ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাযোদ্ধা

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১০ মে ২০২০

করোনাযোদ্ধা

চলমান মহামারীতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে পুলিশে। মোট আক্রান্ত মানুষের ১০ শতাংশই পুলিশ সদস্য। দুর্যোগে কর্তব্যপালনে একনিষ্ঠ, অবিচল ও অঙ্গীকারাবদ্ধ থেকে ইতোমধ্যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দেশের পুলিশ সদস্যরা। অভূতপূর্ব বিধ্বংসী কোভিড-১৯ রোগের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ তথা করোনাযোদ্ধাদের ভেতর বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। করোনাযোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালে। আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি তাদের থাকতে হচ্ছে বলে তারাও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। অন্যদিকে পুলিশ তো কেবল হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন না, সমাজের সর্বত্র সব পরিবেশে তাদের অবাধ চলাচল। ফলে শতভাগ নিজেকে সুরক্ষিত রেখে জনতার মাঝে গিয়ে অর্পিত কর্তব্য পালন অনেকটাই দুরূহ। ফলে তাদের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। মহামারীর সময়ে মানুষকে বাঁচাতে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ-র‌্যাব সদস্যরা নিরলস কর্তব্যপালনের যে দৃষ্টান্ত ইতোমধ্যে স্থাপন করেছেন তা সুমহান ও সাধুবাদযোগ্য। তাদের আত্মনিবেদন ও কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মদানের বিষয়টি জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রাখবে। মহামারীতে পুলিশের কাজের ব্যাপ্তি অনেক। সামাজিক দূরত্ব সবাই যেন বজায় রাখে, সে কাজ করছে পুলিশ। লকডাউন যেন ঠিকঠাক মানা হয়, সেটা নিশ্চিত করছে, ত্রাণ বিতরণ করছে, মৃতদেহের সৎকার করছে, তল্লাশিচৌকিতেও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সেদিক থেকে পুলিশ একেবারে সামনে থেকে ভাইরাসের মোকাবেলা করছে। তাই তাদের ঝুঁকিটাও বেশি। তাদের নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি আরও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা ও অনুসরণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই অনেক পুলিশ সদস্যের পক্ষে কথিত শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের কাজের ধরন ও প্রকৃতিই এমন। তবু আমরা বলব দায়িত্ব পালনরত পুলিশ-র‌্যাব সদস্যদের নিজেকে সুরক্ষার বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার অবকাশ রয়ে গেছে। সেবা সংস্থার বৈশিষ্ট্য ও অঙ্গীকার অনুযায়ী তাদের কর্তব্য পালনের জন্য সমাজের কৃতজ্ঞতা জানানো এবং তাদের কাজে সহযোগিতা করা মানবিক দায়িত্ব। আমরা আগেও বলেছি, তাদের কাজ আরেকটু সহজ হতে পারে যদি নাগরিকরা যথাযথ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখেন। করোনাযোদ্ধা পুলিশ নিজে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসছেন এমন সংবাদ আমাদের স্বস্তিও যোগায়। করোনাজয়ী পুলিশ আবার করোনার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রত্যয় যখন ব্যক্ত করেন, তা শুনে সমাজ আশাবাদী হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হাওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন করোনাজয়ী এমন কয়েকজন পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বলেন। রোগমুক্ত প্রতিটি পুলিশ সদস্যই আবারও কর্তব্য পালনে নিয়োজিত হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তাদের ভাষায়, ‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পিছপা হবো না।’ শাবাশ, দেশমাতৃকা এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত প্রতিটি সদস্যের কাছ হতে। আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি মোকাবেলা করেই দেশে পুলিশ সদস্যরা প্রতিনিয়ত তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাংবাদিকরাও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সমীহ জাগানো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের থেকে সবার শিক্ষা নেয়ার আছে। করোনাকে রুখে দেয়ার জন্য সরকার নাগরিকদের ঘরে থাকার জন্য বিশেষ ছুটি ঘোষণা করেছে। এই ছুটিতে তাই সবারই কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সেটি হলো বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া। আর বাইরে গেলে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। যেমন, মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে হাত জীবাণুমুক্ত রাখা।
×