ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেমডেসিভির প্রয়োগ শুরু ২০ মে

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৩ মে ২০২০

রেমডেসিভির প্রয়োগ শুরু ২০ মে

রশিদ মামুন ॥ আর মাত্র আট দিন পর অর্থাৎ আগামী ২০ মে থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে রেমডেসিভির প্রয়োগ শুরু হতে পারে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্র বলছে রেমডেসিভির এর পরীক্ষার কাজ ১৮ থেকে ১৯ মে’র মধ্যে শেষ হবে। ওষুধের সব গুণাগুণ ঠিক থাকলে দেশে প্রস্তুত করা ওষুধটি মানুষের শরীরে প্রয়োগে কোন বাঁধা থাকবে না। করোনা চিকিৎসায় বিশে^ এখনও পর্যন্ত সব থেকে আলোচিত ওষুধ রেমডেসিভির। ইবোলা ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হওয়া রেমডেসিভির প্রয়োগ করোনা নিয়ন্ত্রণে ভাল ফল দিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের দাবির পর দেশটির খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) রেমডেসিভির প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। আমেরিকার বাইরে বাংলাদেশই প্রথম রেমডেসিভির তৈরি করে ওষুধ প্রশাসনে পরীক্ষার জন্য জমা দেয়া হয়েছে। এখন পরীক্ষা শেষ হলেই দেশের রোগীদের রেমডেসিভির প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। জাপানও সম্প্রতি করোনার চিকিৎসায় রেমডেসিভির প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে ওষুধটি ব্যাপকভাবে উৎপাদনের জন্য রেমডেসিভির এর মূল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্স ভারত এবং পাকিস্তানের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ধারণা করা হচ্ছে একসঙ্গে অনেক ওষুধ প্রস্তুত করে তা বিশ^বাসীর কাছে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে গিলিয়েড। তাদেরই একচেটিয়া ওষুধটি প্রস্তুত এবং বাজারজাত করার স্বত্ব রয়েছে। তবে বিশে^র স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকা দেশগুলো এটি উপেক্ষা করতে পারে। মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুযায়ী ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ওষুধ দুটির পরীক্ষা শুরু করেছি। এখানে তিনটি বিষয় দেখা হয়ে থাকে। এরমধ্যে যেসব উপাদান দিয়ে ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে এবং যে যে অনুপাতে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তার সব কিছু ঠিক আছে কি না। দ্বিতীয়ত এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। এর প্রয়োগের ফলে শিরায় কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় কি না। আর তৃতীয়ত এটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। তিনি বলেন এই তিনটি ধাপের পরীক্ষা শেষ করতে সময় লাগবে আরও ছয় থেকে সাত দিন। অর্থাৎ আগামী ১৮ থেকে ১৯ মে এর মধ্যে রেমডেসিভির পরীক্ষা শেষ হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ওষুধ পরীক্ষাগারের অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেকটি ওষুধ পরীক্ষার পর একটি সেলফ লাইফ দিয়ে বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয়া হয়। এই সেলফ লাইফ ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেহেতু এখন দুর্যোগকালীন সঙ্গত কারণে ছয় মাসের সেলফ লাইফ দিয়ে রেমডেসিভির ওষুধটি বাজারে ছাড়া হচ্ছে। শতভাগ মৃত্যু প্রতিরোধী না হলেও করোনাভাইরাস পরীক্ষায় রেমডেসিভি আশার আলো দেখতে পেয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। বলা হচ্ছে রেমডেসিভির প্রয়োগে মানুষ ১১দিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রেও ব্যাপকভাবে রেমডেসিভির প্রয়োগ শুরু হয়নি। দেশে রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমোদন পাওয়া আটটি কোম্পানির মধ্যে দুটি কোম্পানি ইতোমধ্যে উৎপাদন করে ওষুধ প্রশাসনে অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছে। দুটিই দেশের খ্যাতিমান ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। শুধু দেশে নয় দেশের বাইরেও সুনামের সঙ্গে ওষুধ রফতানি করছে প্রতিষ্ঠান দুটি। কোম্পানি দুটি হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস। ওষুধ প্রশাসন সূত্র বলছে ৭ মে বেক্সিমকো এবং ৮ মে এসকেএফ রেমডেসিভির পরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসনে জমা দিয়েছে। সেই হিসেবে বেক্সিমকোর নমুনা জমা পড়েছে ৫দিন আর এসকেএফ এর নমুনা জমা পড়েছে ৪দিন। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে কোম্পানিগুলো রেমডেসিভার বাজারজাত করার অনুমোদন পাবে। জানতে চাইলে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে ওষুধটি তারা বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এটি নির্ভর করছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদনের পর। এখন পর্যন্ত করোনার চিকিৎসার পুরো দায় সরকার কাঁধে নিয়েছে। করোনার পরীক্ষা থেকে শুরু করে সেবা দেয়ার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রস্তত করেছে। অতিমাত্রায় ছোঁয়াছে বলে করোনা চিকিৎসায় খুব একটা এগিয়ে আসেনি বেসরকারী খাত। স্বাস্থ্য অধিদফতর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত করছে। ফলে এখন রেমডেসিভার এসব হাসপাতালেই কোম্পানিগুলো সরবরাহ করবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি জানান, আগামী ২০ মে থেকে দেশে রেমডেসিভির প্রয়োগ শুরু হবে। যদিও এই পরিকল্পনা ঠিক থাকছে কি না এবং ওষুধটির মূল্য এবং সরবরাহের অন্যান্য দিক জানার জন্য মঙ্গলবার কয়েক দফা চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। আক্রান্তের তীব্রতা অনুযায়ী রেমডেসিভির প্রয়োগ করতে হয়। রোগীর অবস্থা বুঝে পাঁচ থেকে ১০ ডোজ রেমডেসিভির শিরায় দিতে হয়। এসকেএফ তাদের তৈরি করে রেমডেসিভির এর গোত্রের রেমিভির ওষুধের প্রতি ডোজের দাম নির্ধারণ করেছে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা। সেই হিসেবে ৫ দিনের ডোজের জন্য প্রয়োজন হবে ২৭ হাজার ৫০০ টাকা আর ১০ দিনের জন্য ৫৫ হাজার টাকা। তবে একেবারে তৃণমূলের মানুষের জন্য এই দাম খানিকটা বেশিই বলা চলে। তবে ওষুধটি প্রয়োগের আগে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের বিষয়ে উচ্চ পর্যায় থেকে কোন সিদ্ধান্ত আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত মাসের মাঝামাঝি থেকেই গিলিয়েড সায়েন্স এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে রেমডেসিভির প্রয়োগে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়ার দাবি করছিল। গিলিয়েড এর নিজস্ব গবেষণায় বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তের এক হাজার ৬৩ জন রোগীকে রেমডেসিভির প্রয়োগ করা হয়। গবেষণার ফলে এটি প্রয়োগে ১৫ দিনের জায়গায় ১১ দিনেই অর্থাৎ সুস্থ হওয়ার সময় ৩১ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। হোয়াইট হাউসে ২৯ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হলে মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের চিকিৎসক ডাঃ এ্যান্থনি ফাউসি বলেন, এটি প্রমাণ হয়েছে যে একটি ওষুধ এ ভাইরাসটিকে আটকাতে পারে। তবে করোনা চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে এই আশায় দেশে রেমডেসিভির প্রস্তত করার কাজ শুরু করেছিল ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো।
×