ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ছে

২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার এডিপির খসড়া চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১৩ মে ২০২০

২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার এডিপির খসড়া চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করছে পরিকল্পনা কমিশন। যা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় এবারের এডিপিতে স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। এছাড়াও দেশের মেঘা ৭ প্রকল্পে বরাদ্দ রেখেছে ৩৪ হাজার দুই শ’ ৬৬ কোটি টাকা। মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের সভাকক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিতসভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এনইসি সভায় নতুন এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। জানা গেছে, নতুন এডিপির আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচ করা হবে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাদে)। পরে সংশোধনের মাধ্যমে সংশোধিত এডিপির আকার হয় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে নতুন এডিপিতে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, করোনার কারণে এডিপিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা খসড়াটি তৈরি করলাম। এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এডিপি চূড়ান্ত করা হবে। ৭ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৪ হাজারের বেশি ॥ জানা গেছে দেশের ৭টি মেগা প্রকল্পে খসড়ায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪ হাজার দুই শ’ ৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা। মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত নির্মাণ প্রকল্পে ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকা, পদ্মা রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া রয়েছে। এছাড়াও রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত আরও ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে ১৫০০ কেটি টাকা খসরায় বরাদ্দ রেখেছে। এ বিষয়ে পরিকিল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা খসড়া অনুমোদন করেছি মাত্র, চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, করোনা বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে সংশোধিত এডিপির তুলনায় বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। তুলনামূলক বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ৯২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অন্যদিকে, নতুন এডিপি’তে কৃষি খাত পাচ্ছে ৮ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার ৬৭২ কোটি ১১ লাখ টাকা। তুলনামূলক বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এছাড়াও, ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে খাতভিত্তিক বরাদ্দে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে পরিবহনখাতে প্রায় ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, টাকার হিসাবে ৫২ হাজার কোটির ওপরে। এরপরে ভৌত অবকাঠামো খাতে ২৫ হাজার কোটির ওপরে, বিদ্যুতখাতে ২৪ হাজার ৮০৪, শিক্ষাখাতে ২৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ১৮ হাজার ৪৫৮, পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৫ হাজার ৫৫৫, স্বাস্থ্যখাতে ১৩ হাজার ৩৩, কৃষিখাতে ৮ হাজার ৩৮২, পানিসম্পদ খাতে ৫ হাজার ৫২৭ ও জনপ্রশাসন খাতে ৪ হাজার ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এদিকে, করোনার প্রভাবে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে কমছে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ। নতুন এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে এর পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। করোনাভাইরাসের কারণে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে কমছে উন্নয়ন প্রকল্প। বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৮টি (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া)। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৪৪টি। ফলে নতুন অর্থবছরে কমছে ১৫৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পসহ মোট বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৮৪৭টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৬০০টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪৩টি, জেডিসিএফ প্রকল্প একটি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১০৩টি প্রকল্প রয়েছে। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৬৭৭টি। ফলে মোট প্রকল্প থেকেও কমছে ১৭০টি উন্নয়ন প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার মতে, ১৯ মার্চ সংশোধিত এডিপি অনুমোদন হওয়ার পর থেকে আর কোন একনেক বৈঠক হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ সময়ের মধ্যে অন্তত ১০টি একনেকবৈঠক হতো। বৈঠকগুলোতে কমপক্ষে অর্ধশত নতুন প্রকল্প অনুমোদন পেত।
×