ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

চীনে বেকারত্বের রেকর্ড

প্রকাশিত: ২২:০৬, ১২ মে ২০২০

চীনে বেকারত্বের রেকর্ড

নোভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে চীনে সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক সঙ্কট দেশটির সামাজিক অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটিতে বেকারত্ব বেড়ে গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছেছে। গত কয়েক বছরে সেবাখাতে কর্মসংস্থান বাড়ায় দেশটির শ্রমবাজারে স্থিতিশীলতা নেমে আসে। তবে এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বেকারত্ব বাড়ায় শ্রমবাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। এদিকে লকডাউন তুলে নেয়া হলেও দেশটিতে এখনও বন্ধ রয়েছে অনেক দোকান ও রেস্তরাঁ কেননা আগের মতো ক্রেতা নেই। অভিবাসী কর্মীরা কারখানা ফের চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন কিন্তু পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা কমতে শুরু করায় সেটি পিছিয়ে যাচ্ছে। মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করছে চীন। কিন্তু বেশ কয়েকটি খাত পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনের শ্রমবাজার বিভিন্ন দিক থেকে চাপে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক সঙ্কোচনের শিকার হয়েছে। শ্রমবাজারে চলমান সঙ্কটের কারণে বেজিংয়ের সামাজিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, চলতি দশকে মাথাপিছু দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা এবং দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাউথওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি অব ফিন্যান্স এ্যান্ড ইকোনমিক্সের দুই অর্থনীতিবিদ উয়াংজুন এবং কিন ফ্যাং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বেজিংয়ের অর্থনীতির ওপর চাপ আরও বেড়েছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান পরিস্থিতির ক্রমাগত আরও অবনতি ঘটছে।’ তবে চীনের বেকারত্ব পরিস্থিতির সঠিক চিত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কোন স্পষ্ট তথ্য দিচ্ছে না যাতে চাকরির বাজারের অবস্থা বোঝা যায়। এছাড়া, অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, সরকারী তথ্যে বেকারত্বের সঠিক সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হতে পারে। চীনে ১৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে এবং অভিবাসী কর্মী আছেন ১৭ কোটি ৪০ লাখ, যারা নিজেদের অঞ্চল ছেড়ে শহরে আসেন কাজ করতে। বেকারত্বের হারে এই দুই ধরনের কর্মীর সঠিক তথ্য উঠে না আসার আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৮ সালের আগে বেজিং একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিল, যেখানে শহরের সেসব কর্মীর তথ্য ছিল, যারা সরকারী তালিকায় ছিলেন এবং চাকরি হারিয়েছেন। শহরে কাজ করেন কিন্তু স্থানীয় নন, এমন অভিবাসী কর্মীরা চাকরি হারানোর পরও এ পরিসংখ্যানে স্থান পাননি এবং সরকারের সামাজিক সুরক্ষা সহায়তাও তারা পাননি। তাছাড়া, বেকার হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য একজন কর্মীর বয়স ১৬ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে হতে হয়। ফলে সরকারী পরিসংখ্যানে শ্রমবাজারের সঠিক চিত্র উঠে আসে না। ২০০৮-২০০৯ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় ২ কোটিরও বেশি অভিবাসী কর্মী চাকরি হারালেও বেকারত্বের হার হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০১৮ সাল থেকে প্রতি মাসে বেকারত্বের হার গণনায় জরিপ করে চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস)। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারি মাসে হয় ৬ দশমিক ২ শতাংশ। কিছু অর্থনৈতিক কার্যক্রম ফের শুরু হওয়ায় মার্চে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ১ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শহুরে কর্মসংস্থান কমেছে মোট ৬ শতাংশ। এর মানে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ চাকরি হারিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে শহুরে কর্মসংস্থান বেড়েছিল ৮৩ লাখ। কর্মসংস্থান কমার এ হার গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এনবিএসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রায় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ কর্মী কম বেতন বা বিনা বেতনে ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে চীনের ১৪ কোটি ৯০ লাখ স্বনির্ভর ব্যবসায়ীর আয় কমেছে গড়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। শহর এলাকায় আয় কমার হার ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ ল্যারি হু বলেন, ‘চলতি বছরের শেষে বেকারত্বের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।’
×