ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শনিবার শুরু হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৫ মে ২০২০

শনিবার শুরু হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ। এই পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসকে পরাজিত করে যারা সেরে উঠেছেন তাদের কাছ থেকে রক্তরস সংগ্রহ করে আক্রান্তদের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এন্টিবডি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। যা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে সেরে উঠতে সাহায্য করে। প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) এ প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে যার বিস্তার ঘটানো হবে অন্য হাসপাতালগুলোতে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এম এ খান প্লাজমা থেরাপি পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েছি। তিনি বলেন, শনিবার থেকেই ঢামেকে এর প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। তিনি বলেন, রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলে। তিন ধরনের কণিকা ছাড়া রক্তের বাকি অংশই রক্তরস। মেরুদ-ী প্রাণীর শরীরের রক্তের প্রায় ৫৫ শতাংশই রক্তরস। ইতোমধ্যে যারা সেরে উঠেছেন তাদের কাছ থেকে এই রক্তরস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা হবে তাতে কি পরিমাণ এন্টিবডি রয়েছে। এরপর আক্রান্ত মানুষের শরীরে দেয়া হবে। এতে করে আক্রান্ত মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানুষকে সহায়তা করবে। চীন প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের সাফল্যের কথা বলার পর থেকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ শুরু করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতও প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে। এখনও প্লাজমা থেরাপিকে মৃত্যু প্রতিরোধী এমন দাবি করেনি কোন দেশ। এখন পর্যন্ত যেসব গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে এটিকে ৪০ থেকে ৮০ ভাগ কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছে। করোনা চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কোন স্বীকৃত ওষুধ নেই। যেসব ওষুধগুলো প্রয়োগে ভাল ফল পাওয়ার বিষয়টি দাবি করা হচ্ছে সেগুলো অন্য ভাইরাস প্রতিরোধে তৈরি করা হয়েছিল। ফলে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তারা করোনা আক্রান্ত হলেও ভাইরাস তাদের শরীরে বিস্তার লাভ করতে পারছে না। তাদের শরীর এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে করোনাকে ঠেকিয়ে দিচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন করোনায় আক্রান্ত সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দেহে এই রোগের মোকাবেলায় এ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই এ্যান্টিবডি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম এমন মানব শরীরে পাঠালে কী ফল হয় তা দেখতেই পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। চিকিৎসার পরিভাষায়, এর নাম ‘প্লাজমা কনভালসেন্ট থেরাপি’। দাতার শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ কিট প্রয়োজন হয়। এ ধরনের প্রতিটি কিটের দাম ১২ হাজার টাকা। প্লাজমা দাতার রক্তে এ্যান্টিবডির পরিমাণ জানতে যে পরীক্ষা করতে হয় সেজন্য স্পেন থেকে চারটি কিট আনার আদেশ দিয়েছেন তারা। প্রতিটি কিটের দাম পড়বে দেড় লাখ টাকা করে। একটি কিটে ৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। আপাতত ঢাকা মেডিক্যালের নিজস্ব খরচে পরীক্ষামূলক পর্যায় শুরু করা হলেও বড় আকারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গেলে সরকারের সহায়তা লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষামূলক প্রয়াগ বলে রোগীকে প্লাজমা থেরাপি দেয়ার পর আরও কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। যাতে নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি কতটা কার্যকরভাবে কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে সেরে ওঠা তাবলীগ জামাতকে অনুসরণকারীরা দল বেঁধে নিজের প্লাজমা দান করেছেন। যা করোনা আক্রান্তদের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে ভারত এখন বিষয়টিকে পরীক্ষামূলকই বলছে। গত ২৬ এপ্রিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলছে এটি করতে অন্তত দুই সপ্তাহের সময় প্রয়োজন হবে তাদের। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজির অধ্যাপক ডাঃ এম এ খানকে প্রধান করে গত ১৯ এপ্রিল ৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কমিটিতে অন্যন্যের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ আহমেদুল কবির, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মাজহারুল হক তপন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সাইফ উল্লাহ মুন্সী ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ওই কমিটি প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
×