ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিকতা ও আন্তরিকতা

প্রকাশিত: ২১:১১, ১৩ মে ২০২০

মানবিকতা ও আন্তরিকতা

বৈশ্বিক মহামারীকালে মানুষের মনের ওপর চাপ পড়া স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকতে থাকতে এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের খবর সম্পর্কে প্রতিনিয়ত অবগত হয়ে নিজেকে পুরোপুরি শান্ত রাখা প্রায় অসম্ভব। মনের ওপর চাপ পড়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে অমানবিক করে তোলাটাও অস্বাভাবিক, অসমীচীন। মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব। কেন সে মনুষ্যত্ব হারাবে, হয়ে উঠবে অমানবিক! করোনাকালে দেশে কিছু বিচ্ছিন্ন নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটেছে। করোনাক্রান্ত রোগী সন্দেহে নিজের জন্মদাত্রীকে জঙ্গলে ফেলে রাখার ঘটনাও আছে। আবার এমন চিত্রও রয়েছে যে, এ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর মতো কাউকে না পেয়ে পিতা পরম যতেœ নিজের বালক সন্তানকে নিয়ে নিজেই তুলেছেন এ্যাম্বুলেন্সে। কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কী কি করণীয় আমরা জানি। করোনাক্রান্ত রোগীর সেবা কি করছেন না ডাক্তার-নার্সরা? হাতে গ্লাভস বা দস্তানা এবং মুখে মাস্ক পরে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তাই পরিবারে কেউ করোনাক্রান্ত হলে তাকে দূর দূর করার কিছু নেই। কিন্তু সমাজে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে পরিবারের নিকটজনের কোভিড-১৯ হলে বা শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে অন্য সদস্যরা তাকে প্রায় পরিত্যাগ করছেন। এতে স্বামী-স্ত্রীর মতো নিকটতম সুন্দরতম সম্পর্কের ভেতরও অমানবিকতার ছায়া এসে ভর করছে। আন্তরিকতার ঘাটতি পড়ছে। এসব বিষয় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত বিচলিত করছে। তিনি মর্মাহত হয়েছেন। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে তা উঠে এসেছে। তার বক্তব্যে সমকালীন সমাজের বাস্তব চিত্রটিই উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। প্রথমত, মহামারীকালে কেউ রোগাক্রান্ত হলে মনোবল অটুট রাখা চাই। এটি তিনি দেশে প্রথম রোগীটি শনাক্তের দিন থেকেই বলে আসছেন। দফায় দফায় স্বাস্থ্যবিধির উল্লেখ করে তা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছেন। রবিবারের বক্তব্যেও তিনি প্রত্যেকের নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবারের অসুস্থ ব্যক্তির দেখভালের দিকটি তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সহজাত মনুষ্যত্ববোধ ও আন্তরিকতার দিকটিও তুলে ধরেন মমতাভরে। মানুষ মানুষের জন্য এই আপ্তবাক্য উচ্চারণ করে তিনি বলেন, মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের প্রতি। ব্যক্তিগত পর্যায়েও মানুষ সমাজের অসহায় মানুষকে সহায়তা দিচ্ছে এই দুঃসময়ে। এটাই বাঙালীর বৈশিষ্ট্য। বাঙালীর মধ্যে মানবিকতাবোধ বিদ্যমান। সেটির প্রমাণ এই ক্রান্তিকালেও পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। করোনার রোগীকে দাফনের জন্য তারা নিজে থেকেই এগিয়ে এসে কাজ করছেন। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। সেখানেও তিনি মানুষের প্রতি মানুষের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের মন নরম, তারা অনেক আন্তরিক। এই জাতিগত বৈশিষ্ট্যটিকে কিছুতেই ম্লান হতে দেয়া চলবে না। মানবিকতার পতাকা চরম ক্রান্তিকালেও উর্ধে তুলে ধরা চাই। আমাদের প্রত্যাশা, কর্মহীন অভাবী মানুষের জন্য সচ্ছল ব্যক্তিরা নিয়মিতভাবে তাদের মানবিকতা ও আন্তরিকতা বজায় রাখবেন। উদারভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন। মহামারীর এই সঙ্কটকালে একজন মানুষও যেন না খেয়ে না থাকে। একজন অসুস্থ মানুষও যেন মনুষ্যত্ববোধের কল্যাণধারা থেকে বঞ্চিত না হয়। একসময়ে এই দুঃসময় অবশ্যই কেটে যাবে। তখন যেন পরম গৌরব নিয়ে বলতে পারি, আমরা মহামারী অতিক্রম করেছি পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধে, চিরায়ত মানবিকতায়, মানবসম্মত মনুষ্যত্ববোধে।
×