ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৩ পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ৪ মে ২০২০

২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৩ পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত পুলিশের সংখ্যা। শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ১০৩ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসের সম্মুখযোদ্ধা পুলিশের ৮৫৪ জন আক্রান্ত হলেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের সংখ্যাই বেশি। ইতোমধ্যেই ডিএমপির ৪৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ইতোমধ্যেই পাঁচ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত কোন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু না হলেও এমন পরিস্থিতিতে বাহিনীটির সদস্যদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক কাজ করছে। ব্যারাকে থাকার কারণে এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা নির্দেশনা মেনে না চলার কারণে ঢাকার পুলিশ সদস্যদের আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়ছে বলে দাবি করেছেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম। পুুলিশকে আরও সচেতন হতে প্রতিদিন সচেনতামূলক ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ জানা মাত্র তা স্ব স্ব ইউনিটকে অবহিত করতে নির্দেশনা জারি করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ১০৩ পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ আগের দিন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৪১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্য সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হালনাগাদ ডিএমপির ৪৪৯ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যেই পাঁচ জনের মৃত্যুও হয়েছে। আক্রান্তের হার ডিএমপিতে তুলনামূলক বেশি। এছাড়া সাড়ে ১২শ’ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আর আইসোলেশনে রয়েছেন ৩১৫ জন। হালনাগাদ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র ৫৭ জন পুলিশ সদস্য। যা তুলনামূলকভাবে কম। ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডিএমপির পুলিশ সদস্যের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। ব্যক্তিগত অসচেতনতার পাশাপাশি বসবাস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়মমাফিক ব্যবহার না করাও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। তিনি বলেন, প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়, হাতেকলমে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এ সব বিষয়ে তাদের প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। তারপরও অনেক সময়ই দেখা যায়, অনেক পুলিশ সদস্য এসব নির্দেশনা অমান্য করে ইচ্ছেমতো দায়িত্ব পালন করছেন। আবার অনেকেই রাস্তায় মাস্ক বা হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার না করেই দায়িত্ব পালন করেন। এতে করে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক কারণেই বেড়ে যায়। তাদের নিরাপদ দূরত্ব থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হলেও অনেক সময় সেটা নানা কারণে সম্ভব হয় না। বিশেষ করে জনতা অনেক সময়ই পুলিশ সদস্যদের খুব কাছাকাছি চলে আসে। যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের অনেকেই ব্যারাকে বসবাস করেন। ব্যারাকে গাদাগাদি করে থাকার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। হয়তো দেখা গেল ব্যারাকে থাকা কোন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলেন, প্রাথমিক দিকে যেহেতু করোনাভাইরাসের লক্ষণ বোঝা যায় না, এজন্য তিনি স্বাভাবিক কারণেই ব্যারাকে বসবাস করতে থাকেন। তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। তার থেকে অনেকেরই সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকছে। যদিও প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ বোঝামাত্রই স্ব স্ব ইউনিটকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। তারপরও অনেক সময় সেটি পুরোপুরি পালিত হয় না। কারণ আক্রান্ত সদস্য প্রথমেই বিষয়টি বুঝতে পারেন না। এক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলছেন, সংক্রমণ এড়াতে পুলিশ সদস্যদের থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগে যেখানে একটি গাড়িতে করে ১০ জনকে ডিউটি করতে পাঠানো হতো, এখন তা করা হচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা হচ্ছে। তারপরও প্রতিদিনই পুলিশ সদস্যদের সর্তক করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি জানান, কর্মরত অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেসব পুলিশ কনস্টেবল মারা গেছেন তাদের প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে প্রণোদনা হিসেবে ২৫ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে। তারা পুলিশের নিয়মানুযায়ী প্রাপ্য সুবিধাও পাবেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এএসআই ও এসআইরা এরচেয়ে বেশি টাকা প্রণোদনা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাবেন। এসআই থেকে তদুর্ধ কর্মকর্তাদের বেলায় প্রণোদনার হার যার যার বেতন স্কেল অনুযায়ী দেয়া হবে।
×