ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আসন শূন্য ঘোষণা করে চিঠি যাবে নির্বাচন কমিশনে

ত্রাণ দুর্নীতিতে জড়িত জনপ্রতিনিধিরা এবার স্থায়ী বহিষ্কার

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১৩ মে ২০২০

ত্রাণ দুর্নীতিতে জড়িত জনপ্রতিনিধিরা এবার স্থায়ী বহিষ্কার

মশিউর রহমান খান ॥ ফেঁসে যাচ্ছেন ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি বা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারগণ। জড়িতদের এবার সাময়িক নয়, স্থায়ী বহিস্কার করার দিকেই যাচ্ছে সরকার। ত্রাণের মালামাল বিতরণ বা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও জেলা পরিষদ সদস্যসহ স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এই প্রথমবারের মতো সরকার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত যাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই এসব চেয়ারম্যান মেম্বারগণকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। একইসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের আসনগুলোকে শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দেয়া হবে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনাকালীন বা যে কোন সময় যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ও কোন প্রকার ছাড় না দিতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে ১২ মে পর্যন্ত মোট ৫৫ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার অপরাধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়নর পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাদের নিজ পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ৩৩ জন ইউপি মেম্বার, ১ জন জেলা পরিষদ সদস্য ও ১ জন পৌরসভার কাউন্সিলর রয়েছেন। একইসঙ্গে এসব জনপ্রতিনিধিদের কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না সেজন্য তাদের প্রত্যেককে কারন দর্শানোর নোটিস (শোকজ লেটার) প্রদান করা হয়েছে। অপরদিকে বেশ কিছু জনপ্রতিনিধি হাতেনাতে ত্রাণের মালামালসহ ধরা পড়েছে। যাদের পুলিশের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া কিছু জনপ্রতিনিধি বর্তমানে মামলা হওয়ায় পলাতক রয়েছেন। আবার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সূত্র জানায়, ত্রাণ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে পুলিশ নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা ছাড়াও, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইওি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বা খাদ্য মন্ত্রণালয় মামলা দায়ের করেছে। এছাড়াও ওএমএসের চাল আত্মসাতের দায়ের মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে ত্রাণ আত্মসাত দুর্নীতির আওতাভুক্ত হওয়ায় ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে শপথ ভঙ্গ করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদক দেশের বিভিন্ন সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর যেসব জনপ্রতিনিধি নোটিসের জবাবে তার জড়িত হওয়ার কথা অস্বীকার করে মন্ত্রণালয়ে নির্দিষ্ট সাত দিনের মধ্যেই নোটিসের জবাব দিতে সক্ষম হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছে। উক্ত কমিটি প্রতিটি জেলার উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) কে প্রধান করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব ও স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটি করা হবে। উক্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ে তদন্তপূর্বক অতি দ্রুতই মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট প্রদান করবে। রিপোর্ট প্রাপ্তির পরপরই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করতে উক্ত জনপ্রতিনিধি জড়িত কি না তা কঠোরভাবে যাচাইবাছাই করবে। এছাড়া কমিটি উক্ত জনপ্রতিনিধি জড়িত এমন সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসার খবর ও ঘটনার সকল তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। অপরদিকে কিসের ভিত্তিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো তাও সরেজমিনে যাচাই করবে কমিটি। মূল কথা যেহেতু সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাই তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জড়িত ব্যক্তি যে দলেরই হোক তদন্তে প্রমাণ পেলে কাউকেই কোন রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার আইনানুযায়ী সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রদর্শন করবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, যৎসামান্য জড়িত প্রমাণ পেলেই আইনানুগ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় যেসব প্রতিনিধি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নোটিসের কোন জবাবই দেননি তাদের স্থায়ীভাবে বরখাস্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে কোন সরকারই জনপ্রতিনিধিদের অনিয়মের বিষয়ে এত কঠোরতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে কিছু জনপ্রতিনিধি কারাগারে অবস্থান করে বা মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়ালেও কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব দেয়ায় মন্ত্রণালয় তাদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করবে কি না সেজন্য কমিটি গঠন করলেও যেসব জনপ্রতিনিধি মন্ত্রণালয়ের শোকজের কোন জবাবই দেয়নি তাদের অপরাধকে এক পর্যায়ের ধৃষ্টতাই মনে করছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া স্থানীয় সরকার আইনানুযায়ীও নোটিসের জবাব দেয়া বাধ্যতামূলক অন্যথায় তাদের কোন জবাব পাওয়া যায়নি মর্মে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থার দিকে এগুচ্ছে মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, যে সব জনপ্রতিনিধিদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করেই কেবল বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসব জনপ্রতিনিধিদের সাময়িক বরখাস্ত করতে জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) এর সঙ্গে উক্ত জনপ্রতিনিধির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ত্রাণ আত্মসাত বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িতে প্রমাণ পেলেই তার বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের করা, ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা, কেন স্থায়ীভাবে আইনানুযায়ী উক্ত জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে কারণ দর্শানো নোটিস প্রদান করা (শোকজ করা) হাতেনাতে প্রমাণ পেলে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
×