পরিবহনের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যান্য যানবাহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচলও শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার মানে, যে যেখানে আছেন সেখানে থেকেই ঈদ উদ্যাপন করতে হবে। উদ্যাপনের সূচনাটা সাধারণত হয় ঈদগাহে। বিশাল খোলা মাঠে সবাই মিলে জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলির সুন্দর একটি ছবি আমরা প্রতি বছর দেখি। অচেনা মানুষটিকেও গভীর আবেগে ভালবাসায় জড়িয়ে ধরা যায় এ সময়। তবে করোনার কালে এমন ভ্রাতৃত্ববোধ সামাজিকতা বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এবার ঈদের জামাত সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদে আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারী নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জামাত শেষে হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলি পরিহার করতে হবে। নামাজের জন্য কাতারে দাঁড়ানোর সময় শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। ফলে হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি পরিহার করার পাশাপাশি, কেউ কারও মুখটিও ঠিকমতো দেখতে পারবেন না। সর্বোপরি মানুষের মধ্যে প্রিয়জন হারানোর বেদনা। শোক। শঙ্কা। এ অবস্থায় ঈদ আর ঈদের মতো হবে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আনন্দহীন একলা কাটানোর অদ্ভুত এক ঈদ আসছে। এমন ঈদ যেন আর না আসে।
×