ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শত মাইল দূরে কেজি ৩-৫ টাকা অথচ ঢাকায় ৬০ টাকা সাপ্লাই চেন ল-ভ- প্রতিকারের জন্য কাজ করছে সরকার হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ বাজার ত্রাণে থাকছে আলু পেঁয়াজ সবজি

সবজি নিয়ে বেহাল কৃষক ॥ বাম্পার ফলনে করোনার ধাক্কা

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১ মে ২০২০

সবজি নিয়ে বেহাল কৃষক ॥ বাম্পার ফলনে করোনার ধাক্কা

ওয়াজেদ হীরা ॥ রাজধানী থেকে শতমাইল দূরত্বের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে ৩-৫ টাকা কেজি আর ঢাকায় সেটি হয়ে যাচ্ছে ৪০-৬০ বা কোনটি আরও বেশি। করোনার সময়ে দেশের উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা ভাল নেই। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারা, লোকসান আর ঋণের কারণে কাঁদছে কৃষকরা। উৎপাদিত পণ্য তাই এখন কৃষকের বোঝা! প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা মূল্য না পেলেও রাজধানীসহ বড় শহরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনে হাঁসফাঁস জনজীবন। এতে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনেক স্থানে নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ। করোনার কারণে দেশের সবজি তথা কাঁচা পণ্যে সাপ্লাই চেনে ধাক্কা লেগেছে। আর সে ধাক্কায় প্রান্তিক কৃষক হারাচ্ছে মূলধন, আর শহুরের মানুষ খোয়াচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, উৎপাদন পর্যায় থেকে ভোক্তা সর্বত্রই সরবরাহে ছেদ পড়েছে। যেখানে উৎপাদন হচ্ছে সেখানে মূল্যহীন আর যেখানে দরকার সেখানে দাম আকাশচুম্বি। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন কৃষকের পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগও। ঘাটতি এলাকায় উদ্বৃত্ত পণ্য পৌঁছাতে পরিবহনের সঙ্গেও আলোচনার মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অনলাইন মার্কেটিং করার কথাও বলছেন উর্ধতন কর্মকর্তারা। কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেন, কৃষিপণ্য পরিবহন ও সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে সরকার ছাড় দিচ্ছে অর্থাৎ কোন বাধা নিষেধ নেই। আমি হাওড়ের ধানকাটা পরিদর্শনে এসে দেখেছি ট্রাক চলছে অনেক। আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি পণ্য পরিবহন গাড়ি চলছে আরও চলবে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। সারাদেশেই বিভিন্ন সবজি উৎপন্ন হয়। ময়মনসিংহের উপজেলা ত্রিশাল সে রকম একটি। যদিও খেতের মূল্য বেশিরভাগই ৫-১০ টাকা কেজির মধ্যে। অথচ সেই সবজি শশা, টমেটো, উচ্ছে-করলা, বেগুন ঢাকায় কোনটিই ৪০ টাকার নিচে নয়। একাধিক জায়গায় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে করোনার এই সময়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা। তারা আক্ষেপ করে বলেছেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সবজি বা অন্যান্য ফসল আবাদ করছেন অথচ সেই উৎপাদিত পণ্য এখন বিক্রি করতে পারছেন না। কৃষক আলিমুদ্দিন তার বেগুন বিক্রি করেছেন ৮ টাকা কেজি যা ঢাকায় ৮০ টাকার ওপরে। বেসরকারী চাকরিজীবী এনামুল করিম জুয়েল বলেন, আমরা শহরে থাকাটা কখনও অভিশাপ মনে হয়। বেশি দামে সব কিনছি অথচ যারা এসব উৎপাদন করে তারাও যদি দামটা পেত ভাল লাগত। তিনি আরও বলেন, করোনায় উর্ধগতির বাজার মূল্যের সঙ্গে হিমশিম খেতে গিয়ে জমানো টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কৃষি পণ্য পরিবহনে সমস্যা না থাকলেও নানা শঙ্কা আর ভয়ে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি চালাতে চায় না। সেই সঙ্গে যে সকল পণ্য এই সময়ে পরিবহনে আনা হচ্ছে সেগুলোতেও বেড়েছে ভাড়া। ফলে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য আনতে আগ্রহী নয় পাইকাররাও। এতে বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত নানা সবজি পচে নষ্ট হচ্ছে। পণ্য উৎপাদিত এলাকায় কোথাও কোথাও খেত থেকে ভ্যানে করে বাজারে আনার টাকাও উঠাতে পারছে না কৃষক ফলে রাগ করে গরুকে খাওয়াচ্ছেন, কোথাও ফেলে দিচ্ছেন। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষতি হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্যোগকালে যে ব্যবস্থাপনার দরকার, তা নেই। এটা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সবজি কাঁচা পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখার। তবে দেশে উৎপাদিত পণ্যের হিসাবে তা সামান্যই। বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ভোলা জেলাসমূহকে সবজির জন্য উদ্বৃত্ত জেলা। এসব জেলায় সবজিতেই সারাদেশে চলে যায়। অন্য সময় ট্রাকে ট্রাকে সবজি আনা নেয়া হলেও এখন হচ্ছে হাতে গোনা। অনেক ক্ষেত্রে সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। এতে সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় বাধা