ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোজাউল করিম খোকন

গুডবাই লাভার বয়

প্রকাশিত: ০১:০৪, ৭ মে ২০২০

গুডবাই লাভার বয়

১৯৭৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছিল ‘ববি’, এই চলচ্চিত্র বদলে দিয়েছিল হিন্দী রোমান্টিক সিনেমার মেজাজ। টিনএজ লাভস্টোরি সিনেমার ‘ট্রেন্ডসেন্টার’ হিসেবে আজও চিহ্নিত হয় রাজকাপুর পরিচালিত এই সিনেমা। দুই কিশোর-কিশোরীর প্রেমের গল্প দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল সব শ্রেণীর দর্শক। দিনের পর দিন হাউজফুল ছিল সিনেমা হলগুলো। এই সিনেমার মাধ্যমে রাতারাতি দারুণ জনপ্রিয় করে তুলেছিল, ঋষিকাপুর ও ডিম্পল কাপাডিয়াকে। ২০ বছর বয়সী ঋষি প্রথমবারের মতো নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ১৬ বছর বয়সী ডিম্পলের বিপরীতে। ঋষি-ডিম্পল জুটি আধুনিক সময়ের প্রেমিক-প্রেমিকা জুটির আইডল হয়ে উঠেছিলেন। যদিও ঋষিকাপুর এর আগেই রূপালি পর্দায় শিশু অভিনেতা হিসেবে অভিষেক হয়েছিল‘ মেরানাম জোকার ছবিতে’, যে ছবির প্রধান তারকা ছিলেন বাবা বিখ্যাত অভিনেতা চিত্রনির্মাতা রাজকাপুর। ‘মেরানাম জোকার’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে ঋষির অভিনয় ছিল হৃদয় ছোঁয়া, প্রথম অভিনীত ছবিতেই অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেই ‘ববি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। বলিউডের কিংফ্যামিলি হিসেবে বিবেচিত কাপুর খান্দানের সন্তান হওয়ার সুবাদে হয়তো তার আত্মপ্রকাশটা ছিল পারিবারিক পৃষ্ঠপোষকতায়। কিন্তু বলিউডে ঋষিকাপুর নিজেকে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেছেন আপন যোগ্যতায়। বাবার বিখ্যাত প্রযোজন সংস্থা আর কে ফিল্মসের বিভিন্ন সিনেমায় নায়ক সাজলেও একজন সুপারস্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ঋষিকাপুর অভিনীত ভিন্ন ব্যানারের সিনেমাগুলো। বলিউডে এভারগ্রীন রোমন্টিক হিরো হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে নিজেকে দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে রাখতে পারাটা ছিল তার এক অনন্য কৃতিত্ব। ‘ববি’ ছবিতে ডিম্পল কাপাডিয়ার বিপরীতে প্রেমিক সেজে তার ক্যারিয়ারে শুরু। এরপর একে একে বলিউডের তাবৎ সুন্দরী নায়িকার সঙ্গে পর্দা জুটি বেঁধেছেন লাভারবয় ঋষিকাপুর। তার বয়স বাড়লেও নায়ক হিসেবে নিজেকে তরতাজা তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপনের ব্যাপারে তার মধ্যে এক ধরনের আন্তরিকতা স্বতঃস্ফূর্ততা এবং প্রাণময়তা ছিল। তার সাজ পোশাক, হেয়ার স্টাইল-সবকিছুতেই ঝকঝকে তকতকে উজ্জ্বল তারুণ্যের প্রকাশ ছিল। বয়স বাড়লেও যে কারণে বিভিন্ন প্রজন্মের সুন্দরী গ্ল্যামারাস নায়িকাদের বিপরীতে কোন সময়ে কোনভাবেই বেমানান মনে হয়নি। তার বিপরীতের নায়িকারা তার চেয়ে বয়সে অনেক কম হলেও সবার সঙ্গে রোমান্টিক অভিনয়ে ঋষিকাপুরের স্বতঃস্ফূর্ততা এবং স্মার্টনেস দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে বার বার। স্ত্রী নিতুসিংএর সঙ্গে অনেকগুলো ছবিতে রোমন্টিক জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন ঋষি। পর্দা জুটি হিসেবে দারুণভাবে সফল ঋষি-নিতু বাস্তব জীবনেও সফলসুখি দম্পতি। প্রেম পর্বের শুরুর দিন থেকে মরণঘাতী ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই পর্যন্ত একসঙ্গে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন তারা । অনস্ক্রিনহিট জুট থেকে অফস্ক্রি দাম্পত্য, বলিউডের ‘পাওয়ারকাপল’ হিসেবে ঋষি ও নিতু কাপুর ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। চড়াই-উৎরাই এসেছে দাম্পত্যে, তা নিয়ে খবরের শিরোনামও হয়েছে কিন্তু হাল ছাড়েননি নিতু। কখনও বদমেজাজি, কখনও শিশুসুলভ, কখনও ভালনারেবল ঋষিকে শক্ত হাতে সামলে রেখেছিলেন তারলা ইফপার্টনার। ঋষি নিজেও স্বীকার করতেন, ‘আই অ্যামঅ্যাটাফ ম্যান টুলিভ উইথ’। চার দশকের অভিনয় জীবন একশের উপর সিনেমা কাপুর খান্দানের নীল রক্তে ভর করে নিজের অভিনয় দক্ষতাতেই রূপালি পর্দায় অসংখ্য মণি-মাণিক্য ছড়িয়ে রেখেছেন ঋষিকাপুর-‘মেরানাম জোকার’ দিয়ে পথ চলা শুরু করে ‘ববি’, ‘অমর আকর্ব অ্যান্টিনি’, ‘ইয়েওয়াদারাহে’, ‘চাঁদনি’, বোলরাধে বোল’, ‘কাভিকাভি’, ‘হামকিসিসে কম নেহি’, ‘নসিব’, ‘সারগাম’ , ‘সাগর’ , দামিনীর মতো ছবিগুলোতে নিজেকে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে ঋষিকাপুর ভিন্নমাত্রার অভিনয়েও চমক দেখিয়েছেন অগ্নিপথ’, ‘ডি ডে’, ‘কাপুর এ্যান্ড সন্স’, ‘মুল্ক’, ‘১০২ নটআউট’, প্রভৃতি সিনেমায় বিচিত্র চরিত্রে। কেউ কেউ ঋষি কাপুরকে নায়িকা প্রধান ছবির নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। একথাও ঠিক চাঁদনি, দামিনী, তাওয়াইফ, প্রেমগ্রন্থ, সারগাম, এর মতো নারীকেন্দ্রিক ছবিগুলোতে শ্রীদেবী, মিনাক্ষী শেষাদ্রি, রতি অগ্নিহোত্রী, মাধুরী দিক্ষিত, জয়া প্রদাদের মতো ডাকসাইটে অভিনেত্রীদের বিপরীতে নায়কচরিত্রে তাকে দেখা গেছে। যেখানে নায়িকারা প্রাধান্য পেয়েছেন বেশি পর্দায়। তা সত্ত্বেও ঋষিকাপুর এই ছবিগুলোতে অভিনয়ে আপত্তি করেননি। অবলীলায় অভিনয় করে গেছেন। নিজের অভিনীত চরিত্রটিকে চমৎকার অভিনয়গুণে উজ্জ্বল করে তুলেছেন পর্দায়। সময়ের পরিক্রমায় লাভারবয় এই জাত অভিনেতা সব শ্রেণীর দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন তার দুর্দান্ত অভিনয়ের জাদুতে।
×