ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তানোরে মৃত ব্যক্তির নামে চাল উত্তোলন

প্রকাশিত: ২০:০২, ৯ মে ২০২০

তানোরে মৃত ব্যক্তির নামে চাল উত্তোলন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন ১১ মাস আগে, কিন্তু তার নামে বরাদ্দকৃত কার্ডে দুই দফা চাল উত্তোলন হয়েছে। আবার একই ব্যক্তির নামে একাধিক কার্ড দেয়া হয়েছে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার মু-ুমালা পৌরসভায় করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় ওএমএস কার্ডের তালিকা নিয়ে এমন অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, মুন্ডৃমালা পৌরসভার সাদিপুর গ্রামের মানুরুদ্দীনের ছেলে আমজাদ হোসেন প্রায় ১১ মাস আগে মারা গেছেন। কিন্তু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর তালিকায় তার নাম রয়েছে। তার কার্ড নম্বর ৪৯৮। গত এপ্রিল ও মে মাসে স্থানীয় পরিবেশক (ডিলার) দেবানন্দ বর্মণের কাছ থেকে ওই কার্ডে ১০ টাকা কেজি দরের চাল কেনা হয়েছে। এই তালিকা তার দুই ছেলের নামও রয়েছে। পৌরসভার এক নম্বর প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলর আমির হোসেন আমিন বলেন, ‘আমজাদ মারা গেছেন প্রায় ১১ মাস আগে। তার নামে কীভাবে কার্ড হয়েছে, সেই কার্ড দিয়ে কারা চাল তুলছে, তা জানেন না। তিনি বলেন, এই কার্ড তৈরিতে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এ জন্যই এমনটি হয়েছে। এ ছাড়া তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার এসেছে, এমন অন্তত তিনটি ঘটনা পাওয়া গেছে। পৌরসভার হাসনাপাড়া এলাকার কসিম উদ্দিনের ছেলে আরিফুল ইসলামের নামে তিনটি কার্ড করা হয়েছে। তার কার্ড নম্বরগুলো যথাক্রমে ১৫০, ৪১৮ ও ৪৮২। একই এলাকার শাহজালের ছেলে জহিরুল ইসলামের নামে দুটি করে কার্ড করা হয়েছে। জহিরুল ইসলামের নামে করা কার্ডের নম্বর ৪৬৯ ও ৪১৬। মুন্ডৃমালা এলাকার আফসারের ছেলে আমিনুল ইসলামের নামে দুটি কার্ড। তার কার্ডের নম্বর হচ্ছে ১৬৮ ও ২১৮। এই সাতটি কার্ডে এপ্রিল ও মে মাসে ২১০ কেজি চাল কেনা হয়েছে। তবে তাদের নামে একাধিক কার্ড করার বিষয়টি তারা জানেন না বলে দাবি করেছেন। মুন্ডৃমালা পৌরসভার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চালের দুজন পরিবেশক রয়েছেন। তাদের একজনের নাম জুবায়ের হোসেন। তিনি তানোর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ রকম একটি কার্ড জব্দ করেছেন। অন্য নামের কার্ড নিয়ে মুহবুল নামের একজন চাল নিতে এসেছিলেন। তিনি ওই কার্ডের চাল দেননি। জুবায়ের বলেন, কাউন্সিলররা তালিকা দিয়েছেন। তাদের পক্ষে সবাইকে চিনে দেয়া সম্ভব নয়। এদিকে পৌরসভার ১ নম্বর প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর আমির হোসেন আমিনসহ পাঁচজন কাউন্সিলর এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ওএমএসের চাল বিতরণে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া পরিবারভিত্তিক মানবিক সহায়তা কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগেও স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিভাগীয় কমিশনার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী বলেন, তাড়াহুড়ার কারণে এটা হতে পারে। তিনি বলেন, আত্মসাতের জন্য এগুলো করা হয়নি। ভুল হতে পারে, হলে সংশোধন করা হবে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, মেয়রকে বিপাকে ফেলতে প্যানেল মেয়র এমন কা- করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো এই জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরে মুন্ডৃমালা পৌরসভার সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। বরিশাল স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, প্রতিজন জেলের জন্য বরাদ্দকৃত ৮০ কেজি চালের পরিবর্তে ২৩ কেজি করে চাল বিতরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মাগুরা-কুনিয়াকান্দি গ্রামের। শুক্রবার সকালে ওই ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী জেলে ইদ্রিস মাতুব্বরসহ অন্যান্য জেলেরা অভিযোগ করেন, তাদের ওয়ার্ডের আটজন জেলের প্রত্যেকের জন্য ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করা হয়। মঙ্গলবার জেলেদের চাল ইউনিয়ন পরিষদে বসে বিতরণ শুরু হলে তারাও চাল আনতে যায়। কিন্তু ৮০ কেজি চাল বিতরণের মাস্টাররোলে তাদের স্বাক্ষর নেয়া হলেও ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী তাদের ২৩ কেজি করে চাল দিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে তাদের (জেলে) বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদর্শন করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলেও জেলেরা উল্লেখ করেন। নড়াইলে আত্মসাত নিজস্ব সংবাদদাতা নড়াইল থেকে জানান, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের তালিকাভুক্ত ক্রমিকের ১৫৩, ১৭০, ১৭৩, ১৭৪ ও ৮৪ নংসহ ৫৭টি কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে বরাদ্দকৃত ১৭১০ কেজি করে ১৪ মাসে প্রায় ২৪ মেট্রিকটন চাল বিভিন্ন ভুয়া নামে তুলে আত্মসাত করেছেন। বিগত ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ ভিজিডি চাল বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়। এ বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পর গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিনে খবর নিলে এলাকার মানুষজনের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অভিযোগে