ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চারদিনে জ্বর না কমলে শ্বাসকষ্ট হলে পরীক্ষা জরুরী

প্রকাশিত: ২১:৪০, ৪ মে ২০২০

চারদিনে জ্বর না কমলে শ্বাসকষ্ট হলে পরীক্ষা জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারী বিবেচনায় এখন গুরুতর আক্রান্ত বাংলাদেশ। প্রতিদিন বাড়ছে রোগী। মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। এর মধ্যে সামান্য জ¦র, সর্দি হলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক কাজ করছে। কিন্তু ল্যাব স্বল্পতার কারণে ইচ্ছে করলেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন দেশে পুরোপুরিভাবে ২৯টি ল্যাবের কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাই দাবি উঠেছে জেলায় জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তে ল্যাব স্থাপন করার। এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন কোভিড রোগীর রোগের কোন লক্ষণ থাকে না। যেমন দেখা গেছে চীনসহ অন্যান্য দেশে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও। তাই বলে কোভিডের মতো লক্ষণ দেখা দিলেই যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বা কোভিডের পরীক্ষা করতে হবে বিষয়টি তেমন নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর, কাশির মতো কোভিড-লাইক লক্ষণ দেখা দিলে ধৈর্য ধরে প্রাথমিক পর্যায়ে বাসাতেই চিকিৎসা নেয়া যায়। জ্বরের জন্য ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর প্যারাসিটামল ট্যাবলেট আর কাশির জন্য যে কোন একটি এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট প্রতি রাতে খাওয়া যেতে পারে। যদি জ্বর ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে না কমে বরং বাড়তে থাকে কিংবা শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে কোভিডের পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী বলে মনে করেন দেশের খ্যাতনামা দুই চিকিৎসক। একজন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া। অন্যজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করছেন এই দুই চিকিৎসক। করোনা চিকিৎসা সম্পর্কে তারা বলেন, ঘর থেকে বের হওয়া মানা হলেও, তাই বলে রোগ- শোক তো থেমে থাকে না। লকডাউন, সঙ্কুচিত চিকিৎসাসেবা আর পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অবর্তমানে সাধারণ রোগীদের সুযোগ নেই আগের মতো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার। করোনা কালে আমাদের জীবনে আরও অনেক নতুনের মধ্যে অন্যতম সংযোজনটি হচ্ছে টেলি-মেডিসিন। এজন্য এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সরকারী- বেসরকারী হাসপাতাল, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া আর বেশ কিছু নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন। ঘরে বসেই নাগরিক সুযোগ পাচ্ছেন টেলিফোনে চিকিৎসাসেবা নেয়ার। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র চিকিৎসা সহায়তা কমিটি। চলমান লকডাউন শুরুর পরপরই এই কমিটি প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে ফেস্টুন ও ইশতেহারের মাধ্যমে চলমান সঙ্কটকালে করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ১০৮ সদস্যের একটি প্যানেল ঘোষণা করেছে। তবে করোনাকালের এই দিনগুলোতে সবচেয়ে যা জরুরী তা হলো মাথা ঠান্ডা রেখে ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। এই দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, আমরা এখন সবাই কম-বেশি জানি যে অল্পকিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোভিড-এর মূল লক্ষণগুলো হলো জ্বর, শুকনো কাশি আর শ্বাসকষ্ট। এর সঙ্গে কারও-কারও শরীর ব্যথা, ডায়রিয়া আর ঘ্রাণ নেয়ায় সমস্যা থাকতেও পারে। আর সবচেয়ে বড়কথা ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন কোভিড রোগীর তো রোগের কোন লক্ষণই থাকে না। তারা বলেন, মনে রাখতে হবে যদি পরীক্ষায় কোভিড ধরাও পড়ে, কিন্তু শ্বাসকষ্ট না থাকে সেক্ষেত্রেও হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে। যাকে বলা হয়, হোম আইসোলেশন। তবে যদি কোভিড আক্রান্ত রোগীর অন্য কোন অসুখ যেমন ক্যান্সার, ফুসফুস, হার্ট, কিডনি কিংবা লিভারের বড় ধরনের সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন ইত্যাদি থাকে তাহলে তার জন্য হোম আইসোলেশন নয়। একইভাবে ষাটোর্ধ রোগীদের বেলাতেও হোম আইসোলেশন প্রযোজ্য নয়। যখন কেউ হোম আইসোলেশনে থাকেন তখন নিজ বাসায় থাকলেও তাকে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তিনি একটি আলাদা রুমে থাকবেন এবং তার সঙ্গে পরিবারের অন্য কোন সদস্য থাকতে পারবেন না। এমনকি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গেও সাক্ষাত নয়। আর যদি দেখা করতেই হয়, তবে তা করতে হবে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে, ঘরের বাইরে থেকে। তার খাবার-দাবার ঘরের দরজার বাইরে রেখে আসতে হবে। খাবার শেষে পরিবারের সদস্যরা আবার দরজার বাইরে থেকে সেসব সংগ্রহ করে আলাদা করে সাবান দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নেবেন এবং পরিবারের ওই সদস্যটি তার নিজের হাতও ভাল করে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ধুয়ে নেবেন। আইসোলেশনে থাকা রোগীকে সাহায্য করার জন্য পরিবারের এমন একজন সদস্যকে বেছে নেয়া ভাল যার কোন দীর্ঘমেয়াদী রোগ নেই। আইসোলেশন রোগীর জন্য প্রয়োজন পৃথক ওয়াশরুম ॥ সম্ভব হলে আইসোলেশনে থাকা পরিবারের সদস্যটির জন্য একটি আলাদা ওয়াশরুম নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে সেটা যদি কোন কারণে সম্ভব না হয় তবে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহারের পর ওয়াশরুম ব্যবহার করবেন এবং যতটা পারা যায় ভালভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। রোগী করোনামুক্ত যেভাবে ॥ কোভিড আক্রান্ত যেসব রোগীর জ্বর ছিল, তাদের যদি পর-পর তিন দিন জ্বর না আসে কিংবা কাশি, শ্বাসকষ্ট ছিল এমন রোগীদের এসব উপসর্গ কমে আসে তাহলে আশা করা যায় রোগী সেরে উঠেছেন। একইভাবে প্রথম উপসর্গ দেখা দেয়ার সাত দিন পরেও যদি কোন জটিলতা দেখা না দেয় তাহলেও রোগীর সুস্থতার বিষয়ে আশাবাদী হওয়া যায়।
×