খেত থেকে সবজি আনা, পাইকারদের আগ্রহ কম, ড্রাইভারদের অনাগ্রহ সেই সঙ্গে পথের চেকিংয়ের নামে ঝামেলা তো আছেই। আর তার সার্বিক প্রভাবে মার খাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, কৃষক দাম পাচ্ছে না এটা ঠিক, তবে আমরা নানাভাবে কাজও করছি। কৃষকের বাজারের মতো জেলায় জেলায় করা যায় কিনা বড় পরিসরে করা যায় কিনা সেটা দেখতেছি। আমরা অনলাইন মার্কেটিং নিয়ে চেষ্টা করছি। যাতে একজন কৃষক সেখানে বিক্রি করতে পারবে। নিরাপদ সবজির জন্য অনলাইন মার্কেট করতে করোনার আগেই উদ্যোগ নিয়েছিলাম এখন সবমিলিয়েই করতে চাচ্ছি। আমরা বিআরটিসির মাধ্যমে পরিবহন সম্পন্ন করা যায় কিনা সেটি নিয়েও আমরা ভাবছি। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ ও সরবরাহে করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে শাকসবজির বাজারজাতকরণ ও কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, শাকসবজি ও পচনশীল কৃষিপণ্যের চলাচল নির্বিঘœ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালেয়র প্রদত্ত ত্রাণসামগ্রীতে আলু, সবজি, পেঁয়াজ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কৃষি বিপণন অধিদফতর কৃষিপণ্যের ভ্রাম্যমাণ বাজার পরিচালনা শুরু করেছে। পাশাপাশি, লকডাউন এলাকার উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য ঘাটতি এলাকায় প্রেরণের ক্ষেত্রে ট্রাক চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ফলে শাকসবজির বাজারজাতকরণ কিছুটা সহজতর হয়েছে বলেও জানান। সভায় বিশেষজ্ঞরা কিছু সুপারিশ দেন। সেই সুপারিশ নিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সভার সুপারিশ অনুয়ায়ী বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহার, বিদেশে রফতানির জন্য কার্গো ভাড়া, দেশের সুপারশপ খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানো এবং সমন্বয়ের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিয়ে কাজ হচ্ছে উল্লেখ করে কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপপরিচালক শাহানাজ বেগম নীনা বলেন, আমরা বিআরটিসির পরিবহন ব্যবহার করার উদ্যোগ নিচ্ছি। এছাড়াও আমাদের কৃষকের বাজারকে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ আছে। যদিও আমাদের জেলার বাইরে জনবল কম তবে কৃষি সম্প্রসারণ থেকে উপজেলা কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে কৃষকদের পণ্য সরবরাহের বিষয়টি। এছাড়াও রাজধানীতে যারা আমাদের মার্কেট ভিজিট যারা করে তারা বলছে, ঢাকার বাজারে পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক আছে। আমরা খরচ হিসেবে করে পণ্যের মূল্য ঠিক করে দেয়ার বিষয়েও কাজ করছি যাতে কৃষক উপকৃত হয়। নাটোরের চাষী আলাউদ্দীন। কৃষিই তার পরিবারের উপার্জনের মাধ্যম। গ্রীষ্মের সিজনেও পটোল, বেগুন, করলা ও ঢেঁড়স চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার ফলনও বাম্পার! সবুজ সবজি খেতে দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলেন আলাউদ্দীন। মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবজির বাম্পার ফলনই তার কাল হয়েছে! পাচ্ছেন না পাইকার ও ব্যাপারী ফলে দাম তো দূরের কথা, খেতেই পচছে তার সবজি। বেগুন, পটোল কেজিতে দাম পাচ্ছেন ৫ থেকে ১০ টাকা। এসব পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন খরচেই টাকা শেষ! নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার শস্য ভা-ার খ্যাত আলীরটেক-বক্তাবলী ইউনিয়নের অনেক কৃষক তার শস্য গর্তে ফেলে দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় কৃষকরা বলেছেন, যে বেগুন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে মহল্লায় মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৭০ টাকা বা আরও বেশি। সে বেগুন আমরা বিক্রি করছি ৫ থেকে ৮ টাকায়। তাও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। আগে প্রতিদিন তিন শ’ থেকে সাড়ে তিন শ’ বেপারি নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে বক্তাবলী আসতেন সবজি কিনতে। ফেরি বন্ধ ও চাহিদা কম থাকায় এখন পনেরো-বিশজন বেপারি আসছেন। বিভিন্ন জায়গার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেতের সবজি পরিপক্ব হয়েছে। বিক্রি করার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। বেগুন, করলা পেকে খেতেই পচে যাচ্ছে, পাইকারও পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচাবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় এই মুহূর্তে কাঁচা সবজির ব্যবসা করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এগুলো পচনশীল দ্রব্য। পণ্য পরিবহন সরকারী ছুটির বাইরে থাকলেও গ্রাম থেকে সবজি নিয়ে শহরের যেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এদিকে, করোনার এ সময়টাতে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকায় পচনশীল দ্রব্য নিয়ে ব্যবসা করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরাও। