ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দশ হাজারের টার্গেট পূরণ হচ্ছে না পাঁচ থেকে সাত হাজারের মধ্যেই থাকছে রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ নতুন টেকনোলজিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ

নমুনার স্তূপ ল্যাবে ॥ করোনার পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা কাটছেই না

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৫ মে ২০২০

নমুনার স্তূপ ল্যাবে ॥ করোনার পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা কাটছেই না

নিখিল মানখিন ॥ করোনার নমুনা পরীক্ষার জটিলতা কাটছেই না। ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতাশিত দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা ১০ হাজার হচ্ছে না। এই সংখ্যা পাঁঁচ থেকে সাত হাজারের মধ্যেই থাকছে। ল্যাবরেটরিতে সংগ্রহ করা নমুনার স্তূপ বাড়তে থাকলেও পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষার ফল নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে অনেক ক্ষেত্রে। রিপোর্ট দিতে সময় লাগছে অনেক। অনেকে ৪/৫ দিনেও রিপোর্ট পাননি বলে অভিযোগ করছেন। সমস্যা সমাধানে নতুন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতদিন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সার্বিক বিষয় তত্ত্বাবধান করে আসছিল জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গত দেড় সপ্তাহ ধরে এই দায়িত্বটি পালন করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঢাকার বাইরে থেকে নমুনা সংগ্রহ করত না আইইডিসিআর। ফলে দেশব্যাপী গড়ে ওঠেনি নমুনা সংগ্রহের প্রস্তুতি। হঠাৎ দায়িত্ব পেয়ে এখনও সামাল দিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা সংগ্রহের জন্য দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। অনেক জায়গায় নমুনার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নমুনা সংগ্রহ, নমুনা পাত্রজাত করা এবং নমুনা পাঠানোর ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকছে। এ কারণেই নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে বেশি সময় নেয়া হচ্ছে। প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে দৈনিক সংগৃহীত নমুনার সংখ্যা কম থাকার বিপরীতে দিনের পর দিন ঘুরেও নমুনা পরীক্ষা করাতে না পারার বিষয়টি সাংঘর্ষিক বলে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেছেন, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ল্যাবটেরির সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪১টিতে উন্নীত করা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহের গতি আরও বাড়াতে প্রায় ১২ হাজার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দেশের করোনা পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে ব্যাপক নমুনা পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই। দৈনিক প্রায় ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঘোষণা দেয়ার পরও দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা প্রত্যাশিত হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় সামগ্রিক নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কার্যক্রমটি সমালোচনার মধ্যে পড়েছে। অনেকে চেষ্টা করেও করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করাতে পারছেন না। যারা পরীক্ষা করিয়েছেন, তাদের কেউ কেউ ফল জানতে পারছেন না। কয়েকটি ল্যাবরেটরিতে সংগ্রহ করা নমুনার স্তূপ বড় হচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তা, ভুক্তভোগী মানুষ এবং ল্যাবরেটরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে করোনা পরীক্ষা নিয়ে এমন জটিলতার চিত্র পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় করোনার পরীক্ষা নিয়ে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সমস্যার বিশালতা অনুধাবন করতে পারেনি। স্বাস্থ্য অধিদফতর কিছুটা দেরিতে পরীক্ষা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি এবং নমুনার মানের ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়গুলো দ্রুত পর্যালোচনা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা পরিস্থিতিকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণার আগে থেকেই রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যাপারে জোর দিয়ে আসছে। সংস্থাটি বলছে, চিকিৎসা ও সংক্রমণ প্রতিরোধে রোগ শনাক্ত হওয়া দরকার। পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা ॥ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষা নিয়ে চলছে নানা জটিলতা। এতদিন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সার্বিক বিষয় তত্ত্বাবধান করে আসছিল জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গত দেড় সপ্তাহ ধরে এই দায়িত্বটি পালন করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঢাকার বাইরে থেকে নমুনা সংগ্রহ করত না আইইডিসিআর। দায়িত্ব নেয়ার পর সারাদেশ থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজে হাতে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। নির্ধারিত ল্যাবরেটরিগুলো ছাড়াও সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে সীমিত সংখ্যক বুথের মাধ্যমে স্থাপনের কাজ চলছে। সারাদেশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে দক্ষ জনবল সঙ্কটে পড়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সীমিত সংখ্যক সরকারী মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট দিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই সঙ্কট উত্তরণে তাড়াহুড়া করে নমুনা সংগ্রহে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের হেলথ প্রোভাইডারদের সম্পৃক্ত করার ঘোষণা দিয়ে সমালোচনায় পড়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। নমুনা সংগ্রহের কাজটি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের পক্ষেই দক্ষতার সঙ্গে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব। নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা পরিচালনা, ফল জানানো এবং শনাক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষার ফল নিয়ে সন্দেহ ॥ বিভিন্ন সময় একই ব্যক্তির স্বল্প সময়ের মধ্যে পজিটিভ এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই আরেকটি পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ার ঘটনা ঘটছে। আবার নেগেটিভ থেকে হঠাৎ করেই পজিটিভ হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর উত্তরায় নিজের মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারছিলেন না চিকিৎসক ছেলে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফল দেখতে চেয়েছিল। রাজধানীর একটি ছোট ক্লিনিকে রেখে তার মায়ের নমুনা পরীক্ষা হয়। ১২ এপ্রিল আইইডিসিআরে দেয়া সনদে দেখা যায়, মা করোনায় আক্রান্ত নন। চিকিৎসক ছেলে জানান, সনদ পাওয়ার পরপরই মাকে আমরা রাজধানীর একটি বড় হাসপাতালে ভর্তি করাই। মাকে তারা লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত আইইডিসিআরকে দিয়ে পরীক্ষা করায়, যা পরিবারের সদস্যরা জানতেন না। ১৩ এপ্রিল আইইডিসিআরের দেয়া সনদে দেখা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। এক দিনের ব্যবধানে কি এটা সম্ভব বলে প্রশ্ন তোলেন ওই চিকিৎসক। ওই হাসপাতাল চিকিৎসকের মাকে আর রাখেনি। বাধ্য হয়ে তাকে উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে স্থানান্তর করেন ছেলেরা। তিনি ভাল হয়ে উঠছিলেন। সরকারী ওই হাসপাতাল নমুনা পরীক্ষা করায়। ২২ এপ্রিল আইইডিসিআরের সনদ বলছে, তার শরীরে করোনা ছিল না। ১০ দিনের ব্যবধানে এটা কি হওয়া সম্ভব? সব নমুনা সঠিক সময়ে পৌঁছে না ॥ নমুনা সংগ্রহ দেশব্যাপী করার কারণে সঠিক সময়ে নমুনা সংগ্রহে জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন ল্যাবটেরিতে জমা হচ্ছে সংগৃহীত নমুনা। এই জমে থাকা নমুনা জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সিভিল সার্জন জনকণ্ঠকে জানান, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে সংগৃহীত নমুনাসমূহ নির্বাচিত ল্যাবগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সংগৃহীত নমুনাসমূহ অনেক সময় সঠিক সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে এতে কোন সমস্যা হবে না বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, সংগৃহীত নমুনাগুলো বিশেষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যারা আগে নমুনা দিচ্ছেন, তাদের পরীক্ষা আগে হচ্ছে। কিন্তু অনেকে যোগাযোগ করে দিনে দিনেই পরীক্ষা করাতে পারছেন। অল্প সময়ে পরীক্ষার ফলও জানতে পারছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইডিসিআরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রভাবশালীদের অনুরোধ রাখতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ ও ফল জানাতে জটিলতা হচ্ছে। নমুনার মান নিয়ে প্রশ্ন ॥ অনেক জায়গায় নমুনার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েকটি ল্যাবরেটরিতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, অনেক সময় মানসম্পন্ন নমুনা আসছে না। অর্থাৎ নমুনা সংগ্রহ, নমুনা পাত্রজাত করা এবং নমুনা পাঠানোর ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা শনাক্তের পরীক্ষার জন্য নাক ও গলার লালার নমুনা সংগ্রহ করতে হয় বিশেষ কাঠির (সোয়াব স্টিক) মাধ্যমে। এই নমুনা বিশেষ তাপমাত্রায় পাত্রে রেখে তা ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হয়। কাজটি করেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা। নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রশিক্ষণ দরকার হয়। মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক টেকনোলজিস্ট নেই ॥ বাংলাদেশ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ১০ বছর ধরে টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনা শনাক্তে ল্যাবের সংখ্যা বাড়ালেও প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের অভাবে ঠিকভাবে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না বলে মনে করছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সাবেক মহাসচিব মোঃ সেলিম মোল্লা জনকণ্ঠকে জানান, মাঠপর্যায়ে যাদের দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে সেগুলো যথাযথভাবে সংগ্রহ না হওয়ায় পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না। ফলে সারাদেশ থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি জানার সুযোগ মিলছে না স্বাস্থ্য বিভাগের। সরকারী হাসপাতালে কর্মরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদেরকে দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে করোনা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব হলেও বর্তমানে করোনা রোগী দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায়, রোগীর সংখ্যা এবং পরীক্ষা কেন্দ্র বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারী পর্যায়ে সীমিত সংখ্যক মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের দিয়ে সুষ্ঠুভাবে এ কাজ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাছাড়া করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় নিয়োজিত ৩৫ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং অনেকে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। নমুনা সংগ্রহ করছেন প্রায় ৫০০ জন। চিকিৎসক ও নার্সদের মতো সরকারীভাবে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মোঃ সেলিম মোল্লা। ল্যাবগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আইইডিসিআর ॥ এ বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু করেছিল আইইডিসিআর। তখন আইইডিসিআর বলেছিল, মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরি দেশে যথেষ্ট নেই। তাই যন্ত্র থাকলেও সবাইকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হবে না। কারণ, সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে ল্যাবরেটরির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু সেই সময়েও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ছাড়াও আরও অন্তত দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল, যাদের মানসম্পন্ন ল্যাব ছিল। কিন্তু সে সময় তাদের ব্যবহার করা হয়নি। এখন অনেকেই পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দিচ্ছে সরকার। এদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে ॥ দেশের করোনা পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। বিষয়টি অনুধাবন করে নমুনা পরীক্ষার জন্য একের পর এক নতুন ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে সরকার। কিন্তু করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি অনুযায়ী নমুনা পরীক্ষার হার প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছতে পারছে না। তবে দৈনিক ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষার টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিদ্যমান ল্যাবগুলো দিয়ে দৈনিক প্রায় ১৬ হাজার নমুনা পরীক্ষা করানো সম্ভব ॥ বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিটি করোনা নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রতিটি পলিমার চেইন রিএ্যাকশন (পিসিআর) মেশিনে প্রতি শিফটে গড়ে ৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফটে পরীক্ষা করানো সম্ভব। অর্থাৎ সব কিছু ঠিক থাকলে ২৪ ঘণ্টায় একটি পিসিআর মেশিনে মোট ২৭০টি নমুনা পরীক্ষা করানো যায়। আইইডিসিআর’র ল্যাবে ৭টি, আইসিডিডিআর’বি ল্যাবে ৮টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় ল্যাবে দুটিসহ চলমান ৪১টি ল্যাবে প্রায় ৬০টি পিসিআর মেশিন চালু রয়েছে। নমুনা সংগ্রহে সারাদেশে বুথ স্থাপন করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ॥ করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারাদেশে প্রায় ৬০০ বুথ করা হবে। বুথ স্থাপনে প্রথমে নজর দেয়া হচ্ছে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর দিকে। এগুলো স্থাপন ও পরিচালনা করবে বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাক। সরকারী ও ব্র্যাক সূত্রে এ কথা জানা গেছে। নমুনা সংগ্রহ করতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হবে না ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া একইরকম আছে। ফলে কাজে সমস্যা তিনি দেখছেন না। আমরা সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছি। আমরা এখন উপজেলা গ্রাম থেকেই কিন্তু নমুনা সংগ্রহ করছি। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এবং ডাক্তাররাও নমুনা সংগ্রহের এই কাজ করছেন। আইইডিসিআর ঢাকার বাইরে নমুনা সংগ্রহ করছিল না। এখনও ঢাকায় আমাদের সঙ্গে ওই কর্মীরাই এই কাজটি করবে। আর পরীক্ষাও হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ল্যাবে। ফলে কোন সমস্যা হচ্ছে না।
×