ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা দুর্যোগকালে মানবিক সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

ঘরবন্দী মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন শিল্পী স্পর্শ

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৭ মে ২০২০

ঘরবন্দী মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন শিল্পী স্পর্শ

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ তরুণ নাট্যকার, অভিনেত্রী ও সংগঠক জি এম স্পর্শ। ঢাকা মৌলিক নাট্যদলের সাধারণ সম্পাদক জি এম স্পর্শ একজন অভিনেত্রী এবং নাট্যকার হিসেবেও নন্দিত। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই করোনায় সৃষ্ট সঙ্কটময় মুহূর্তে তিনি ক্লান্তিহীন ছুটছেন, ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, দিচ্ছেন নানা সহায়তা, জোগাচ্ছেন সাহস আর প্রেরণা। দেশে মহামারী করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই জনসচেতনতায় দৃঢ়ভাবে তৎপর তিনি। আদ্যোপান্ত সেবামূলক মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ জি এম স্পর্শ দেখিয়ে দিয়েছেন নারী হলেও ইচ্ছাশক্তি মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে। করোনা ঝুঁকি নিয়ে নিম্নবিত্ত মানুষের সঙ্গে ভালবাসার এক মেলবন্ধন তৈরি করেছেন। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে তার নিজ উপজেলা দেবহাটার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত অসহায় দুস্থ মানুষের দ্বারে দ্বারে তার ছুটে চলা এই নারী দিনে দিনে যেন এক স্বপ্নময় সমাজ বুনন করে চলেছেন এই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জানা গেছে, জি এম স্পর্শ সরকারী সহায়তার অপেক্ষা না করে নিজ উদ্যোগে তিনি সাহায্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে নিজ হাতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। করোনায় সৃষ্ট এই সঙ্কটকালীন মুহূর্তে খাদ্য সহায়তা ছাড়াও তিনি অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেককেই নগদ অর্থসহায়তাও প্রদান করেছেন। এই দুঃসময়ে সর্বদা তাদের পাশে রয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, করোনাকালীন জনসচেতনতা তৈরির লক্ষে ইজিবাইকে চড়ে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তজুড়ে মাইকিং করছেন। কখনও কখনও হ্যান্ড মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন বাজার ঘাট ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে। একজন নারী হয়েও একদিনও থেমে থাকেনি তার এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা। হিন্দু ধর্মালম্বী হওয়া সত্ত্বেও তিনি করোনার এই সঙ্কটময় মুহূর্তে মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন ও এতিমখানার নিয়মিত খোঁজ নিয়ে সহায়তা করছেন। নিজে রান্না করে এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছেন। এছাড়াও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের ঘরেও এসব খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। রমজানের প্রথম দিন থেকেই নিজের বাড়িতে দাওয়াত করে প্রতিদিন বেশ কিছু রোজাদারদের ইফতার করাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছেন। এভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সেতুবন্ধন তৈরি করে চলেছেন জি এম স্পর্শ। বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি নানা সময়ে গাড়ি ভর্তি টাটকা সবজি ও তরকারি নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে ঘুরে পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের ঘরে। ঘামঝরা দুপুরে এভাবে অবিরাম ছুটে চলেছেন দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। একজন নাট্যকর্মীর এরূপ ভালবাসা দেবহাটাবাসীকে যেন নতুন রূপে প্রাণসঞ্চার করেছে। সমাজসেবার পরিচিতির সূত্রে বছর খানেক আগে নিজ এলাকা সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সেই থেকে গণমানুষের সেবায় নিজেকে আরও বেশি করে নিয়োজিত তিনি। এ জন্য প্রশংসিতও হয়েছে তিনি। করোনার কারণে গৃহবন্দীদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। জি এম স্পর্শ সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ১ বছরে দায়িত্বের গ-ি পেরিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছেন। হিসেবে সরকারী যে সম্মানি ভাতা পান তার ৩ মাসের পুরো অর্থ এখন ব্যয় করছেন মানুষের কল্যাণে। এ প্রসঙ্গে জিএম স্পর্শ বলেন আমরা এখন একটি কঠিন সময় পার করছি। সকলে সচেতন থাকুন নিয়ম মেনে চলুন। আমি দেবহাটাবাসীর কল্যাণে কাজ করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আমার বিশ্বাস সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই এই বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। আপনাদের পরামর্শ নিয়ে আরও বেশি বেশি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। মহান স্রষ্টার ইচ্ছা আর আপনাদের ভালবাসাই আমার মূল শক্তি। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আর আপনাদের ভালবাসা, বিশ্বাস ও সহযোগিতায় আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করব। জি এম স্পর্শ’র স্বামী বিশিষ্ট নাট্যনির্মাতা জি এম সৈকত। একজন মানবিক মানুষ হিসেবে মানুষের স্বপ্ন সারথি হয়ে বেঁচে থাকতে চান। এ জন্য একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করছেন। সমাজের মানবিক মানুষের অন্যান্য দৃষ্টান্ত এই জিএম স্পর্শ এগিয়ে যাবেন তার কাক্সিক্ষত লক্ষে। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ভাল থাকুন সেই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
×