ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিক কাজে জার্সি ব্যবহার করতে পেরে খুশি মুন্নার স্ত্রী সুরভি মোনেম, ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে রেফারি তৈয়ব হাসানের জার্সি

মুন্নার ঐতিহাসিক জার্সি নিলামে বিক্রি

প্রকাশিত: ২২:১৫, ১১ মে ২০২০

মুন্নার ঐতিহাসিক জার্সি নিলামে বিক্রি

জাহিদুল আলম জয় ॥ বাংলাদেশের ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র মোনেম মুন্না। ‘কিং ব্যাক’ খ্যাত সাবেক এই কিংবদন্তি ফুটবলারের ঐতিহাসিক দু’টি জার্সি নিলামে বিক্রি হয়েছে। কারণটা সবারই জানা। মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যেই মহতি এ উদ্যোগ নেন মুন্নার স্ত্রী সুরভী মোনেম। শনিবার রাতে করোনাভাইরাসের কারণে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের সাহায্যার্থে মোনেম মুন্নার জার্সি নিলামে তোলা হয়েছিল। প্রথমে একটি জার্সি নিলামে ওঠার কথা থাকলেও পরে সমর্থকদের চাওয়ায় আরেকটি জার্সি নিলামে ওঠে। দু’টি জার্সি মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকায়। একইসঙ্গে নিলামে উঠেছিল সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান সামসুজ্জামানের ২০১৩ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রেফারি হিসেবে সাফের ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করা জার্সিটি। যার ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছিল দুই লাখ টাকা। জার্সিটির দাম আগেই ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বলে রেখেছিলেন সাতক্ষীরা চেম্বর অব কমার্সের চেয়ারম্যান নাসিম ফারুক খান মিঠু। শেষ পর্যন্ত তিনিই এই দামে কিনেছেন ঐতিহাসিক জার্সিটি। নিলাম প্রতিষ্ঠান ‘অকশন ফর এ্যাকশন’ মুন্নার জার্সির ভিত্তি মূল্য ধরেছিল দুই লাখ টাকা। নিলামে তা বিক্রি হয় ভিত্তি মূল্যের চেয়ে এক লাখ বেশি টাকায়। অকশন ফর এ্যাকশনের মাধ্যমে নিলামে তোলা হয় মুন্নার ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপজয়ী দলের জার্সিটি। ৩ লাখ টাকায় জার্সিটি কিনেছেন কার্নিভাল ইন্টারনেটের স্বত্বাধিকারী। নিলাম চলাকালীন মাহবুব নামে এইচএসবিসির সিইও, যিনি আবাহনী এবং মুন্নার ভক্ত, আরেকটি জার্সির আবদার করেন সুরভী মোনেমের কাছে। ফলে আবাহনীর হয়ে মুন্নার পরিহিত ‘২’ নম্বর জার্সিটি তিনি কিনে নিয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকায়। সবমিলিয়ে মুন্নার দুই জার্সি বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকায়। নিলামে সরাসরি অংশ নেন মোনেম মুন্নার স্ত্রী সুরভী মোনেম, রেফারি তৈয়ব হাসান। সঙ্গে লাইভ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তারকা ফুটবরার কায়সার হামিদ, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, সত্যজিৎ দাস রুপু। নিলাম প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক লাইভে মুন্নার স্ত্রীর সুরভী মোনেম বলেন, মুন্না বেঁচে থাকলে আরও বেশি করত। কেউ একজন আমাকে এসএমএস করে বলল, করোনাভাইরাসের এই সময়ে যদি মুন্নার জার্সি নিলামে তুলে দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারি। এ জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া। তিনি আরও বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি খুশি। আমি অনেক অনেক খুশি হয়েছি। আমার উদ্দেশ্য গরিব মানুষকে সাহায্য করা। মুন্নার আমানত সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারাটা সৌভাগ্যের। করোনা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য প্রয়াত ফুটবলার, ‘কিং ব্যাক’ খ্যাত মোনেম মুন্নার একটি ঐতিহাসিক জার্সি নিলামে তোলার ঘোষণা দেন তার স্ত্রী সুরভী মোনেম। দেশীয় নিলামকারী প্রতিষ্ঠান অকশন ফর এ্যাকশনের মাধ্যমে নিলামে তোলা হয় মোনেম মুন্নার ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ জয়ে যে জার্সি পরে খেলেছেন সেটি। ওই বছর ঢাকায় হওয়া প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ লাল দল। যা বাংলাদেশের প্রথম কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা। ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৯ বছর বয়সে কিংবদন্তি মুন্না সবাইকে অশ্রুজলে ভাসিয়ে চলে যান না-ফেরার দেশে। এত অল্পবয়সে তার চিরবিদায়ে ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছিল বিষাদের ছায়া। ২০০০ সালের প্রারম্ভে হঠাৎ করেই কিডনি ফেল করলে ডাক্তাররা দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। ওই বছরের মার্চে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় তার শরীরে। মুন্নার বড় বোন শামসুননাহার আইভী তাকে একটি কিডনি দান করেন। এরপর টানা পাঁচ বছর ভাল থাকলেও ২০০৫ সালে মুন্না আবারও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে চিরকালের জন্য তিনি বিদায় নেন। ফুটবলমোদীদের কাছে মুন্না নামটি এখনও অন্যরকম এক চমকের ব্যাপার। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ারই অন্যতম সেরা ফুটবলার। স্টপার পজিশনে খেলেও যিনি সর্বসাধারণের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। মাঠে শুধু চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য নয়, দক্ষ নেতৃত্ব এবং ফুটবলে দুর্দান্ত পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করে রীতিমতো ‘ফুটবল আইকনে’ পরিণত হয়েছিলেন। আর এ কারণেই ‘কিং ব্যাক’ উপাধি তার জন্য ছিল অবধারিত। ঢাকার মাঠের সবচেয়ে দামী ফুটবলারও ছিলেন মুন্না।
×