ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমের চোখে

‘সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার’

প্রকাশিত: ০০:০৬, ১ মে ২০২০

‘সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার’

মিথুন আশরাফ ॥ ‘সে (সাকিব) বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার এবং পারফর্মার আমার কাছে মনে হয়। কাউকে অসম্মান করে বলছি না। তবে আমার চোখে সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার।’ -কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। শুধু সাকিবকে বাংলাদেশের সর্বকালে সেরা ক্রিকেটার বলেই থামেননি। তিনি দেশের সব ক্রিকেটারের কথাও ভেবেছেন। ক্রিকেটারদের কথা ভেবে করোনার প্রভাব যেতেই ঘরোয়া ক্রিকেট চান বাংলাদেশ ওপেনার। সাকিবকে প্রশংসায় ভাসান তামিম। তিনি জানান, ‘সাকিবের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় যে কেউ নিজের দলে চাইবে। যে কোন অধিনায়ক তাকে দলে রাখতে চাইবে। এখনও অনেক সময় বাকি আছে। অক্টোবর এখনও দূরে আছে। সাকিবের নিষেধাজ্ঞা যখন শেষ হয়ে আসবে আমি নিশ্চিত তখন এমন কোন অধিনায়ক থাকবে না যে বলবে তাকে আমার দরকার নেই।’ সাকিব এখন এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ আছেন। ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়েও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানানোও অপরাধ করেছেন সাকিব। তাতেই এ শাস্তি হয়েছে। তবে ৬ মাস এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আর আছে ৬ মাস। এ বছর অক্টোবরের ২৯ তারিখে সাকিবের এক বছরের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে। এরপর ক্রিকেটে ফিরবেন সাকিব। সেই আশাতেই আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। সাকিব দলে ফিরতে এখনও ছয় মাস বাকি। এখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে। তা নিয়েই সবাই আতঙ্কে আছেন। ঘরে থাকছেন। সুস্থ থাকছেন। তবে করোনার প্রভাব দেশের ক্রিকেটারদের ওপর ভালভাবেই পড়েছে। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ এক রাউন্ড হয়ে স্থগিত হয়েছে। এ লীগের উপর বেশিরভাগ ক্রিকেটারের আয় রোজগার নির্ভর করে। করোনার প্রভাব যেতেই লীগ শুরু হওয়া দরকার। তাই মনে করেন তামিম। বলেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো যে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট হওয়াটা অনেক দরকার। কারণ, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে ঘরোয়া ক্রিকেট হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই ঘরোয়া ক্রিকেট।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের ৭০-৮০ শতাংশ ক্রিকেটারদের আয় এই প্রিমিয়ার লীগের মাধ্যমে হয়। এই প্রিমিয়ার লীগটি আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ক্রিকেটের জন্যেও।’ ঘরবন্দী অবস্থায় এখন দিন কিভাবে কাটছে, তা নিয়েও জানান তামিম। বলেছেন, ‘সাধারণত আমার দিন শুরু হতো ঘুম থেকে উঠে এক ঘণ্টা শরীর চর্চা করে। রোজার মধ্যে একটু অন্যরকম অবশ্য। রানিং করতাম, জিমের টুকটাক কিছু নিয়ে কাজ করতাম, বাসায় যা আছে তা দিয়েই করে ফেলার চেষ্টা করি। ভাগ্য ভাল যে ট্রেডমিল আছে, ফলে আমার দৌড়ানোটা হয়ে যায়। চেয়ারে বসে থাকি, বাচ্চাদের সময় দেই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘নেটফ্লিক্স আর এ্যামাজন প্রাইমের ওপরেই বেঁচে আছি। রোজার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধুলা করি, সিনেমা দেখি। আজান দেয়ার ঘণ্টাখানেক আগে ট্রেনিং শুরু করি। এর মধ্যে রানিং বা জিমের যা কিছু আছে করে, ইফতার করতে বসে যাই। যেন কষ্ট বেশি না হয়।’ করোনাভাইরাস প্রভাব বিস্তারের শুরু থেকেই দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তামিম। বেতনের অর্ধেক করোনা তহবিলে দান করেছেন। একই সঙ্গে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া এ্যাথলেটদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে ক্রিকেটার নাজমুল ইসলাম অপুর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ হওয়া থেকে সামাজিক সংগঠন ফুট স্টেপকে বড় অঙ্কের অনুদান দিয়েছেন তামিম। এছাড়া টিম বয় এবং ম্যাসাজম্যানদের সাহায্যার্থে সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, রিয়াদদের সঙ্গে ১ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক সঙ্কটে পড়া দেশের ৯১ ক্রীড়াবিদেরও পাশে দাঁড়িয়েছেন তামিম। ইতোমধ্যে তাদের কাছে এককালীন আর্থিক সহায়তা পাঠিয়ে দিয়েছেন এই ওপেনার। এছাড়া একজন বাংলাদেশী নামে একজন স্বেচ্ছাসেবী নারীকেও সহায়তা করেছেন এই ওপেনার। এসবই ঘরে বসে করছেন তামিম। একটি ইংরেজী দৈনিকের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসে তামিম বলেন, সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে কোন সঙ্কট থাকবে না। তামিম মনে করেন, ‘আসলে এমন অবস্থা যে হবে, তা তো আমরা প্রথম দিকে কেউই বুঝতে পারিনি। এমন এক অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, এখন আর খেলার কথা মাথায়ই আসছে না। সবার জীবনটা আগে। জীবন নিয়ে আগে চিন্তা ভাবনা সবার। আমার মা, সন্তান, ভাই, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজনদের কথা সবার আগে মনে হয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমার কাছে এখন আমার নিজ পরিবারটাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সবার আগে চাই তারা যেন সুস্থ ও নিরাপদ থাকেন। অবশ্য তামিমের ক্যারিয়ারে যে তিন বোলার ভুগিয়েছেন, তাদের কথাও বলেন। তিনি জানান, ‘প্রথমত সাঈদ আজমলের (পাকিস্তানী অফস্পিনার) কথা বলব। সে ভয়ঙ্কর একজন বোলার। আমার কোন ধারণা থাকত না সে কোন সময় কী বল করত। এরপরে মরনে মরকেলের (দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার) কথা বলতে হবে। সে অনেক কঠিন বোলার ছিল। কারণ সে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে আসলেই দারুণ বোলিং করত। বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে সে অনেক কঠিন ছিল বাঁহাতিদের বিরুদ্ধে। আরেকজনের কথা বলব, রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সে এখনও খেলছে। আমি তার বিরুদ্ধে খেলতে কখনও কখনও দ্বিধায় পড়ে যায়। এই বোলারের বিরুদ্ধে খেলা আমার কাছে মনে হয়েছে কঠিন।’
×