স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার রোগীর সংখ্যা। তবে এখনও ব্যতিক্রম রাজশাহী মহানগরী। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিভাগীয় এই শহরটি। যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপের কারণে এখন পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর এলাকা রয়েছে করোনামুক্ত।
রাসিক সূত্র জানিয়েছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চের প্রথম থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। মেয়রের উদ্যোগে ১৯ মার্চ রাজশাহী থেকে সারাদেশের বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়। এছাড়া মার্চের প্রথম থেকেই করোনায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সচেতনতা সৃষ্টিতে দেড় লাখ লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, ডিস লাইন ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে তথ্যচিত্র ও বক্তব্য প্রচার করা হয়। এছাড়া রাসিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং সকল মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। করোনা মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ও ৩০টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশ ফেরত ও দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জেলা থেকে আগত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চলছে তদারকি। ২০ হাজার মাস্ক ও এক হাজার লিটার স্যানিটাইজার বিতরণ, নগরীর ২৭টি পয়েন্টে স্যানিটিইজার দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ৫টি ওয়াটার ট্যাঙ্কার দিয়ে মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও হাট বাজারে এবং ৩০টি ওয়ার্ডের সর্বত্র হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানো কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম জোরদারের পাশপাাশি স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য নিরাপদ পোশাক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও স্যানিটাইজার প্রদান করা হয়। করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবায়ও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটকে শুধু করোনা রোগী চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত, করোনা রোগী শনাক্তে স্থাপন করা হয়েছে ল্যাব। সিটি হাসপাতালকে করোনা কর্নার হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। চিকিৎসকদের সুরক্ষায় পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে বহনে প্রস্তুত রয়েছে আলাদা এ্যাম্বুলেন্স। করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে দাফনে কবরস্থান নির্ধারণ ও সহায়ক টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কর্মহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমেও এগিয়ে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। সরকারী সহযোগিতা ছাড়াও মেয়রের ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রদান করা হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে গঠন করা হয়েছে ত্রাণ তহবিল। মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ত্রাণ তহবিলে নগদ অর্থ ও চাল, ডাল দিচ্ছেন অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।
রাসিকের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৫১৩ টন সরকারী চাল বরাদ্দ পেয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। জনপ্রতি ১০ কেজি করে ৫১ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে এই চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিত্তবানদের সহযোগিতায় মেয়রের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২২৩ টন চাল, ৪১ টন ডাল ও ৫২ টন আলু প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া রাসিক ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে ৪ হাজার জনকে ৫০০ করে মোট ৬০ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ৩০টি ওয়ার্ডের ৬০০ জন মায়ের প্রত্যেককে ৫০০ টাকা নগদ অর্থ এবং ৪৮০ শিশুর প্রত্যেককে এক প্যাকেট করে গুঁড়ো দুধ প্রদান করা হচ্ছে।