জানা গেছে, কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান ও ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বর রবিউল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া নাম ঠিকানা ও একই নাম একাধিকবার ব্যবহার করে ওই ইউনিয়নের ৫৭টি কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে ১৭১০ কেজি করে ১৪ মাসে প্রায় ২৪ মেট্রিকটন ভিজিডি চাল আত্মসাত করেছেন। তালিকায় নাম আছে অথচ চাল থেকে বঞ্চিত ঈশানগাতী গ্রামের খিজার শেখের মেয়ে জলি বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৩ বছর আগে উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের চাঁচই গ্রামের হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। তার ৮ ও ১০ বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। জলি স্বামী-সন্তান নিয়ে লোহাগড়ার পোদ্দার পাড়ায় থাকেন। তার নামে কাশিপুর ইউনিয়নে ভিজিডির তালিকায় নাম দিয়ে চাল আত্মসাত করা হয়েছে। জলি বেগম আরও বলেন, তার ওয়ার্ডের মেম্বর রবিউল ইসলামের কাছ থেকে কয়েক দফায় ভিজিডির চালের প্রতি ৩০ কেজি বস্তার ৯ বস্তা চাল ৫৪শ’ টাকায় কিনেছেন। সর্বশেষ করোনা শুরুর আগে তিনি প্রতি বস্তা চাল ৬শ’ টাকা করে ১৮শ’ টাকায় তিন বস্তা চাল কিনেছিলেন। ঈশানগাতী গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে আদরী খানম জানান, ৪ বছর আগে মল্লিকপুর ইউনিয়নের আলমগীর হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। তার নামে ভিজিডির চালের কার্ড আছে তা তিনি জানেন না এবং কোন চালও তিনি উত্তোলন করেন নাই। বসুপটি গ্রামের মুকুল হোসেনের স্ত্রী আন্না বেগম বলেন, আমার নামে ভিজিডি চালের কার্ড হইছে, এই প্রথম আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান ও মেম্বর রবিউল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া ও একই নাম একাধিকবার ব্যবহার করে মোট ৫৭ জনের নামে কার্ডের বিপরীতে প্রায় ২৪ মেট্রিকটন চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পর গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিনে খবর নিলে এলাকার মানুষজনদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। চাল আত্মসাতের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান ওই গ্রামের সংশ্লিষ্ট গ্রাম পুলিশ দিয়ে উপকার ভোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ডেকে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদে এনে কার্ড হারিয়েছে মর্মে থানায় জিডি করিয়ে উল্লেখিত চারজনকে গত রবিবার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিগত ১৪ মাসের ৫৬ বস্তা চাল দিয়েছেন। শরীয়তপুর নিজস্ব সংবাদদাতা শরীয়তপুর থেকে জানান, ভিজিএফের ৩৫ বস্তা চাল চুরির অপরাধে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার আরশীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ সামসুদ্দোহা রতন ও একই ইউনিয়নের সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করেছে সখিপুর থানা পুলিশ। শুক্রবার সকালে দুইজনকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল সামাদ বাদী হয়ে ২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। আরশীনগর ইউনিয়ন পরিষদে জেলেদের মাঝে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ শেষে ৩৫ বস্তা চাল চুরি করে রাখা হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আল নাসীফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সখিপুর থানা পুলিশের সহায়তায় তাদের হাতেনাতে আটক করে। চরফ্যাশনে নিজস্ব সংবাদদাতা চরফ্যাশন থেকে জানান, ভোলার চরফ্যাশনের আহমদপুর ইউপিতে জেলেদের জন্য সরকারী বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল বিতরণে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও চাল বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ভিজিএফ চালসহ ইউপি সদস্য কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে শুক্রবার জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। জানা যায়, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন মাহমুদ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় আহমদপুর ১নং ওয়ার্ডের ইউনুস রাড়ির বসত ঘরের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে জেলেদের জন্য সরকারী বরাদ্দকৃত পাঁচ বস্তা ভিজিএফ চাল উদ্ধার করেন। কুড়িগ্রাম স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রাম খাদ্য বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত বিশেষ ও এমএস চাল বিতরণে ডিলারদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা। কুড়িগ্রাম পৌরসভায় ১০ জন ডিলারের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি চাল ও ১৮ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ২০ কেজি করে চাল ও আটা প্রতি সপ্তাহের রবিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সরবরাহের কথা থাকলেও ডিলাররা নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ না করে সময়ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কুড়িগ্রাম ডায়াবেটিক মোড়ে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ডিলারের ওজনে কম দেয়া ও আটা ময়দা না দেয়ার অভিযোগ করেন। তবে ডিলাররা বলেন, তারা খাদ্য বিভাগ থেকে চাল ও আটা নিয়ে এসে তালিকা করে দিতে একটু সময় বেশি লাগে।
×