ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কিত ১১৫ প্রতিষ্ঠান বাদ

এমপিও কোড পেল ৯৩৭ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ৩০ এপ্রিল ২০২০

এমপিও কোড পেল ৯৩৭ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার এমপিও কোড পেল ৯৩৭ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা। নতুন করে এমপিওভুক্তির ছয় মাসেরও বেশি সময় পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিও কোড দেয়া হলো। যার মধ্যে ৩২৪টি দাখিল, ১১৯টি আলিম, ৩৪টি ফাযিল এবং ২২টি কামিল মাদ্রাসা, ৬০টি ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার, ২১৮টি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) এবং ১৬০টি এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদিকে অনিয়ম হয়নি-এমন অবস্থান থেকে অবশেষে সরে এলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমপিওর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলো অযোগ্য, যুদ্ধাপরাধীসহ বিতর্কিতদের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। আগে বুধবার এক হাজার ৬৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের অনুক‚লে এমপিও কোড দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকেই বেতন-ভাতা পাবেন। এ নিয়ে নতুন এমপিও পাওয়ায় দুই হাজার ৫৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দুই দফায় এমপিও কোড দেয়া হলো। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিভুক্ত করেছিল সরকার। ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারী বেতনের অংশ দিতে এমপিও কোড দেয়া হচ্ছে এখন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুক‚লে এমপিও কোড বরাদ্দের আদেশে বলা হয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে বেতন-ভাতা পাবেন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী চ‚ড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে এমপিও কোড বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। কোড বরাদ্দ দিয়ে বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত ও যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি দেয়ার ব্যবস্থা নিতে আদেশে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত হওয়া কোন প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা হবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, এমপিও কোড পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে আবেদন করতে হবে। এরপর যাচাই-বাছাই করে তাদের এমপিও কার্যকর করে সরকারী বেতন-ভাতা পাঠানো হবে। এদিকে দ্বিতীয় তালিকার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত এই তালিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েই। অযোগ্য নাম গোত্রহীন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের নামে প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখানেই শেষ নয়, অযোগ্য হওয়া সত্তে¡ও ‘শহীদ জিয়া’ নামে অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিয়ে সংসদ সমস্যদের তোপের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রণালয়। সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়া অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। সংসদ সদস্যরা এসব ঘটনা নিয়ে জাতীয় সংসদ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ তোলেন। এরপর তালিকা সংশোধনে একাধিক কমিটি গঠন করা হলেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এবার সরকারী নীতিমালা লঙ্ঘন করে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হওয়া মোট ১১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত দুদিনের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে গত বছর অক্টোবর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া এমপিও তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানকে। অক্টোবর মাসের ঘোষণায় মোট দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হলেও চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে দুই হাজার ৬৫০টি প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে এক হাজার ৬৩৩টি স্কুল-কলেজ ও ৯৮২টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা রয়েছে। ১১৫ প্রতিষ্ঠান তথ্য গোপন করে, ভুয়া তথ্য দিয়ে, অনিয়ম করে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ব্যানবেইসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে এমপিওভুক্তির তালিকায় ঠাঁই নিয়েছিলেন। দৈনিক জনকণ্ঠসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও সংসদ সদস্যদের ডিও লেটারের ভিত্তিতে ফের যাচাই-বাছাই করে এখন পর্যন্ত ১১৫টি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিতে হয়েছে মন্ত্রণালয়কেই। শতভাগ ঈদ বোনাস চান এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ॥ আসন্ন ঈদ-উল ফিতরের আগে ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাসের পরিবর্তে সরকারী নিয়মে শতভাগ ঈদ বোনাাস প্রদানসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দাবি জানানো হয়। শিক্ষকদের দাবি, ২০০৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ ঈদ বোনাস প্রদান করা হলেও দীর্ঘ ১৬ বছরে এর কোন পরিবর্তন নেই। তারা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা দেয়া হয়। বর্তমানে শিক্ষকরা করোনার প্রভাবে গৃহবন্দী। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মারাত্মক অর্থকষ্টে দিনযাপন করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্থকষ্ট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। শিক্ষকরা আরও জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা চরম পর্যায়ে। তারা অর্থের অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ অবস্থায় শতভাগ ঈদ বোনাস প্রদানসহ তাদের সমস্যা লাঘবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
×