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে যারা কাজ করতেন যেমন- পাইকার, ব্যাপারী তারা এই মুহূর্তে কৃষকদের কাজ থেকে পণ্য কিনছেন না। এজন্য সরবরাহ চেইনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেশে বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য নিতে পুলিশের জেরার মুখে পড়ছেন, চাঁদা নেয়া, পণ্য আটকে রাখাসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সে জন্য মধ্যস্বত্বভোগীরা এখন পচনশীল পণ্য নিয়ে ব্যবসা করাটা ঝুঁকি মনে করছেন। এর ফলে সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে শহরের মানুষকে বাড়তি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে পণ্য পরিবহন ঠিক রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ। কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের মতে, একদিকে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে এই সঙ্কটেও বাড়তি দাম দিয়ে ক্রেতাকে পণ্য কিনতে হচ্ছে, এটা মেনে নেয়া যায় না। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুরো তত্ত্বাবধানে পণ্যের ট্রাক সরবরাহের ব্যবস্থা করা উচিত। জনকণ্ঠের পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকিতে পড়েছে পঞ্চগড়ের হাজারও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষী। লকডাউনের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্য জেলার পাইকাররা আসতে না পারায় বিক্রি হচ্ছে না সবজি। স্থানীয়ভাবে চাহিদা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না চাষীদের উৎপাদিত সবজি। মনের দুঃখে অনেক চাষী খেতের সবজি উপড়ে ফেলছে। তবে, জেলা প্রশাসন স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় চাষীদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় করে নিয়ে সরকারী ত্রাণের সঙ্গে সবজি বিতরণ করছে। এদিকে, বগুড়া ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন সবজি খেতেই নষ্ট হচ্ছে। সবজি পেকে গেলেও খেত থেকে স্থানীয় বাজার পর্যন্ত ভাড়াও উঠানো যায় না তাই কৃষক তা তুলছেন না। বদলগাছির এক কৃষক বলেন, একটি বড় ফুলকপি বা বাঁধাকপির দাম মাত্র ১ টাকা। টমেটোর কেজি ৫ টাকা, খিরা ৩ টাকা, এক কেজি আলু ৮ টাকা। তাই কৃষকের সবজি তোলার প্রতি কোন আগ্রহ নেই। কৃষিপণ্য বিপণনে আসছে জাতীয় অনলাইন প্লাটফর্ম ॥ এদিকে, কৃষিপণ্য যথাযথভাবে বিপণনের মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে জাতীয়ভাবে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টদের যুক্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এ প্লাটফর্ম তৈরির কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় কৃষকরা বঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, আমরা অনলাইন মার্কেটিং সিসটেম করতে চাই। এর মাধ্যমে পাইকার, ভোক্তা, উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারীদের মধ্যে একটা সমন্বয় হবে, উৎপাদিত পণ্যটা যাতে নির্বিঘেœ ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। উৎপাদনকারী যাতে ন্যায্য মূল্য পায়। যার মাধ্যমে ক্রেতা অর্ডার দেবেন, কিছু রেজিস্টার্ড ট্রাক থাকবে। এর মাধ্যমে ট্রাকগুলো বিভিন্ন স্থানে চাহিদা অনুযায়ী কৃষিপণ্য পৌঁছে দেবে। খাবার পৌঁছে দেয়ার মতো মানুষের বাড়িতে কৃষিপণ্য পৌঁছে দিতে পারে এমন প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠতে হবে। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে কাজ হচ্ছে বলেও জানা গেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একশপ নামে অনলাইন বাজার ব্যবস্থা আছে। এর সঙ্গে অন্যদের যুক্ত করে কৃষি বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে কোন একটি পণ্য সস্তা, সেটা জানা হয়ে গেল, কোথায় লাগবে সেখানে চলে যাবে। এজন্য এই প্লাটফর্মটি ব্যবহৃত হবে। কৃষকের বাজার চালু আছে রাজধানীতে ॥ এদিকে, করোনার এই সময়েও রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে নিরাপদ সবজির হাট ‘কৃষকের বাজার’ চালু আছে। তবে সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে। আগে আশপাশ থেকে পাঁচ ছয়টি উপজেলার পণ্য আসলেও এখন আসছে দু’তিনটি উপজেলার পণ্য। বিক্রিও কমেছে আগের চেয়ে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপপিরচালক (প্ল্যানিং) শাহানাজ বেগম নীনা বলেন, আমাদের করোনার আগে দেড় লাখ বা আরও বেশি বিক্রি হতো। এখন সেটি ৪০ হাজার হচ্ছে। গাড়িও কম আসছে উল্লেখ করে বলেন, মানুষের চাহিদাও একটু কম তবে আমাদের বাজার বন্ধ নেই। কৃষকও পণ্যের মূল্য পাক আবার বাজার থেকে ক্রেতাও যেন সঠিক দামেই পণ্য পায় ভারসাম্য বজায় থাকে সেটাই চায় সংশ্লিষ্টরা।
×