ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণপরিবহন চালুর অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ৪ মে ২০২০

গণপরিবহন চালুর অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ করোনা মহামারীর কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ। এক মাসের বেশি সময় দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত অচল থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জরুরী প্রয়োজনেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে প্রাণঘাতী করোনা ঠেকাতেই নেয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। সারাবিশ্বের চিত্র ঠিক একই রকমের। সাধারণ ছুটি বাড়তে পারে ঈদের পর পর্যন্ত। এই প্রেক্ষাপটে সবার উৎকণ্ঠা কবে চালু হবে গণপরিবহন। অনেকে নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ বিমান চালুর প্রস্তুতি রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই সব ধরনের পরিবহনসেবা চালু করতে প্রস্তুত মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনা মহামারী ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নানা বিধিনিষেধের মধ্যে আস্তে আস্তে সব কিছু চালুর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। আমাদের দেশে এখন করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ মাত্রার পর্যায় চলছে। যার ধারাবাহিকতা আরও অন্তত একমাসের বেশি সময় থাকতে পারে। এই বিবেচনায় এখনই পরিবহন চালুর উপযুক্ত সময় আসেনি। তাছাড়া গণপরিবহনে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি মারাত্মক। এই বিবেচনায় দেশে যানবাহন চালুর সিদ্ধান্ত বুঝে শুনে নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। এদিকে কৃষিপণ্য নিয়ে ট্রেন সার্ভিস সীমিত পর্যায়ে চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেলেই আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে প্রস্তুত রেলওয়ে। ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে ট্রেন চালুর বিষয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে অল্প পরিসরে আগামী ১৫ মে থেকে ট্রেন চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে করোনার সামনের দিনগুলোর ওপর। যদি পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে তবেই ট্রেন চালুর বিষয়টি সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে। এদিকে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অভ্যন্তরীণসহ আন্তর্জাতিক বিমান চালুর বিষয়টি নির্ভর করছে সরকার প্রধানের সিদ্ধান্তের ওপর। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ মে থেকে সীমিত পরিসরে আকাশ পথে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হতে পারে। সেইসঙ্গে সীমিত পরিসরে বাস ও ট্রেন চলাচলেরও নির্দেশনা আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালুর চিন্তা হলেও কতটা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ২৪ মার্চ অফিস-আদালত বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। ২৬ মার্চ থেকে সব গণপরিবহন সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ ছুটি তিন দফায় বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করার আভাস মিলেছে। তবে সাধারণ ছুটি থাকলেও ইতোমধ্যে সীমিত পরিসরে গার্মেন্টস কারখানা খুলেছে। সেই সঙ্গে রেস্তরাঁসহ কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতার পথে হাঁটছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার গণপরিবহনও পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়ার কথা ভাবছে। সূত্র বলছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রথম ধাপে ব্যক্তিগত বাহন চালুর বিষয়েই বিবেচনা করছে। দ্বিতীয় ধাপে গণপরিবহন সীমিত আকারে চালুর বিবেচনা করছে। এছাড়া শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ৭০-৭৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালুর কথাও ভাবা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহন চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। এতে অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন, যেসব এলাকায় করোনার প্রাদুর্ভাব কম সেখানে সীমিত পর্যায়ে বাসসহ অন্য পরিবহন চালু করা যেতে পারে। তবে আন্তঃজেলায় বাস চালুর এখনও সময় আসেনি। তারপর পরিস্থিতির উন্নতি হলে আস্তে আস্তে আন্তঃজেলা বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে হবে। এর আগে সারাদেশে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকেই। বৈঠকে কোন কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।
×