ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

একাই লড়ছেন প্রধানমন্ত্রী

এ সময় কার কী ভূমিকা আমলনামা হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৫ মে ২০২০

এ সময় কার কী ভূমিকা আমলনামা হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ দেশের দুর্যোগকালে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতাকর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা কে কি ভূমিকা রাখছেন তার আমলনামা তৈরি করছে সরকার। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সঙ্কটময়কালে চিকিৎসা ব্যবস্থা, ত্রাণের তালিকা প্রণয়ন, ত্রাণ বিতরণের অনিয়ম, পোশাক শিল্প, প্রণোদনা প্যাকেজÑ এই পাঁচটি বিষয়কে উপলক্ষ করে সরেজিমন তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে এবং যারা ব্যর্থ হচ্ছেন তারা তিরস্কৃত হবেনÑ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের এটাই লক্ষ্য। করোনার দুর্যোগ শেষে আলোর পথ দেখা দিলে এই দুর্যোগময় মুহূর্তে দলের, সরকারের কার কি ভূমিকা তার মূল্যায়ন প্রতিবেদনের কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক মহলে গোয়েন্দা সংস্থার এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি দাখিল করার পর তার আলোকে সিদ্ধান্ত নিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। দেশের এই মহাদুর্যোগ মুহূর্তে প্রাণঘাতী করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় লড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই। করোনা সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য ৩১ দিক নির্দেশনাসহ স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের জন্য যাদের ওপর ভরসা করেছিলেন তাদের অনেককে পাশে পাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা, পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে দেশের মানুষজনের জীবন-মরণ সমস্যা সঙ্কট উত্তরণের আশার আলো। করোনাভাইরাসের এই মহাযুদ্ধে শুরুতেই একাই লড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৩১ দফা দিক নির্দেশনাসহ স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা প্যাকেজের পরিকল্পনা ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এখন এসব বাস্তবায়নের কাজ। যারা এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে না, যারা এই করোনা মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে না, যারা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এই কর্মপ্রবাহকে ব্যাহত করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা কঠোর এ্যাকশন নেয়া হতে পারে। সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক মহলে এই এ্যাকশন নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে যা পবিত্র ঈদের পর বা করোনা সঙ্কট উত্তরণে অন্ধকার শেষে আলোর পথ দেখা যাবে তখনই দৃশ্যমান হবে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাণঘাতী করোনা মোকাবেলায় যাতে কোন রকম গাফিলতি না হয় এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে যেন বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি না ঘটে, সেই ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার। এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব টিম এবং তাঁর কার্যালয়ের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছেন। করোনা ক্রান্তিকালে যে পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাত বা চিকিৎসা অন্যতম। জীবন বাজি রেখে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক বা কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায়, অনেকেই জীবন দিয়ে হয়েছেন করোনা বীর। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনায় মৃত্যু হতে পারে এমন বিপদ জেনেও অনেক চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা কর্মী কাজ করে যাচ্ছেন, সেবা দিচ্ছেন। দেশের জন্য মানবতার সেবায় কাজ করে জীবন বিলিয়ে দিয়ে অনেককেই করোনা বীর উপাধিও পাচ্ছেন। অথচ করোনার মধ্যেও অনেক মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতাকর্মী, সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী কোন ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছেন ঘরে। এমনকি প্রশ্ন উঠেছে দুর্নীতি, অনিয়ম, চুরি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগের খবর যা, সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক মহলের কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। হাসপাতালে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই সরবরাহ কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন সংস্থাও। তবে যারা সততার সঙ্গে দুর্নীতি অনিয়মের মোকাবেলা করছেন তাদের পুরস্কৃত না করে উল্টা তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকে। এই ধরনের