ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

ব্রিগেডিয়ার ক্লের চিঠি ও একজন মুক্তিযোদ্ধার জবানবন্দী

প্রকাশিত: ২১:২৭, ১৬ মে ২০২০

ব্রিগেডিয়ার ক্লের চিঠি ও একজন মুক্তিযোদ্ধার জবানবন্দী

আগে এত অখন্ড সময় না পেলেও এখন প্রতিদিনই অনেক দৈনিক পত্রিকায় নিবিষ্ট হই। কি করব, অলস থাকতে পারছি না। পত্রিকা আর আফিস ঘরে থাকা বইয়ের মাঝেই ঘুরে ফিরি। করোনা মহামারীর এই সঙ্কটকাল অনেক বিষয় নিয়ে ভাবনার গভীরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। সময় এগিয়ে চলেছে। এক সময় সবার জীবনেরই অনেক কিছুু থেমে যাবে। জীবনটা অবসরের জালে আটকে যাবে। কিন্তু কর্মজীবন থেকে অবসরে যাওয়ার মানে সবকিছু নিভে যাওয়া নয়। বরং অবসরে শুরু হয় নতুন এক ভাবনা ও কর্মমুখর জীবন পর্বের। মাঝে মাঝে ভাবি কিভাবে কাটবে আমার অবসর জীবনটা! এ নিয়ে একেকজনের ভাবনা ও দর্শন একেক রকম। আমার মনে হয়, এই অবসর জীবনটাই সবকিছুর শেষ নয়। বরং নতুন করে অনেক কিছুুর শুরু। গত ৪ মে দৈনিক সমকালের পঞ্চম পৃষ্ঠায় দেশের বরেণ্য অভিনেতো ও নাট্য নির্দেশক আলী যাকেরের একটি ছোট্ট সাক্ষাতকার পড়লাম। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এই নাট্যকার আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ইংরেজীতে সংবাদ পাঠ করতেন। রণাঙ্গনের খবরাখবর দিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য গাঁথা সামনে আনতেন। আমাদের প্রিয় নূর ভাই (আসাদুজ্জামান নূর) এর নিকট থেকে জানলাম আলী যাকের শুধু ইংরেজী খবরই পাঠ করতেন না, তিনি রণাঙ্গনে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহও করতেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলী যাকের ও আসাদুজ্জামান নূর উভয়েই ভাল থাকুন এ কামনাই করি। আমার এ লেখাটি জনাব আলী যাকেরকে নিয়ে নয়। সাক্ষাতকারের তার ক’টি কথার রেশ ধরে আমার এ লেখাটি টেনে নেব ভাবছি। তার কাছে সমকাল সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল -‘কেমন আছেন? বাসায় সময় কাটাচ্ছেন কিভাবে?’ কোভিড-১৯ এর এই দুঃসময়ে সবার সামনেই এই প্রশ্নটি রাখা হয়। উত্তরে আলী যাকের বললেন- ‘এই তো চলে যাচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিই। এছাড়া বই পড়ি সিনেমা দেখি।’ জনাব আলী যাকেরের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এ বয়সে বিশ্রাম নেয়া খুবই প্রয়োজন। তবে তার মতো সদা কর্মব্যস্ত একজন মানুষ অন্য সময় বিশ্রাম নেয়ার সময় পান কিনা বলা মুশকিল। তিনি বলেছেন তিনি সিনেমা দেখেন ও বই পড়েন। দুটি কর্মই একজন প্রবীণ সৃজনশীল মানুষের অখ- অবসরের সাথী। আমার বিচারক জীবনের অবসর পর্বটি শুরু হতে এখনও বেশ কিছু সময় বাকি। আমাদের অবসর জীবন কেমন হবে জানি না। তবে ঐ জীবনের স্বাদ বুঝি আমরা সবাই কম বেশি এখনই অনুভব করতে পারছি। বর্তমান দুঃসময়ে ঘরে অন্তরীণ থেকে সময়টা কাটছে মূলত বই পড়ে ও কিছু লেখালেখি করে। লেখালেখিটা দুটো ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। প্রথমটি আমার আদালতের কার্যক্রম হতে উদ্ভূত সিদ্ধান্ত ও আদেশ লেখা, সেগুলো সংশোধন ও চূড়ান্ত করা ইত্যাদি। এ কাজটি মূলত আইন অনুশীলন নির্ভর। আর দ্বিতীয়টি হলো অন্য যেসব ভাবনা মাথায় ঘোরাঘুরি করে সেটি লেখার মাঝে বন্দী করে রাখি। সেই সঙ্গে মনে হয় লেখার মাঝে অনুনাদিত আমার ভাবনাগুলো অন্যরা জানুক। পত্রিকার পাঠকরাই আমার এসব লেখার অনুপ্রাণন। আইনি বিষয় ও ভাবনার বাইরে যে সকল বিষয় আমার ভাবনায় নিরন্তর ঘুরে বেড়ায় তা হলো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, মানবতা, আমার পিতার আদর্শ ইত্যাদি। (চলবে) লেখক : সাবেক চেয়রম্যান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২
×