ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এম আব্দুল মোমিন

সুস্বাদু অর্থকরী ফসল কাজু বাদাম

প্রকাশিত: ০০:২৬, ১০ মে ২০২০

সুস্বাদু অর্থকরী ফসল কাজু বাদাম

কাজু বাদাম বিদেশী ফসল। একটা সময় ধারণা করা হতো এটি আমাদের দেশে চাষ করা সম্ভব নয়। দেশের চাহিদার পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে- সৌদি খেজুর, ভিয়েতনামী নারিকেল, চায়না কমলাসহ আর দশটি বিদেশী ফলের ন্যায় এখন দেশেই চাষ হচ্ছে এই সুস্বাদু অর্থকরী ফসল। শুধু চাষই হচ্ছে না বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এর প্রক্রিয়াজাত কারখানাও। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এখন এই কারখানায় প্রক্রিয়াজাতকৃত কাজু বাদাম বিশ্ববাজারে রফতানির প্রস্তুতি চলছে। দামে চড়া তাই এটি চাষে লাভও বেশি। দেশে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাজু বাদাম বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। আগ্রহী পাঠক আসুন জেনে নেই কাজু বাদামের উৎপাদন প্রযুক্তি, পুষ্টিগুণ ও দেশে এটি চাষে সাম্প্রতিক সাফল্যের গল্প। বাংলাদেশে কাজু বাদামের প্রাপ্তিস্থান খাগড়াছড়ির পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের খেজুরবাগান, হর্টিকালচার সেন্টার, সেনানিবাস, নারানখাইয়া, পানখাইয়াপাড়া, কমলছড়ি ও জামতলী এলাকায় কাজু বাদামের গাছ চোখে পড়ে। এ ছাড়া রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারেও রয়েছে কাজু বাদামের বাগান। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজু বাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি আকারে কাজু বাদামের চাষ হয়েছে। অনাবাদী জমিতে পরিকল্পিতভাবে কাজু বাদাম চাষের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির কৃষিপণ্যের মধ্যে কাজু বাদামও একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারে। প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি কাজু বাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়। পাহাড়ী এলাকায় সাধারণত কাজু বাদামকে দা দিয়ে কেটে খুঁচিয়ে শাঁস বের করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়। লবণ-জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়। এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজু বাদাম পাওয়া যায়। আর মিষ্টি স্বাদের কাজু বাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেয়া হয়। বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্যও কাজু বাদাম ব্যবহার করা হয়। কারখানায় প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি ভিন্ন এবং অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ শারীরিক উপকারিতার দিক থেকে কাজু বাদামের কোন বিকল্প হয় না। এতে উপস্থিত প্রোটিন, এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। শুধু তাই নয়, কাজু বাদামে ভিটামিনের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চিকিৎসকরা একে প্রকৃতির ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যদি কাজু বাদাম খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে নানা পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়, সেই সঙ্গে আরও কিছু উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন এক মুঠো করে মাজু বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আসলে এই বাদামটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে। কাজু বাদামে থাকা প্রম্যান্থো সায়ানিডিন নামে একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রাকৃতিক উপাদানটিতে থাকা জিঙ্ক, ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। প্রতিদিন কাজু বাদাম খেলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। এতে উপস্থিত এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একদিকে যেমন ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে, তেমনি নানাবিধ হার্টের রোগ থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কাজুতে রয়েছে ওলিসিক নামে এক ধরনের মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, যা দেহে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কাজে আসে। তাই তো নিয়মিত এই বাদামটি খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। কাজু বাদাম খেলে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। কপার হলো সেই খনিজ, যা চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে শক্তপোক্তা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে কাজুতে। আমাদের দেশে যে হারে সুগার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বাদাম খাওয়ার প্রয়োজন বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে- প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবারটি নিয়মিত খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে শরীরের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। কাজু বাদাম চাষে সাফল্যের গল্প চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ডেইলপাড়ায় দেশের প্রথম কাজু বাদামের সমন্বিত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ। সম্প্রতি তাঁর এই প্রক্রিয়াজাত কারখানা পরিদর্শন করে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘খুবই ভাল উদ্যোগ। আমার খুব ভাল লেগেছে। মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেছে। মুগ্ধ হওয়ার মতো, চমৎকৃত হওয়ার মতো উদ্যোগ। কৃষি খাতের উন্নয়নে আমার এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।’ শাকিল আহমেদ বলেন, ২০১০ সালে পাহাড়ী এলাকার উৎপাদিত ৩০ টন কাজু বাদাম তিনি ভারতে রফতানি করেন। বাংলাদেশ থেকে সেটিই ছিল কাঁচা কাজু বাদাম রফতানির প্রথম চালান। এরপর ২০১৬ সালে দেশে প্রথম কাজু বাদাম প্রস্তুতকরণের সমন্বিত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাড়ে তিন হাজার কেজি কাজু বাদাম রফতানি চুক্তিপত্র হয়েছে বলেও জানান এই উদ্যোক্তা।
×