অনিয়মের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়ায় তদন্ত কাজ করে যাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, চাল আত্মসাতের মতো যেসব অভিযোগ উঠেছে তা কারা করেছে, কিভাবে করেছে, দায়ী কারা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার, দলীয় নেতাকর্মী যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান, মেম্বারদের সাসপেন্ড, গ্রেফতার, মামলা দায়ের ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পর তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরাও এ থেকে বাদ নেই। এ বিষয়ে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নর্ধারক মহলে দেয়া হবে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সারাদেশে ত্রাণ বিতরণে যেন কোন অনিয়ম না হয় সেদিকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা যেন দলীয় কোন পদে থাকতে না পারে এবং দলের পরিচয় বহন করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, করোনা সঙ্কটের মধ্যে ত্রাণের তালিকা প্রণয়নের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রথমত স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে যারা বয়স্ক ভাতা বা কোন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী পান না কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনটনের মধ্যে পড়েছে- এরকম একটি তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন, সহযোগিতা করছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগে তালিকায় যেন কোন ধরনের বিচ্যুতি না থাকে, কোন প্রাপ্য লোক যেন বাদ না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এই তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যারাই অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি বা নয়-ছয় করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের মধ্যে পোশাক শিল্প খুলে দেয়ার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তর্কের মধ্যেই তদন্তের নির্দেশ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে পোশাক শিল্পে কিছু কিছু অতি উৎসাহী ব্যবসায়ী তারা নিজেদের মুনাফা লাভের জন্য নানারকম ভুল তথ্য দেয়ার বিষয়টি। দ্রুত পোশাক কারখানা চালুর জন্য প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে কারা? গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলার দূর-দূরান্ত থেকে হেটে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঢাকায় নিয়ে আসার ঘটনার নেপথ্যের কারসাজি খুঁজে দেখা হচ্ছে। ঢাকার শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর কথা বলে ঢাকার বাইরে থেকে শ্রমিক এনে পূর্ণোদ্যমে কাজ করছেন কিভাবে? এই বিষয়গুলো সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক মহলের নজরে এসেছে। এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, করোনা সঙ্কটকালে মানুষজনের দুর্ভোগ লাঘবে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশাল অঙ্কের টাকার প্রণোদনা ঘোষণা শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যে, অর্থনীতিতে প্রাণ চাঞ্চল্যের সুবাতাস বইছে। করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগের মধ্যেও বিশাল অঙ্কের প্রণোদনায় বৃহৎ শিল্প থেকে একেবারে ক্ষুদ্র শিল্প সব শ্রেণীর জন্য এই প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ রয়েছে যাতে সঙ্কটময়কালের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রমাণ দিয়েছেন। এই প্রণোদনা প্যাকেজে যেন কোনরকম দুর্নীতি, অনিয়ম, পক্ষপাত, না হয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন, যার তদন্ত ও নজরদারি করে যাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাও। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনা সঙ্কটময় মুহূর্তে পুলিশ, চিকিৎসক, সংবাদকর্মীসহ সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে জীবন বাজি রেখে মৃত্যুকে পরোয়া না করে মানুষজন বাঁচানোর জন্য লড়াই চালাচ্ছেন তাতে উৎসাহ, প্রেরণা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে, অর্থনৈতিক উত্তরনের মাঠেও প্রধানমন্ত্রী একাই। চিকিৎসা ব্যবস্থা, ত্রাণের তালিকা প্রণয়ন, ত্রাণ বিতরণের অনিয়ম, পোশাক শিল্প, প্রণোদনা প্যাকেজ-এই পাঁচটি বিষয়ে যাতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতায় মানব সেবায় নিয়োজিত থাকেন তার মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রথম দিকেই যখন করোনা সঙ্কট বাংলাদেশে ধেয়ে আসে, তখনই কোন রকম বিলম্ব না করে, যা আছে তাই দিয়েই মোকাবেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। করোনা সঙ্কট কাটিয়ে অন্ধকার শেষে আলোর পথের যাত্রা শুরু হলে করোনা ভাইরাস যুদ্ধের মাঠের লড়াইয়ে কারা অগ্রসেনানী তাদের যথাযথ মূল্যায়ন দৃশ্যমান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×